অতিথি পাখিদের কল-কাকলিতে মুখরিত বরগুনার বিভিন্ন চর

কল-কাকলিতে এখন মুখরিত  আশারচর ও লালদিয়ার চর। নামের সাথে চর শব্দটি যুক্ত থাকলেও মূলত এ দুটি সাগর পাড়ের সংরক্ষিত বনাঞ্চল। ওখানে গেলে একদিকে সীমাহীন সাগরের মোহনীয় গর্জন শোনা যাবে, অন্যদিকে চোখে পড়বে নানা রকম প্রজাতির বৃক্ষসমৃদ্ধ চিরসবুজ বনভূমি।আর এসব ঘিরে অগনিত নানা জাতের পাখিদের ঝাঁক বেঁধে উড়ে বেড়ানো। জলের ভেতর পাখিদের খুনসুটি, ডুব দেয়া, দলবেঁধে সাঁতার কাটা, বিরামহীন মাছ শিকারে বেলা কেটে যাচ্ছে। এরা মনোরঞ্জন করে চলেছে বরগুনার এ পর্যটন স্পটগুলোতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের।পাথরঘাটা উপজেলার লালদিয়ারচর ও তালতলী উপজেলার আশারচর এলাকায় রয়েছে পানকৌড়ি, গিরি হাঁস, পিয়াং হাঁস, পাতি সড়ালি, রাজ সড়ালিসহ প্রভৃতি জাতের নানা আকার, রংয়ের পাখ-পাখালি। প্রতিবছরই শীতের শুরুতে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসব পাখিরা দলবেঁধে ছুটে আসে এ চরাঞ্চলে। পুরো শীত মৌসুমজুড়ে এখানে অবস্থান করে এবং এক সময় তারা আবারও পাড়ি জমায় ভিনদেশে।দুই চরেই রয়েছে দুটি অভয়ারণ্য। পাথরঘাটার লালদিয়ার চরে বিশাল হরিণঘাটা বনভূমি। আশার চরে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট টেংরাগিড়ি সংরক্ষিত বনাঞ্চল।

বরগুনার লালদিয়ার চরে ঘুরতে আসা পর্যটক ফেরদৌস খান, মহিউদ্দিন অপু, জাহিদ হাওলাদাররা জানান, ‘একই সাথে সাগর ও বনের সৌন্দর্য দেখতে হলে বরগুনার হরিনঘাটা ও টেংরাগিড়ি বনের কোনো বিকল্প নেই। তাই প্রতিবছর প্রকৃতির টানে শীতের মৌসুমে এখানে আসি। বন ও বৃক্ষের পাশাপাশি আমরা দূর দেশ থেকে আসা অতিথি পাখি দেখতে পাই যা আমাদের মুগ্ধ করে।’স্থানীয় অধিবাসীরা জানান, শীতে এখানে যেমন অতিথি পাখিদের সাথে সাথে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ে তেমনি এক শ্রেণির চোরা পাখি শিকারীও আসে। বনবিভাগ কার্যালয় থেকে চরের দূরত্ব একটু বেশি হওয়ায় চোরা শিকারীরা ধরা পড়ছে না।সুন্দরবন জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ কমিটির স্থানীয় সভাপতি সোহেল হাফিজ ও বরগুনার সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতি সোহেলী পারভিন ছবি বলেন, ‘শিকারীদের হাত থেকে অতিথি পাখিদের বাঁচাতে হলে দর্শনার্থীদের জন্য আলাদা পায়ে হাঁটা পথ এবং সেই সাথে এই চর দুটিতে আলাদাভাবে বনবিভাগের ক্যাম্প স্থাপন জরুরি।’পাথরঘাটার উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রিপন জানান, প্রধানমন্ত্রী এই চর দুটিকে পর্যটন শিল্পের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। যার ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে হরিণঘাটা সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বেশকিছু অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হয়েছে। পাখি শিকারীদের মোকাবেলায় স্থানীয় প্রশাসন ও বনবিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পাখিদের নিরাপত্তার বিষয়ে টেংরাগিরি সংরক্ষিত বনের বিট কর্মকর্তা জাহিদ প্রামাণিক জানান, পাখি ও বন দেখতে পর্যটকদের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব আমাদের। কেউ ঘুরতে এসে যদি পাখি শিকার করে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment