আরাফায় অবস্থান বিশ্ব মুসলিমের ঐক্যের প্রতীক

আরাফায় অবস্থান বিশ্ব মুসলিমের ঐক্যের প্রতীক

হজের তিনটি ফরজের মধ্যে আরাফাত ময়দানে অবস্থান করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আরাফাতে অবস্থান ছাড়া হজ পরিপূর্ণ হয় না। লাব্বাঈক আল্লাহুম্মা লাব্বাঈক, লাব্বাঈক, লা-শারিকা-লাকা লাব্বাঈক, ইন্নাল হামদা ওয়ান্ নি`মাতা লাকা ওয়াল-মুলক, লা শারীকালাক।” এ শব্দগুলোর জানান দিতে দিতে আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হয়। এ ধ্বনির উচ্চারণ মুসলিম বিশ্বের ঐক্যের বন্ধনের মূলমন্ত্রও। তাইতো সারা বিশ্ব থেকে আগত প্রায় ৩০ লাখ হাজি আজ হজের মূল রুকন আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হতে শুরু করেছে।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে সৌদি আরবে গত সোমবার ৭ই জিলহজ বাইতুল্লার খতিবের খুৎবা শুনে ৮ই জিলহজ মক্কা থেকে মিনায় এসে পৌছেছে। বরাবরে মতো এবারও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হাজার হাজার সুদৃশ্যমান সাদা রঙের তাঁবুতে সুশৃংখলভাবে অবস্থান করেছেন হাজীরা। সেখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, জিকির-আজকার, ইবাদত-বন্দেগিতে সারাদিন অতিবাহিত করেন প্রত্যেক হাজি। যা সুন্নাত ইবাদত।

আরাফায় অবস্থান বিশ্ব মুসলিমের ঐক্যের প্রতীক

আজ (৯ই জিলহজ, বুধবার) বাদ ফজর মিনা থেকে রওয়ানা হয়ে ইতোমধ্যে হাজিগণ আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হয়েছেন। ফজর নামাজ শেষে কেউ পায়ে হেঁটে, আবার কেউ বিভিন্ন যানবাহনে করে উপস্থিত হন ঐতিহাসিক আরাফাত ময়দানে। মক্কা থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আরাফাত ময়দানের জাবালে রহমত হচ্ছে পুনর্মিলনের স্মৃতিস্তম্ভ। যেখানে হাজিগণ সমবেত হয়ে এ স্তম্ভে চুম্বন এবং মোনাজাত করে থাকেন। ইহরামের কাপড়ের শুভ্র বসনে হাজিগণ আল্লাহর দরবারে করেন আত্মনিবেদন। এ আত্মনিবেদন চলবে মাগরিবের পূর্ব পর্যন্ত। যা হজরত আদম ও মা হাওয়া আলাইহিস সালামের পূনমিলনের স্থল।

আমাদের আদি পিতা হজরত আদম আলাইহিস সালাম ও মা হাওয়া আলাইহিস সালামের স্মৃতি বিজড়িত মিলনস্থলও হচ্ছে এ ময়দান। আল্লাহ তাআলা তাঁদের দু`জনকে দুই স্থানে পাঠান। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পর আল্লাহ তাআলা আবার তাঁদেরকে একত্রিত করেন এ ময়দানে। হজরত আদম আলাইহিস সালাম ও মা হাওয়া আলাইহিস সালামের স্মৃতি বিজড়িত এ ঘটনাকে মুসলমানদের জন্য আবশ্য পালনীয় বিষয় করে দিয়েছেন। যার গুরুত্ব আরও বেড়ে যায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঐতিহাসিক বিদায় হজের ভাষণে।

যা বিশ্বের ১৯০টি দেশ থেকে আগত সব হাজিকে স্মরণ করিয়ে দেয় বিদায় হজের সেই অমর ভাষণের কথা। যা আজ থেকে দেড় হাজার বছর পূর্বে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরাফাতের ময়দানে দিয়েছিলেন। সেখানেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন, `আমি তোমাদের জন্য দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, তার একটি হচ্ছে কিতাবুল্লাহ (আল্লাহর কিতাব) আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে আমার সুন্নাত তথা হাদিসের নববি। যারা এ দু`টোকে আঁকড়ে ধরবে, তাঁরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। আজও বিশ্ব মুসলিমকে বিদায় হজের এ ভাষণ ঐক্যবদ্ধ করে রেখেছে। সারা বিশ্বের মুসলমান হজে গিয়ে এ দীক্ষাই নিয়ে আসে। যা তাকে দুনিয়া থেকে পরপারে যাওয়া পর্যন্ত একত্ববাদের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকার প্রেরণা দিয়ে থাকে।

সাত লাখের বেশি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন মসজিদে নামিরা আজ সকাল সকালই ভর্তি হয়ে যায়। এ দৃশ্য মানবতার ধর্ম ইসলাম, শান্তির ধর্ম ইসলাম, ঐক্যের ধর্ম ইসলামের এক মূর্তপ্রতীক। এখানে হাজিগণ পাপমোচনের ব্যাকুলতা নিয়ে, গুণাহ মাপের জন্য ইবাদত-বন্দেগি করবেন। কান্না-কাটি, রোনাজারি করবেন। চারদিকে পাহাড় ঘেরা এ ময়দানেই আজ বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় সব হাজিদের উদ্দেশ্যে মুসলিমদের করণীয় বিষয়ক খুৎবা প্রদান করবেন সৌদি আরবের প্রধান মুফতি শাইখ আবদুল আজিজ। তিনি খুৎবায় সমগ্র মুসলিম ‍উম্মাহকে ইসলামের দিক-নির্দেশনা দিবেন এবং সমগ্র বিশ্বের সবার জন্য কল্যাণ কামনা করবেন। পরিশেষে এক আজানে আলাদা ইকামাতে জোহর ও আসর নামাজ আদায় করবেন।

হাজিগণ ইমামের সঙ্গে সন্ধ্যায় রওয়ানা হবেন মুজদালিফার উদ্দেশ্যে। যা আরাফাতের ময়দান থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সেখানে হাজিগণ জামারায় নিক্ষেপের জন্য পাথর সংগ্রহ করবেন এবং রাত্রি যাপন করনে। ১০ই জিলহজ বৃহস্পতিবার মুজদালিফায় ফজর নামাজ আদায় করে হাজিগণ মিনায় ফিরে আসবেন। জামারায়ে আকাবায় এসে শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করবেন। অতপর কুরবানি ও মাথা মুণ্ডন করে বাইতুল্লায় তাওয়াফে জিয়ারতের মাধ্যমে হজের প্রথম আনুষ্ঠানিকতা শেষ করবেন। তাওয়াফ শেষে হাজিগণ পুনরায় মিনায় ফিরে গিয়ে ১১ ও ১২ জিলহজ তারিখ সেখানে অবস্থান করবে এবং জামরায় পাথর নিক্ষেপ করবে। যারা ১৩ই জিলহজ মিনায় থাকবেন তাঁরা ১৩ তারিখও পাথর নিক্ষেপ করবেন। জামারায়ে আকাবা ছাড়া পরবর্তী পথর নিক্ষেপের সময় জামারায় তাকবির-তাহলিল ও দুআ দুরুদ পড়া সুন্নাত।

হজের মাধ্যমে অর্জিত আত্মশুদ্ধি বাস্তব জীবনে কাজে লাগানো সম্ভব হলে মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে ঐক্য ও সংহতি দৃঢ় করার প্রক্রিয়া সহজতর হবে। মুসলিম বিশ্বের এই ক্রান্তিলগ্নে আরাফাত ময়দানের ঐক্যের বন্ধন বিশ্ব মুসলিমের মুক্তির জন্য হবে পথ ও পাথেয়।

পরিশেষে…
হজ পালনে গমনকারী যে সব হাজিগণ অনাকাঙ্ক্ষিত ক্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যু, পঙ্গুত্ববরণ ও আহত হয়েছেন তাদের জন্য আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা এবং তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা। আল্লাহ তাআল ৩০ লাখ হজ আদায়কারী সবাইকে কবুল করুন। আমাদেরকেও হজ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

জাগোনিউজ২৪.কমের সঙ্গে থাকুন। সুন্দর সুন্দর ইসলামি আলোচনা পড়ুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment