করোনায় ঝুঁকিতে পড়েছে রপ্তানি খাত

বিশ্ব অর্থনীতির মন্থর গতিতে ঝুঁকিতে পড়েছে দেশের পুরো রপ্তানি খাত। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রথম আট মাসে রপ্তানি আয় কমেছে পূর্বের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১১২ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ। স্থানীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা।

বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) প্রকাশিত রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত আট মাসে প্রবৃদ্ধি কমেছে প্রায় ৫ শতাংশ। বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রপ্তানি আয়ের শীর্ষ খাত পোশাকের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমেছে, একই সঙ্গে নতুন সংকট হয়ে এসেছে করোনাভাইরাস। তাদের মতে, রপ্তানি আয়ে ধারাবাহিক পতনে চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না। এমনকি এপ্রিল-মে থেকে প্রবৃদ্ধি আরো কমার আশঙ্কা রয়েছে।

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবদ্ধি এমনিতে ঝুঁকিতে, এর মধ্যে করোনাভাইরাস নতুন সংকট তৈরি করেছে। এ ছাড়া আমাদের রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় খাত পোশাকের ৬৫ শতাংশ যায় ইউরোপে। এখানেও অর্থনৈতিক মন্দাসহ করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ফলে সহজেই বোঝা যাচ্ছে চলতি অর্থবছরের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না। করণীয় জানতে চাইলে ড. রায়হান বলেন, চটজলদি কিছু করার নেই। তবে কাঁচামাল আমদানিতে চীনের বিকল্প উৎস খুঁজতে হবে। সরকারের নীতি সহায়তা হিসেবে রপ্তানিতে ডলারের বিপরীতে সাময়িক টাকার অবমূল্যায়ন করা যেতে পারে।

ইপিবি প্রকাশিত এ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত আট মাসে পণ্য রপ্তানি হয়েছে দুই হাজার ৬২৪ কোটি ডলারের। আলোচ্য সময়ে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন হাজার সাত কোটি ডলারের। অর্থাৎ আলোচ্য সময়ে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রপ্তানি কমেছে প্রায় ১৩ শতাংশ বা ৩৮২ কোটি ডলারের। অন্যদিকে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে রপ্তানি কমেছে প্রায় পৌনে ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে চার হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। সেই হিসেবে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে অর্থবছরের বাকি চার মাসে রপ্তানি করতে হবে এক হাজার ৯২৬ কোটি ডলারের পণ্য। যা অনেকটা অসম্ভব।

গার্মেন্ট রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন, বিশ্বব্যাপী ভ্রমণ কমে যাওয়ায় অনেক দেশেই পর্যটক কমে গেছে। ফলে সেসব দেশে পোশাকের চাহিদাও কমছে। গার্মেন্টশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, ‘এরই মধ্যে পিভিএইচ, রাল্ফ লরেনসহ বেশ কিছু ব্র্যান্ডের খুচরা দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অনেক স্পোর্টসের ব্র্যান্ড ৮০ শতাংশ লোকসান গুনেছে। ফলে তা আমাদের রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অন্যদিকে চীন থেকে আমদানিনির্ভর অনেক অ্যাকসেসরিজের দাম ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যাওয়ায় এখানে উৎপাদন খরচও বেড়েছে। সব মিলিয়ে আগামী দিনগুলোতে আরো বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে।’

ইপিবির পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত আট মাসে গার্মেন্ট পণ্য রপ্তানি কমেছে সাড়ে ৫ শতাংশ। একই সময়ে বড় খাতের মধ্যে রপ্তানি কমার তালিকায় রয়েছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য ৯ শতাংশ, প্লাস্টিক পণ্য ১.৮ শতাংশ, হিমায়িত মাছ ৪.৩৯ শতাংশ, বিশেষায়িত টেক্সটাইল ১০ শতাংশ, হোম টেক্সটাইল সাড়ে ৭ শতাংশ। তবে এর বিপরীতে আলোচ্য সময়ে রপ্তানি বাড়ার তালিকায় থাকা পাট ও পাটজাত পণ্য সাড়ে ২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ও কৃষিপণ্যে ৩.৮৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এসেছে।

নিট পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএর সিনিয়র সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, এরই মধ্যে পোশাকের কিছু কাঁচামাল ও অ্যাকসেসরিজের দাম বেড়ে গেছে। অন্যদিকে করোনার কারণে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যসহ কয়েকটি খাতের রপ্তানিতে ধস নেমেছে। ফলে সার্বিকভাবে রপ্তানিকারকদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। এদিকে আংকটাডের (জাতিসংঘের বাণিজ্য উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা) হিসাব অনুযায়ী, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ২০টি দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ।

আপনি আরও পড়তে পারেন