অর্শ বা পাইলসের সমস্যা সমাধানে ঘরোয়া ১০ উপায় | দৈনিক আগামীর সময়

অর্শ বা পাইলসের সমস্যা সমাধানে ঘরোয়া ১০ উপায় | দৈনিক আগামীর সময়

তীব্র বেদনা দায়ক এবং জটিল রোগগুলোর মধ্যে অর্শ বা পাইলস হলো একটি। এটি মানুষের মলদ্বারের রোগ। এ রোগে মলদ্বারের ভেতরে বা বাইরে, চারপাশে বা একপাশে, একটি বা একাধিক, গোলাকৃতি বা সুচাল গুটিকা দেখা দেয়। এ গুটিকাগুলোকে ‘বলি’বা ‘গেজ’ বলা হয়। পায়খানা করার সময় এ বলিগুলো থেকে অভ্যন্তরীণ সমস্যার অনুপাতে কারো অধিক পরিমাণে, কারো স্বল্প পরিমাণে রক্ত যায়। আবার অনেকের রক্ত যায়ই না।অর্শ বা পাইলসের সমস্যা ঘরে ঘরে দেখা যায়।

অর্শ হলে কীভাবে বুঝবেন?
মলত্যাগের সময় ব্যথাহীন রক্তপাত, চুলকানি বা অস্বস্তিকর জ্বালাপোড়া, মলদ্বারে ব্যথা, পায়ুপথের বাইরের দিকে ফোলা বা বেরিয়ে আসা অনুভব করা, বা চাকার মতো অনুভূতি থেকে শুরু করে নিচের লক্ষণসমূহ-

মলত্যাগের সময় অত্যধিক বা অল্প পরিমাণে রক্ত যেতে পারে।
গুহ্য দ্বারে জ্বালাপোড়া এবং ফুলে যায়।
টাটানি ও যন্ত্রণা।
কাঁটাবিদ্ধ অনুভূতি।
মাথা ধরা ও মাথা ভার বোধ।
উরুদেশ, বক্ষ, নাভির চারপাশে ব্যথা ও মলদ্বারে ভার বোধ।
কোমর ধরা ও কোষ্ঠবদ্ধতা।

অর্শ প্রতিরোধের উপায়:
কোষ্ঠকাঠিন্য যাতে না হয় সে দিকে খেয়াল রাখা।
নিয়মিত ঘুমানো।
পরিমাণ মতো পানি পান করা।
অতিরিক্ত পরিশ্রম না করা।
তরলও সহজপাচ্য খাদ্য গ্রহণ।
অধিক মশলা জাতীয় খাদ্য পরিহার করা।

অর্শ রোগে আক্রান্তদের করণীয়:
নিয়মিত পায়খানা করা।
পেটে হজম হতে চায় না এমন খাদ্য বর্জন করা।
চিকিৎসকের পরামর্শমতো বিশ্রাম নেয়া।
হাতুরে ডাক্তার বা কবিরাজ দিয়ে চিকিৎসা না করা।

পাইলসের চিকিৎসার জন্য নানা ধরণের চিকিৎসা রয়েছে। সমস্যা কতটা গভীর তার উপরও চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ভর করে। কখনও শুধু ওষুধেই কাজ দেয়, কখনও আবার সমস্যা এতটাই বেড়ে যায় যে অস্ত্রোপচার ছাড়া আর কোনও উপায় থাকে না। তবে অর্শ বা পাইলসের সমস্যায় কিছু নির্দিষ্ট খাবার ও টোটকা আছে, যা অত্যন্ত উপকারী-

বেদানা:
বেদানার দানা জলে ভাল করে ফোটান। যতক্ষণ না বেদানার দানা ও জলের রং বদলাচ্ছে ততক্ষণ ক্রমাগত ফুটিয়ে যান। এই জল ছেঁকে রেখে দিন। দিনের দুবার করে এই জল খান।

ডাল:
মসুর ডাল, খেসারী ডাল, তিসী ডাল, এই ধরনের খাবার অর্শ বা পাইলসের সমস্যা নিরাময়ে খুবই উপকারি।

র‌্যাডিশ জুস:
র‌্যাডিশ হল মূলা ঘরানার একটি সবজি। এই সবজি অর্শ বাপাইলসের সমস্যায় অত্যন্ত উপকারি। এই সবজির রস খেলে উপকার পাবেন। প্রথমে ১/৪ কাপ দিয়ে শুরু করুন। তারপর পরিমাণ আস্তে আস্তে বাড়িয়ে ১/২ কাপে নিয়ে আসুন।

আদা ও লেবুর রস:
ডিহাইড্রেশনও পাইলসের অন্যতম কারণ। আদা ও লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে তাতে ১ চামচ মধু ভাল করে মিশিয়ে নিন। দিনে দুবার করে এই মিশ্রণটি খান। এতে শরীর হাইড্রেট হবে এবং পাইলসের সমস্যাও কমবে।

কাঁচা পেঁয়াজ:
পাইলসের কারণ যে মলদ্বার থেকে রক্ত পরার সমস্যা তৈরি হয়, কাঁচা পেঁয়াজে সে সমস্যা অনেকটাই কমে। অন্ত্রের যন্ত্রণা প্রশমিত করতেও সাহায্য করে।

প্রাতঃকর্মের সময় বসার ধরণ:
অনেকসময় ভুল পদ্ধতিতে কমোডে বসার ফলে অতিরিক্ত চাপের প্রয়োজন হয়। পায়ের নিচে একটা ছোট টুল রাখুন। কমোডে বসার সময় একটু সামনের দিকে ঝুঁকে বসুন। এতে বৃহদন্ত্রের কম চাপ পড়বে।

ওয়ার্কআউট:
কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা কমাতে ও শরীরে রক্তচলাচল স্বাভাবিক রাখতে নিয়মিত ওয়ার্ক আউট করা উচিত। তবে যদি খুব পরিশ্রম করেন বা ভার উত্তোলন করেন তাহলে পাইলসের সমস্যা বাড়তে পারে। সাঁতার কাটা বা সাইকেল চালানোর মতো হাল্কা ওয়ার্কআউট করুন।

হলুদ:
কাঁচা হলুদ জলে ফোটান ভাল করে। আর এই জল নিয়মিত খান। এতে পাইলসের সমস্যায় অনেকটা উপকার পাওয়া যায়।

কলা:
কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা সবচেয়ে উপকারি এবং অব্যর্থ ওষুধ হল কলা। বিনা কষ্টে মলত্যাগ করতে সাহায্য করে কলা। এর ফলে মলদ্বারে কোনও চাপ পড়ে না, ফলে অর্শ বা পাইলসের সমস্যা বৃদ্ধি হয় না। কলা সোয়াবিনের দুধ দিয়ে খেলে আরও তাড়াতাড়ি উপকার পাওয়া যাবে।

ডুমুর:
শুকনো ডুমুর বা ফিগ ১ গ্লাস জলে সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। পরের দিন সকালে এই অর্ধেক জল খেয়ে নিন। আবার বিকেলের দিকে বাকি অর্ধেক জল খেয়ে নিন।

উল্লেখ্য:
মনে রাখবেন, এটি জটিল কোনো রোগ না হলেও একটি দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা। তাই ‘গ্যারান্টি’ চিকিৎসার আকর্ষণে না ভুলে নিয়মিত চিকিৎসা নিন ও নির্দিষ্ট নিয়মকানুন মেনে চলুন।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment