অর্থ পাচারের অভিযোগে ধামাকা সংশ্লিষ্ট ১৪ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ

অর্থ পাচারের অভিযোগে ধামাকা সংশ্লিষ্ট ১৪ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ধাকামা শপিং ডটকমের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া অর্থ পাচারের ভয়াবহ তথ্য পাওয়ার পর কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জসিম উদ্দিন চিশতির ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টসহ ধামাকা সংশ্লিষ্ট ১৪টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এর মধ্যে জসিম উদ্দিন চিশতির পাঁচটি এবং তার মালিকানাধীন ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেডের সাতটি এবং মাইক্রো ট্রেড ও মাইক্রো ফুড এন্ড বেভারেজের একটি করে অ্যাকাউন্ট রয়েছে।

গতবছর নভেম্বর থেকে ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করলেও ধামাকার নিজস্ব কোন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না খুলে এসব অ্যকাউন্টে ক্রেতাদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে আসছে কোম্পানিটি।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রাথমিক তদন্তে এসব অ্যাকাউন্ট থেকে গ্রাহকদের ৫০ কোটি টাকা পাচারের ভয়াবহ তথ্য উঠে আসার পর অ্যাকাউন্টগুলো জব্দ করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ করে সংস্থাটি।

এছাড়া, গত সোমবার প্রতিষ্ঠানটির চিফ অপারেটিং অফিসার সিরাজুল ইসলাম রানাসহ পাঁচ কর্মকর্তার বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারিসহ তাদের ন্যাশনাল আইডেনটিটি নম্বর (এনআইডি) ব্লক করা হয়েছে। এই পাঁচ কর্মকর্তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করতেও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে সিআইডি। কোম্পানিটির এমডি জসিম উদ্দিন আগে থেকেই বিদেশে রয়েছেন।

আপাতত ৩০ দিনের জন্য ব্যাংক একাউন্টগুলো জব্দ করে রবিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট সিআইডিকে জানিয়েছে, আরও লম্বা সময়ের জন্য অ্যাকাউন্টগুলো জব্দ করে রাখার দরকার হলে আদালতের রায়ের মাধ্যমে তা কার্যকর করা হবে।

সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির  বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে অর্থপাচারের তথ্য পাওয়ার পর ধামাকার ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো জব্দ করতে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ করে চিঠি দিয়েছিলাম। তার প্রেক্ষিতেই প্রতিষ্ঠানটির ১৪টি অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে বিএফআইইউ’।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জব্দ করা ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলোর মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংকের তিনটি, ডাচ বাংলা ব্যাংকের তিনটি, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের একটি, দ্য সিটি ব্যাংকের পাঁচটি, সাউথ-ইস্ট ব্যাংকের একটি ও প্রাইম ব্যাংকের একটি।

সিআইডি সূত্র বলছে, ধামাকা গ্রাহকদের বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচারসহ অন্য বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে সরিয়ে ফেলেছে। তদন্তে ধামাকার গ্রাহকদের ২৮ কোটি টাকা বিনিয়োগের নামে ভিন্ন আরেক প্রতিষ্ঠান মাইক্রো ফুড অ্যান্ড বেভারেজের অ্যাকাউন্টে সরানো হয়েছে। পরবর্তীতে সেই অ্যাকাউন্ট থেকেও টাকা সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

সিআইডির কর্মকর্তারা জানান, ধামাকা শপিংয়ের নামে ই-কমার্স ব্যবসার কোন লাইসেন্স নেই। ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেডের নামে অবৈধভাবে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে চলছিল প্রতিষ্ঠানটি। ইনভেরিয়েন্ট টেলিকমের লাইসেন্সে ই-কমার্স ব্যবসার অনুমতি নেই বলে নিশ্চিত হয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা।

ধামাকার নামে নিজস্ব কোন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকা এবং গ্রাহকদের কাছ থেকে অন্য কোম্পানির অ্যাকাউন্টে টাকা নেওয়ার পর তা সরিয়ে ফেলার ঘটনায় সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তারা মনে করছেন পরিকল্পিতভাবে অর্থ পাচার করতেই এমন প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির কর্তাব্যক্তিরা।

ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এর সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমাল  বলেন, ‘ইভ্যালীর মতো বিজনেস মডেল ও নানা অভিযোগ থাকায় আমরা ইতোমধ্যেই ধামাকার বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছি। অর্থ পাচারের বিষয়ে নিশ্চিত হলে ধামাকার মেম্বারশীপ বাতিল করবো আমরা’।

সিআইডির কর্মকর্তারা জানান, সাউথ-ইস্ট ব্যাংকে থাকা ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেডের একটি অ্যাকাউন্টেই মোট ৫৮৮.৯০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। গত ২৭ জুন অ্যাকাউন্টটিতে ব্যালেন্স ছিল মাত্র ৯৩,৭৩১ টাকা।

আগে থেকে অগ্রিম নিয়ে পণ্য না দেওয়া গ্রাহকদের রিফান্ড চেক দিলেও ব্যালেন্স না থাকায় ক্রেতারা তা নগদায়ন করতে পারছে না বলেও অভিযোগ পেয়েছে সিআইডি।

গত বছরের নভেম্বর মাসে যাত্রা শুরু করে ধামাকা। ইভ্যালীর মতো গাড়ী, বাইকসহ বিভিন্ন পণ্যে ধামাকা ৪০% থেকে ৫০% পর্যন্ত অফার দিয়ে গ্রাহকদের থেকে মোটা অংকের টাকা অগ্রিম হিসেবে তুলে নিয়েছে। পরে প্রতিষ্ঠানটি মার্সিডিজ বেঞ্জসহ নামীদামী বিভিন্ন ব্যান্ডের গাড়ীতে ৩৫% অফার দিয়ে চমক সৃষ্টি করে।

সোমবার প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, বাইকসহ বিভিন্ন পণ্যে এখনও ছাড় দিয়ে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে ধামাকা। বর্তমানে বাইকে সর্ব্বোচ্চ ৩০% পর্যন্ত ছাড় চলছে।

 

সূত্র -দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড

 

আপনি আরও পড়তে পারেন