চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন বাজারে স্বাদ, পুষ্টিগুণ ও পরিপক্ব হয়ে নেমেছে আম। চলছে আমের ভরা মৌসুম। বিক্রেতাদের হাঁকডাকে এ সময় সরগরম থাকে আমের রাজধানী।
করোনার কারণে আমের বাজারে ক্রেতাদের আনাগোনা কম থাকায় উদ্বিগ্ন ছিলেন ব্যবসায়ীরা। তবে অনলাইন ও মোবাইলের মাধ্যমে বেচাকেনা বেড়ে যাওয়ায় আশার সঞ্চার জেগেছে ব্যবসায়ীদের মাঝে।
দেশসেরা খিরসাপাত, ল্যাংড়া, লক্ষণা ও নানাজাতের গুটিআম এখন পৌঁছে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। আর আমের ন্যায্য দাম এবং বাজারজাতকরণে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে কৃষি বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসন।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৫টি উপজেলার ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে। আর এসব বাগানে ২৭ লাখ গাছ থেকে পৌনে ৩ লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। আমচাষী ও ব্যাপারীদের হাঁকডাকে মুখর থাকে কানসাটসহ শিবগঞ্জের বিভিন্ন আমবাজার।
এবার করোনা সংক্রমণ রোধ ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে অনলাইন ও মোবাইলের মাধ্যমে বেচাকেনা বেড়েছে। দেশজুড়ে জেলার কানসাট বাজারের আমের সুখ্যাতি থাকায় পাইকারি বাজারে আসেন দেশের বিভিন্ন স্থানের ব্যাপারীরা। এতে চাঙ্গা হয় আমনির্ভর এ জেলার অর্থনীতি।
করোনায় এবার আমের বাজার ও ক্রেতাদের নিয়ে আমচাষী ও ব্যবসায়ীদের মাঝে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়ে গিয়েছিল। বাজারে আশানুরূপ ক্রেতা না আসায় তাদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছিল। কিন্তু অনলাইন ও মোবাইলের মাধ্যমে আমের চাহিদা বিক্রির পাশাপাশি দাম কম থাকলেও ব্যবসা বেড়ে যাওয়ায় তাদের সে হতাশা অনেকাংশে কেটে গেছে।
উপজেলার আম ব্যবসায়ীরা জানান, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে বাজারে তেমন ক্রেতা আসছেন না; তবে মোবাইলের মাধ্যমে চাহিদা দিচ্ছেন। এছাড়া অনলাইনের মাধ্যমে অনেকেই বাগান থেকে আম ক্রয় করছে এবং ব্যাপারী না আসলেও তারা মোবাইলের মাধ্যমে চাহিদা দিচ্ছেন। তাদের আমগুলো ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন, ট্রাক ও কুরিয়ারের মাধ্যমে পাঠানো হচ্ছে।
বাজারে ভালমানের খিরসাপাত ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকা মণ, ল্যাংড়া ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে শিবগঞ্জ ম্যাংগো প্রডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক মো. ইসমাইল খান শামীম জানান, এ বছর আমের ফলন ভালো হয়েছে, কিন্তু আমের ভরা মৌসুমে করোনা পরিস্থিতির কারণে আমের দাম এবং ব্যাপারীরা কানসাটে তেমন না আসায় আমের দাম তেমন পাওয়া যাচ্ছে না। চাষীরা বাগান থেকে আম পেড়ে উপজেলার বিভিন্ন বাজারে নিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি আরও জানান, আম পরিবহনে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনের মতো বিআরটিসির ট্রাক চালু এবং কুরিয়ার সার্ভিসের চার্জ কমিয়ে সারা দেশে আম পরিবহন ও বাজারজাতকরণের দাবি করেন। এছাড়া এবার আমচাষীদের পাশে দাঁড়িয়ে অনলাইন মার্কেটিংয়ের উদ্যোক্তারা প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ আম ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাচ্ছে।
কানসাট আম আড়তদার সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক টিপু জানান, আমের ভরা মৌসুমে করোনা পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সামনের দিনে, ল্যাংড়া, আম্রপালি, ফজলি জাতের আম বেচা-কেনার সময় ব্যাপারীরা যাতে সহজে জেলার কানসাট থেকে আম বহন করতে পারে সেই দাবি করেন। আর তা নাহলে আমনির্ভর অর্থনীতিতে বিরাট ধস নামবে। এর প্রভাবে আমচাষী, বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা পুঁজি হারিয়ে পথে বসার উপক্রম দেখা দিতে পারে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম জানান, চলতি বছরের শুরুতে প্রচণ্ড খরা বিরাজ করায় কিছুটা আমের ক্ষতি হলেও পরে বৃষ্টি হওয়ায় আমের আকার বড় হওয়ায় উৎপাদনে তেমন প্রভাব পড়েনি। বিশেষ করে জেলায় এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় আমের ফলন ভালো হয়েছে। তবে এ জেলায় করোনার সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় আম বাজারজাত বা বিপণন নিয়ে কিছুটা শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। ব্যাপারীসহ ব্যবসায়ীরা যাতে জেলা ও উপজেলায় আসতে পারেন- সেজন্য আবাসিক হোটেল ও পরিবহন চলাচলে ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন।