অধিনায়কের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ব্রাদার্সের সহজ জয়

অধিনায়কের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ব্রাদার্সের সহজ জয়

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের (ডিপিএল) দ্বিতীয় রাউন্ডের খেলায় ব্রাদার্স ইউনিয়নের কাছে পাত্তাই পায়নি লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ।

বোলিংয়ে অলরআউন্ডার আলাউদ্দিন বাবুর হ্যাটট্রিকের পর ব্যাটিংয়ে অধিনায়ক মিজানুর রহমানের পারফরম্যান্সে ৮ উইকেটে সহজ জয় পেয়েছে ব্রাদার্স।

দুই দলের প্রথম রাউন্ডের খেলা বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হওয়ায় এই ম্যাচটি দুই পক্ষের জন্যই বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আর সেই ম্যাচে আসরের প্রথম জয় পেল ব্রাদার্স।

মিরপুর শেরেবাংলায় বৃহস্পতিবার টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন রূপগঞ্জের অধিনায়ক নাঈম ইসলাম।

কিন্তু দলের তরুণদের ব্যর্থতায় ব্রাদার্সকে বড় টার্গেট ছুড়ে দিতে পারেনি তার দল।

এজন্য অবশ্য কৃতিত্বটি ব্রাদার্সের পেস বোলিং অলরাউন্ডার আলাউদ্দিন বাবুর।

ডিপিএলে এবারের আসরের প্রথম হ্যাটট্রিক করার গৌরব অর্জন করলেন তিনি। ৩.১ ওভারে ২১ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়েছেন বাবু।

তার এমন বোলিং পারফরম্যান্সে ১৯.১ ওভারে রূপগঞ্জ গুটিয়ে যায় ১১১ রানে। দলের পক্ষে অধিনায়ক নাঈম ইসলাম ২৮ বলে ৩৮ ও সাব্বির রহমান ১৮ বলে ২৩ রান করেন।

এরপর সানজামুল ইসলাম ১৩ ও জাকির আলির ১২ রান ছাড়া আর কেউ দুই অংকের ঘরে পৌঁছুতে পারেননি।

১১২ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে উদ্বোধনী জুটিতে দলকে ৫৩ রান এনে দেন ব্রাদার্সের অধিনায়ক মিজানুর রহমান ও জুনায়েদ সিদ্দিকী। সানজামুলের বলে সাব্বিরের হাতে ক্যাচ তুলে দেওয়ার আগে ১৯ বলে ২১ রান করে সাজঘরে ফেরেন জুনায়েদ।

এরপর জাহিদউজ্জামানকে সঙ্গী করে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন মিজানুর।

দ্রুত গতিতে রান তুলতে থাকেন ব্রাদার্সের এই ব্যাটসম্যান।

১৫তম ওভারের ওভারে শহীদের তৃতীয় বলে ক্যাচ তুলে দেন মিজানুর। তার আগে মিজানুরের ব্যাট থেকে ৮টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৫২ বলে ৭৪ রান।

মিজানুরকে আউট করে উইকেট উদযাপন সেভাবে করতে পারেনি রুপগঞ্জ। কারণ ততক্ষণে জয়ের বন্দরে প্রায় পৌঁছিয়ে দিয়ে গেছেন মিজানুর। তার আউটের পর ব্রাদার্সকে করতে হতো ২৭ বলে মাত্র ৬ রান। হাতে ছিল ৮ উইকেট।

কোনো বিপদ না ঘটিয়ে হেসেখেলে এই  ৬ রান পূরণ করেন মাইশুকুর রহমান ও জাহিদউজ্জামান। শেষপর্যন্ত ১৫.৩ ওভারে মাত্র ২ উইকেট হারিয়েই জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ব্রাদার্স।

৬ বলে ৬ রানে অপরাজিত থাকেন মাইশুকুর। জাহিদউজ্জামান করেন ১৬ বলে ১১ রান।

এর আগে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের প্রথম ওভারেই উইকেট হারায় রুপগঞ্জ।

দারুণ এক ইনসুইঙ্গারে আজমির আহমেদকে বোকা বানান ব্রাদার্সের পেস বোলিং অলরাউন্ডার আলাউদ্দিন বাবু। বলটির গতিবিধির কিছুই বুঝে উঠতে পারেননি রুপগঞ্জের এই ওপেনার।

প্রথম স্লিপে দাঁড়ানো জুনায়েদ সিদ্দিকীর হাতে তালুবন্দী হয়ে সাজঘরে ফেরেন।

একের পর এক ব্যাটসম্যান ধরাশায়ী হলেও একপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন অধিনায়ক নাঈম ইসলাম।

২৮ বলে চার বাউন্ডারি ও এক ছক্কার মারে ৩৮ রান করেছেন তিনি, যা দলের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান এসেছে জাতীয় দলের এক সময়ের হার্ডহিটার সাব্বির রহমান রুম্মনের ব্যাট থেকে।

একটি করে বাউন্ডারি ও ছক্কায় ১৮ বলে ২৩ রানের কেমিও ইনিংস খেলেছেন তিনি।

ওই একটি ছক্কা মারার পরের বলেই বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন সাব্বির।

ব্যাট হাতে নামার পর সাব্বির যেভাবে খেলছিলেন, ধারণা করা হচ্ছিল আজ বড় স্কোর করবেন তিনি।

তবে সে ধারণা আর বাস্তবে রূপ নেয়নি।

৭৪ রানে ৫ উইকেট হারানোর মতো পরিস্থিতিতেও দারুণ খেলে যাচ্ছিলেন সাব্বির।

১৬তম ওভারের শেষ বলে ১০ রান করে জাকির আলি আউট হয়ে গেলে মেজাজ হারান সাব্বির।

পরের ওভারে সাকলাইন সজিবের দ্বিতীয় বলে সোহাগ গাজী সিঙ্গেল নিলে স্ট্রাইকে আসেন সাব্বির।

ব্রাদার্সের এই বাঁহাতি স্পিনারের তৃতীয় বলটি ডিপ স্কয়ার লেগের ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকান তিনি।

চতুর্থ বলটিও সীমানার বাইরে পাঠাতে মিড উইকেটের ওপর দিয়ে তুলে মারেন। অনেকটা সফলও হন। কিন্তু টাইমিংটা ভালো না হওয়ায় একদম সীমানার কাছে আবদুল কাইয়ুমের হাতে তালুবন্দী হন।

২৮ রানেই সমাপ্তি ঘটে সাব্বিরের ইনিংসের। সাব্বিরের আউটের পর বাকি ব্যাটসম্যানরা আর দাঁড়াতেই পারেনি।

ডেথ ওভারে দুর্দান্ত বল করেন আলাউদ্দিন বাবু।

সোহাগ গাজীকে ২ ও মোক্তার আলিকে ৬ রানে সাজঘরে ফেরান তিনি। ওভারের পঞ্চম বলে নাঈম ইসলাম জুনিয়রের হাতে ধরা পড়েন মুক্তার আলি। পরের বলে জাহিদুজ্জামানের হাতে ক্যাচ দেন সোহাগ গাজী।

ওভারটি শেষ হয়ে যায় বাবুর।

১৯তম ওভারে দুই ব্যাটসম্যানকে জায়গার পরিবর্তনের সুযোগই দেননি বোলার মানিক খান।

২০তম ওভারের প্রথম বলেই  নাবিল সামাদকে সাজঘরে ফিরিয়ে হ্রাটট্রিক পূরণ করেন বাবু।

স্লোয়ার বাউন্সার দিয়ে ব্যাটসম্যানকে হিট করায় প্রলুব্ধ করেন বাবু। লোভের ফাঁদে পা দিয়ে সজোরে হাঁকান নাবিল।

কিন্তু ব্যাটে-বলে ভালোভাবে না হওয়ায় শর্ট পয়েন্টের আকাশে উড়ে যায়। সহজ ক্যাচ লুফে নেন মিজানুর।

অর্থাৎ দুই টেলএন্ডার মোহাম্মদ শহিদ ও নাবিল সামাদ রানের খাতাই খুলতে পারেননি।

এই ম্যাচের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের পঞ্চম বোলার হিসেবে কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে হ্যাটট্রিক করলেন এ ডানহাতি পেস বোলিং অলরাউন্ডার।

৩.১ ওভারে ২১ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়েছেন বাবু। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এটিই তার সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড।

সংক্ষিপ্ত স্কোর 

টস : লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ

লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ : ১১১/১০ (১৯.১ ওভার)
নাঈম ৩৮, সাব্বির ২৩
আলাউদ্দিন ২১/৪, সুজন ১৩/২, সজীব ২২/২

ব্রাদার্স ইউনিয়ন : ১১২/২ (১৫.৩ ওভার)
মিজানুর ৭৪, জুনায়েদ ২১
শহীদ ২৪/১, সানজামুল ২৬/১

ফল : ব্রাদার্স ইউনিয়ন ৮ উইকেটে জয়ী।

আপনি আরও পড়তে পারেন