আজ একইসঙ্গে ঘটবে বিরল মহাজাগতিক ৩ ঘটনা

আজ একইসঙ্গে ঘটবে বিরল মহাজাগতিক ৩ ঘটনা
আজ একইসঙ্গে ঘটবে বিরল মহাজাগতিক ৩ ঘটনা

 

অন্যদিনের থেকে কিছুটা হলেও ব্যতিক্রম আজকের দিনটি, কেননা আজ একইসঙ্গে ঘটতে যাচ্ছে ৩টি বিরল মহাজাগতিক ঘটনা। এই বছরের প্রথম পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ হতে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, একইসঙ্গে রাতে দেখা মিলবে সুপার মুন ও সুপার ব্লাড মুন।

পূর্ণগ্রাস ও সুপারমুন একসঙ্গে দেখতে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। আর সেইসঙ্গে যুক্ত হয়েছে লাল রক্তিম চাঁদও। অনেকেই হয়তো ভাবছেন, একইসঙ্গে সুপার মুন ও সুপার ব্লাড মুন কীভাবে দেখা যাবে। তার আগে চন্দ্রগ্রহণ সম্পর্কে কিছুটা জেনে নেওয়া যাক।

পূর্ণিমার রাতে হয় চন্দ্রগ্রহণ। সূর্যকে কেন্দ্র করে চারদিকে প্রদক্ষিণ করে পৃথিবী। আর পৃথিবীকে কেন্দ্র করে নিজের নির্দিষ্ট কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করে চাঁদ। যে যার নিজের কক্ষপথে ঘুরতে ঘুরতে যখন চাঁদ ও সূর্যের মাঝে পৃথিবী চলে আসে তখন হয় পূর্ণিমা। আর পূর্ণিমার দিনে যদি সূর্য, চাঁদ ও পৃথিবী কোনোভাবে এক সরলরেখায় চলে আসে, তখন পৃথিবীর ছায়া চাঁদের ওপরে পড়ে। অর্থাৎ পৃথিবীর ছায়া-কোণে ঢুকে পড়ে চাঁদ। সেটা আংশিকভাবে বা পুরোপুরি হতে পারে।

যখন পৃথিবীর ছায়া-কোণে চাঁদ আংশিকভাবে ঢুকে যায়, তখন আংশিক চন্দ্রগ্রহণ হয়। আর ছায়া-কোণে চাঁদ পুরোপুরি ঢুকে গেলে হয় পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। বিজ্ঞানীরা বলছেন, পূর্ণগ্রাসে চাঁদ পৃথিবীর আরও কাছাকাছি চলে আসবে। ফলে চাঁদকে স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় ১২ শতাংশ বড় দেখাবে। সুপার হয়ে উঠবে ‘মুন’।

এবার জানা যাক, সুপারমুন ও রক্তিম চাঁদ বা ব্লাড সুপার মুন নিয়ে। চাঁদ যে পথে পৃথিবীর চারপাশে চক্কর কাটে সেটা পুরোপুরি গোলাকার নয়। অনেকটা ডিমের মতো, যাকে বলে উপবৃত্তাকার। ফলে পৃথিবীর চারদিকে ঘুরতে ঘুরতে চাঁদ কখনও পৃথিবীর কাছে চলে আসে আবার কখনও দূরে চলে যায়। এমন একটা সময় আসে যখন চাঁদ পৃথিবীর সবচেয়ে কাছাকাছি চলে আসে, সে সময় চাঁদকে আরও বড় ও উজ্জ্বল দেখায়। একে জ্যোতির্বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলে, ‘পেরিজি’। সবচেয়ে কাছে আসে বলেই চাঁদকে দেখতে তখন সবচেয়ে বড় লাগে। এই ঘটনাটিকেই বলা হয় সুপারমুন।

পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণের সময় লাল আভার চাঁদ বা ‘ব্লাড মুন’ দেখা যায়। মনে হয় চাঁদের গায়ে লাল রঙ লেগেছে। এই ঘটনার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে। পূর্ণগ্রাসের সময় সূর্যের আলো চাঁদের গায়ে পড়ে না। চাঁদ পুরোপুরি পৃথিবীর ছায়ায় ঢেকে যায়। কিন্তু সূর্যের আলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের স্তরে এসে পড়ে।

আমরা জানি, সূর্যের সাদা আলোর সাতটি রঙ আছে। এর মধ্যে বেগুনি ও নীল রঙের তরঙ্গদৈর্ঘ্য কম। কাজেই এই রঙের আলোকরশ্মি বায়ুমণ্ডলে বেশি বিচ্ছুরিত হয়। তাই এই রঙের আলো চারদিকে বেশি ছড়িয়ে পড়ে।

অন্যদিকে, লাল ও কমলা এই দুই রঙের আলোকরশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেশি। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে কম বিচ্ছুরিত হয়, তাই বেশি ছড়িয়ে পড়তে পারে না। তখন বায়ুমণ্ডলে ওই দু’টি তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোকরশ্মির প্রতিসরণ বা রিফ্র্যাকশন হয়। এই প্রতিসরণের ফলেই সেই আলোর কিছুটা বেঁকে গিয়ে চাঁদের গায়ে পড়ে। তাই মনে হয় চাঁদের গায়ে লাল আভা লেগেছে। আর তখনই চাঁদকে ব্লাডি মুন বলা হয়। আর যে সময় চাঁদ পৃথিবীর খুব কাছে অর্থাৎ সুপারমুন হয়ে আছে সে সময় যদি এমন ঘটনা ঘটে, তাহলে তাকে সুপার ব্লাডি মুন বলা হয়। বড় ও উজ্জ্বলতম চাঁদ যার রঙ লাল রক্তিম।

দক্ষিণপূর্ব এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ওশেনিয়া, আলাস্কা, কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ এলাকা, হাওয়াই, মেক্সিকো, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা থেকে এই তিন মহাজাগতিক ঘটনাই একসঙ্গে দেখা যাবে। ভারতে উত্তর-পূর্বের কয়েকটি রাজ্য থেকে সবটা না হলেও খানিকটা দেখা যাবে পূর্ণগ্রাসে সুপার ব্লাড মুন।

পশ্চিমবঙ্গের কিছু এলাকা থেকে দেখা যাবে। আর দেখা যাবে ওড়িশা ও আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ থেকে।

আপনি আরও পড়তে পারেন