উঠতি তরুণ – তরুণীদের ধ্বংসের হাতিয়ার মোবাইল ফোন

মিজানুর রহমান

ময়মনসিংহ জেলা প্রতিনিধিঃ

আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে নব নব আবিস্কারের মাধ্যমে মানুষ সভ্যতার চরম উৎকর্ষ সাধন করেছে। বিজ্ঞানের প্রসার ও বিকাশ ঘটিয়ে অনেক অসাধ্য সাধন করতে সক্ষম হয়েছে। বিজ্ঞান মানব জীবন থেকে অজ্ঞতা, কুসংস্কার, ভোগান্তি দূর করে জীবনকে করেছে সহজ-সাবলীল ও সুন্দর। নতুন ও সম্ভাবনাময়ী আবিস্কারের কল্যাণমুখী প্রয়োগে আধুনিক জীবনে বিজ্ঞান যোগ করেছে এক নব দিগন্ত। দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলা বিজ্ঞান নতুন নতুন বিস্ময় উদ্ভাবনের মাধ্যমে মানবজাতীকে প্রতিনিয়ত সমৃদ্ধ করে চলেছে। পৃথিবীকে মানুষের জন্য পরিণত করেছে বিশ্বগ্রামে (Global village)। জীবনকে করে তুলেছে গতিময় ও স্বাচ্ছন্দ্যময়। মানুষের জীবন যাপন পদ্ধতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনয়নের পাশাপাশি যোগাযোগের সহজতম মাধ্যম হিসাবে বিজ্ঞান যুগে যুগে আবিস্কার করেছে অসংখ্য বিকল্প। ডাক যোগাযোগের সহজতর বিকল্প হিসাবে আবিস্কার করেছে ফ্যাক্স, টেলিফোনের সহজতর বিকল্প হিসাবে ওয়্যারলেস প্রভৃতি। আবিস্কারের এই ধারাবাহিকতায় বিজ্ঞানের যে আবিস্কারটি বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয়, সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে, তা হ’ল মোবাইল ফোন। এর অপর নাম মুঠোফোন। বিজ্ঞানের এই অনুপম সৃষ্টি মোবাইল ফোন বর্তমান টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থায় নবদিগন্তের সূচনা করেছে। গোটা বিশ্বকে এক নিবিড় বন্ধনে আবদ্ধ করে মানুষের প্রয়োজন পূরণ করে চলেছে প্রতিনিয়ত। এর সাহায্যে পৃথিবীর এক প্রান্ত হ’তে অপর প্রান্তে অত্যন্ত স্বল্প সময়ে সংবাদ আদান-প্রদান, যোগাযোগ স্থাপন, ভাবের বিনিময় সম্ভব হয়ে উঠেছে।
শুধু কি তাই? বিজ্ঞানের উত্তরোত্তর উন্নতির ফলে মোবাইল ফোনের আকার-আকৃতি ও ব্যবহারে এসেছে বৈচিত্র্য ও অভাবনীয় পরিবর্তন। আবেগ-অনুভূতি বিনিময়ের দ্রুততম মাধ্যম হওয়া ছাড়াও মোবাইল ফোন আজকাল মানুষের অন্যতম বিনোদন সঙ্গীতে পরিণত হয়েছে। অবসাদ দূর ও অবসরকে আনন্দময় করে তুলতে এতে সংযোজিত হয়েছে অডিও, ক্যামেরা, ভিডিও প্রভৃতি প্রযুক্তি। কোন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বা অনুষ্ঠানকে জীবন্ত ও স্মরণীয় করে রাখার জন্য বর্তমানে ভিডিও ক্যামেরার প্রয়োজন আর তেমন অনুভূত হয় না। একটি উন্নতমানের মোবাইল ফোন থাকলেই যথেষ্ট। বর্তমানে কম্পিউটারের এক-তৃতীয়াংশ কাজ মোবাইলেই করা সম্ভব হচ্ছে। যদ্দরুন মানুষের কাছে এর গ্রহণযোগ্যতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি যেন পকেট কম্পিউটারে পরিণত হয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে এর দ্বারা হয়তো কল্পনাতীত কিছু করা সম্ভব হবে।বহুমুখী ব্যবহারের কারণে এর গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মোবাইল নেটওয়ার্কের বাইরে এখন কেউ থাকতে চায়না। কারণ নেটওয়ার্কের বাইরে থাকা মানে পুরো বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা। মোট কথা মোবাইল ফোন ছাড়া পুরো বিশ্ব অচল।
আজ আমার লেখার উদ্দেশ্য কিন্তু মোবাইল ফোনের গুণ-কীর্তন করা নয়। উপকারিতা সম্পর্কে আমরা সবাই অবগত। কিন্তু অপকারিতা সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত নই। অবগত থাকলে সতর্ক হওয়া যায়। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মকে অবগত ও সতর্ক করার উদ্দেশ্যে আমার এই লেখা। আমি প্রধান প্রধান ক্ষতিকর দিকসমূহ পাঠক সমূহে তুলে ধরছি।

এক: অপরাধ জগতের প্রধান অবলম্বন মোবাইল ফোন। খুন, ছিনতাই, টেণ্ডারবাজী, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, মাদক-ব্যবসা, অপহরণ, হানাহানি ছড়িয়ে দেওয়া, অপপ্রচার চালানোসহ যাবতীয় অপকর্মে ব্যবহৃত হচ্ছে মোবাইল ফোন। এমন কোন অপরাধ নেই, যেখানে মোবাইল ফোনের ব্যবহার নেই। অপরাধ বিস্তারের মোক্ষম অস্ত্র এই মোবাইল ফোন। কোন রকম নিয়ন্ত্রণ না থাকায় মোবাইল ক্রাইম দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সঠিক নীতিমালা ও এর যথাযথ প্রয়োগ না থাকলে আগামীতে অপরাধ কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। তখন মানুষ হিসাবে বেঁচে থাকা আমাদের জন্য কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে।

দুই: অশ্লীল ছবি (ভিডিওসহ) ম্যাসেজের মাধ্যমে উঠতি যুবক-যুবতীর নম্বরে পাঠিয়ে দিয়ে তাদের চরিত্র নষ্ট করা হচ্ছে। অনেক সময় শত্রুতা করে কারো চরিত্র নষ্ট করার জন্য কিংবা মেধাবী শিক্ষার্থীর মেধা নষ্ট করার জন্য এসব অশ্লীল ছবি ম্যাসেজ করে তাদের নম্বরে পাঠানো হয়। এসব ছবি ও সংলাপ উঠতি যুবক-যুবতীরা একবার দেখলে বা শুনলে আর মাথা ঠিক রাখতে পারে না। এক পর্যায়ে তারা বিপথগামী হয়ে অন্ধকার পথে পাড়ি জমায়। ধ্বংশ হয়ে যায় তাদের সকল স্বপ্নসাধ।

তিন: উঠতি তরুণ-তরুণীদের ধ্বংশের হাতিয়ার মোবাইল ফোন। যাদের মোবাইলের কোন দরকার নেই। কিন্তু বাবা-মা’রা বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব না দেওয়ায় কিংবা ছেলে-মেয়েদেরকে আধুনিক বানানোর জন্য তাদের হাতে মোবাইল তুলে দেন। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় মেয়েদের হাতে মোবাইল তুলে দেয় তাদের বন্ধু তথা প্রেমিকেরা। এসব তরুণ ও তরুণীরা মোবাইল নিয়ে যা করে তা নিম্নরূপঃ

(ক) মোবাইল নিয়ে সারাক্ষণ যৌনালাপে ব্যস্ত থাকে।

(খ) অশ্লীল ছবি (অডিও-ভিডিও) আদান প্রদানের মাধ্যমে অনৈতিক কাজে লিপ্ত হতে অনুপ্রাণিত করা।

(গ) সারারাত না ঘুমিয়ে যৌনালাপ করার কারণে শিক্ষার্থীদের শরীর, মন, মেধা নষ্ট হয়ে যায়, পড়ালেখা থেমে যায়।

(ঘ) অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের কারণে শরীর ও মনে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। মাদকাসক্ততা বেড়ে যায়।

(ঙ) বাবা-মা’র অবাধ্যতা, স্বামীর অবাধ্যতা, সংসার ভাঙ্গা, নষ্ট চরিত্রের পুরুষ ও মহিলা তৈরি করা।

চারঃ প্রয়োজন ছাড়া মোবাইল ব্যবহার করার কারণে মূল্যবান সময় ও অর্থ উভয়ই নষ্ট হয়। এতে করে যুব সমাজ কোন কাজই আর সঠিক সময়ে করতে পারছে না, তেমনি অহেতুক টাকা নষ্ট করার কারণে আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা কোচিং ও প্রাইভেটের নামে অভিভাবকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে মোবাইলের পিছনে খরচ করছে। এ এক বড় নেশা, যা মাদকের নেশাকেও হার মানায়।
আসুন আমরা প্রয়োজন ছাড়া মোবাইল ব্যবহার বন্ধ করি। পরিবার-পরিজনের কাছে মোবাইল ব্যবহারের কুফলগুলো তুলে ধরি।

লেখক পরিচিতিঃ
লেখক ও সাংবাদিক
মোঃ মিজানুর রহমান

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment