আমাজন, ওয়ালমার্টের আধিপত্য কমাতে ব্যাংকগুলোকে প্রস্তুত করছে ভারত

আমাজন, ওয়ালমার্টের আধিপত্য কমাতে ব্যাংকগুলোকে প্রস্তুত করছে ভারত

 

 

ভারত সরকারের হিসাব অনুযায়ী, ২০২১ সালে ভারতের ই-কমার্স ব্যবসা ৫৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, চলতি দশকের শেষ নাগাদ এই ব্যবসা ৩৫০ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকবে।

ই-কমার্স খাতে আমাজন এবং ওয়ালমার্টের আধিপত্য কমাতে ইতোমধ্যেই নানান প্রচেষ্টা শুরু করেছে ভারত। দেশে নিজস্ব ওপেন নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করতে ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রস্তুত করার কাজ পুরোদমে চলছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে এসব তথ্য।

ভারতের বড় কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ‘বায়ার প্ল্যাটফর্ম’ স্থাপনের বিষয়ে আলোচনা চালাচ্ছে, যেখানে গ্রাহকরা ‘ওপেন নেটওয়ার্ক ফর ডিজিটাল কমার্স’ (ওএনডিসি)-এর অ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে পণ্য ও পরিষেবার অর্ডার দিতে পারবেন। গত এপ্রিলেই এই নেটওয়ার্ক ব্যবস্থার সফট-লঞ্চ করেছে ভারত সরকার।

নেটওয়ার্কটিতে যেন দেশজুড়ে ছোট বড় সব ধরনের ই-কমার্স সাইটঅনলাইন বিক্রেতারা সমান সুযোগ পান, সেজন্য ছোট অনলাইন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাপের সম্মুখীন হচ্ছেন ভরতের প্রধানমন্ত্রী নরেদ্র মোদি। ব্যবসায়ীদের দাবি, আমাজন এবং ওয়ালমার্টের ফ্লিপকার্টের প্রভাবের বাইরে গিয়ে কাজ করতে হবে সরকারকে, তবেই নতুন নেটওয়ার্ক তৈরির এ উদ্যোগ সফল হবে।

কেবল ভারতই নয়, অন্যান্য দেশের নীতিনির্ধারকরাও অনলাইন কেনাকাটার ক্ষেত্রে বড় প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর আধিপত্যে লাগাম টানার উপায় খুঁজছেন।

ওএনডিসির প্রধান নির্বাহী টি. কোশি  ভারতের নতুন এই নেটওয়ার্ক সম্পর্কে বলেন, “বিক্রেতার দিক থেকে দেখলে, একটি সাধারণ ভাষা ব্যবহার করে যে কেউই তাদের ডিজিটাল ক্যাটালগকে অ্যাপজুড়ে ক্রেতার সামনে প্রদর্শন করতে পারেন। এটি এখন আর কেবল একটি বড় কর্পোরেশনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না।”

ব্যাংক, ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট এবং টেলিকম সংস্থাগুলোর সঙ্গে ইতোমধ্যেই এ ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে বলে জানান টি. কোশি। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নাম-পরিচয় এবং আলোচনা কতদূর এগিয়েছে সে সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।

ভারত সরকারের হিসাব অনুযায়ী, ২০২১ সালে ভারতের ই-কমার্সের আকার ৫৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। চলতি দশকের শেষ নাগাদ এই ব্যবসা ৩৫০ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জানা গেছে, ভারতে বর্তমান বাজারের ৬০ শতাংশেরও বেশি নিয়ন্ত্রণ করছে আমাজন এবং ফ্লিপকার্ট, যা ১৩৫ কোটি জনসংখ্যার দেশে মোট ভোক্তা ক্রয়ের প্রায় ৮ শতাংশ।

ওএনডিসির লক্ষ্য চলতি বছরের আগস্টের মধ্যে অন্তত ১০০টি শহরে পৌঁছানো। সেইসঙ্গে, সামনের পাঁচ বছরে ৯০০ মিলিয়ন ক্রেতা এবং ১.২ মিলিয়ন বিক্রেতাকে সাইন আপ করানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে এই নেটওয়ার্ক।

ব্যাংক অফ বরোদা (বিওবি)-এর চিফ ডিজিটাল অফিসার অখিল হান্দা জানান, তার প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যেই এই প্রকল্পের বিষয়ে আলোচনা শুরু করছে। তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলা থেকে বিরত থাকেন তিনি।

বায়ার প্ল্যাটফর্ম স্থাপনে ব্যাংকসহ অন্যান্য ঋণদাতাদের সঙ্গে ওএনডিসির আলোচনা চলছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট তিনটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া, এক্সিস ব্যাংক, পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক, আইসিআইসি, এইচডিএফসি, কোটাক মাহিন্দ্রা এবং আইডিএফসি ফার্স্ট।

কোটাক মাহিন্দ্রা জানায়, তারা ইতোমধ্যে ওএনডিসিতে বিনিয়োগ করেছে। তাদের বিশ্বাস, প্রকল্পটি ভারতের ডিজিটাল বাণিজ্য খাতকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করবে। তবে বায়ার প্ল্যাটফর্মের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি এই প্রতিষ্ঠান।

ব্যাংকসহ অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যেই ২.৫৫ বিলিয়ন রুপি  (৩২.৮ মিলিয়ন ডলার) প্রথমিকভাবে সমন্বিত বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

তবে প্রকল্পটি এগিয়ে চললেও এই উদ্যোগ ভারতে আমাজন ও ফ্লিপকার্টের আধিপত্য কমাতে পারবে কিনা, সে প্রশ্ন থেকেই যায়।

স্টার্ট-আপে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান থ্রি ইন ওয়ান ক্যাপিটাল-এর ব্যবস্থাপনা অংশীদার প্রণব পাই এ ব্যাপারে বলেন, “আমাজনের মতো বড় কোম্পানিকে টক্কর দেওয়ার জন্য নেটওয়ার্কটি হয়তো যথেষ্ট নয়। আমাজনের প্রতি বিশ্বস্ততা এবং পরিষেবার বিষয়ে তাদের আপোস না করার প্রবণতা, এখনও অনলাইন ভোক্তাদের কাছে আমাজনের গুরুত্ব ধরে রাখবে।”

এদিকে, নতুন নেটওয়ার্কের ব্যাপারে মন্তব্য জানতে চাইলে রয়টার্সের অনুরোধে সাড়া দেয়নি আমাজন এবং ফ্লিপকার্ট।

ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্ম অ্যাক্সেল এবং সেকোইয়া ওএনডিসিতে যোগ দেবে এমন স্টার্ট-আপগুলোতে সম্ভাব্য বিনিয়োগের বিষয়ে আলোচনা করছে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। এছাড়া, ভারতের টেলিকম সংস্থা ভারতী এয়ারটেল এবং ভোডাফোন আইডিয়া কীভাবে নেটওয়ার্কটি ব্যবহার করতে পারে, তা নিয়েও আলোচনা করছে বলে রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছে দুটি সূত্র।

তবে সংস্থাগুলো এ বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।

রয়টার্সের গত সপ্তাহের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ওএনডিসির সঙ্গে আলোচনা চলছে গুগলেরও। এদিকে, ভারতের শীর্ষস্থানীয় ফিনটেক কোম্পানি পেটিএম ইতোমধ্যেই যোগ দিয়েছে ওএনডিসিতে।

আপনি আরও পড়তে পারেন