অস্তিত্ব সংকটে মৌলভীবাজারের বাঁশ-বেত শিল্প

অস্তিত্ব সংকটে মৌলভীবাজারের বাঁশ-বেত শিল্প

ঐতিহ্য ধারণ করে বংশানুক্রমে চলে আসছে যে পেশা, নানাবিধ সংকটে পড়ে মৌলভীবাজারের বাঁশ-বেত শিল্পের সে পণ্য আজ অস্তিত্ব সংকটে। পৃষ্ঠপোষকতার অভাব আর প্লাস্টিক পণ্যের দৌরাত্ম্যের সঙ্গে পেরে না ওঠায় শ্রমিকের সংখ্যা কমে এসেছে। 

সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, এ অবস্থা চলতে থাকলে একসময় বিলুপ্ত হয়ে যাবে পেশাটি। তবে সম্প্রতি সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে স্থানীয় বিসিক ও জেলা প্রশাসন। 

মৌলভীবাজারের ৭ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে কারুশিল্পীদের ব্যস্ততা শতাব্দী প্রাচীন থেকে। একেবারে শুরুতে শুধু পারিবারিক প্রয়োজন মেটাতে তৈরি হত ঝুড়ি, ডালা, কুচা, চাটাই, টুকরি, ঝাকি, টাইল, খালুই, চালুনিসহ নিত্যব্যবহার্য পণ্য। তাই গ্রামগুলোর বেশির ভাগ বাড়িতেই ছিল বাঁশ-বেতের পণ্য তৈরির আয়োজন। দক্ষ শিল্পীদের হাতে তৈরি পণ্যের সুনাম আশপাশে ছড়িয়ে পড়ায় শুরু হয় বাণিজ্যিক উৎপাদন। অনেক পরিবারের জীবিকার প্রধান অবলম্বন হয়ে ওঠে এগুলো।

বর্তমানে দুই হাজার ৭৫৪টি পরিবার যুক্ত আছে এ কাজে। মূলত পারিবারিক উত্তরসূরি হয়ে এ ধারা টিকিয়ে রেখেছেন স্থানীয়রা। বর্ষীয়ানরা হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করেন নতুন কারিগরদের।

এলাকার বাজারগুলো এসব পণ্য বেচাবিক্রির মূল জায়গা হলেও এখন রফতানি হচ্ছে বিদেশেও। কিন্তু সে সুযোগ সরাসরি নেই উৎপাদকের হাতে। যে কারণে ন্যায্যমূল্য বঞ্চিত প্রান্তিক কারিগররা। এ ছাড়া প্লাস্টিক পণ্য বাঁশ-বেতের উপকরণের জায়গা দখল করায় সংকুচিত হচ্ছে স্থানীয় বাজারও।

সমস্যা রয়েছে কাঁচামাল প্রাপ্তিতেও। কোথাও আবাসন, কোথাও লাভজনক অন্য কৃষি খাতে বিনিয়োগ করছেন অনেকে। তাই কমে যাচ্ছে বেত ও বাঁশঝাড়ের সংখ্যা। অনিশ্চয়তায় নতুন প্রজন্মের অনেকে চলে যাচ্ছে অন্য পেশায়।

এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে প্রশিক্ষণ-প্রণোদনার কথা জানান বিসিকের উপপরিচালক মো. জোহরুল হক। তিনি জানান, কারিগরি সহায়তা, লোনের সহায়তাসহ সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছি। 

মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান জানান, বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে ক্ষুদ্র লোনের ব্যবস্থা করার করে দেওয়া মাধ্যমে তাদের শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। 

কাঁচামাল উৎপাদন ও সরবরাহ নিশ্চিতে সংরক্ষিত বিশেষায়িত বনাঞ্চল তৈরি ও পরিবেশবান্ধব পণ্য ব্যবহারে গ্রাহক সচেতনতা বাড়ানোর আহ্বান কারুপণ্য উৎপাদনকারীদের।

আপনি আরও পড়তে পারেন