কাতারে জুলুমের শিকার অভিবাসী শ্রমিকরা

কাতারে জুলুমের শিকার অভিবাসী শ্রমিকরা

কাতারের বিলাসবহুল হোটেলগুলো অভিবাসী শ্রমিকদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ। লন্ডনভিত্তিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বিজনেস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস রিসোর্স সেন্টারের বার্ষিক প্রতিবেদন বলছে, এসব কর্মী নিপীড়ন ও জবরদস্তিমূলক কাজের শিকার।

গতকাল বুধবার প্রকাশিত ‘চেকড আউট: মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কার অ্যাবিউজ ইন কাতার’স ওয়ার্ল্ড কাপ লাক্সারি হোটেলস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, হোটেলগুলোতে অভিবাসী কর্মীরা ‘অবৈধ নিয়োগ ফি, বৈষম্য, হুমকি ও ভয়ের কারণে এসব কাজে আটকা পড়ে ভুগছে’।

অভিবাসী কর্মীদের দিয়ে জোরপূর্বক এসব কাজ করার বিষয়ে জানতে চাইলে কাতার সরকার প্রতিক্রিয়ায় বলছে, সরকারি নীতি ‘লঙ্ঘনকারী সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির আওতায় কারাবাসের সাজাসহ কঠোর শাস্তি প্রদান করে থাকে।’

কাতার সরকারের কমিউনিকেশন্স অফিস (জিসিও) বিবৃতিতে বলেছে, ‘কাতার শ্রমের মান উন্নয়নে এবং সকল শ্রমিকের অধিকার রক্ষায় বড় ধরনের সংস্কারের কার্যক্রম চালু করেছে। এর মধ্যে রয়েছে নতুন জাতীয় ন্যূনতম মজুরি, দেশ ছাড়ার ক্ষেত্রে অনুমতির বাধ্যবাধকতা বাতিল, চাকরি পরিবর্তনকারী শ্রমিকদের প্রতিবন্ধকতা হ্রাস, নিয়োগে কঠোর নজরদারি, উন্নত আবাসন, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা।’

২০২২ সালে কাতারে ফুটবল বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে। এ জন্য দেশটিতে বড় বড় স্টেডিয়ামের পাশাপাশি হোটেল শিল্পখাত ব্যাপকহারে প্রসারিত হচ্ছে। খেলোয়ার, সমর্থক ও গণমাধ্যমের জন্য অতিরিক্ত ২৬ হাজার হোটেল কক্ষের চাহিদা তৈরি হওয়ার এই প্রসারণ।

স্টেডিয়াম নির্মাণসহ পর্যটন শিল্পে অতিরিক্ত চাহিদা পূরণে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ করছেন অভিবাসী শ্রমিকরা। তাদের বেশিরভাগই পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শ্রমিক। তারা যে নিগ্রহের শিকার হচ্ছে, এমন প্রতিবেদনে আগেও প্রকাশিত হয়েছে।

লন্ডনভিত্তিক অধিকার সংস্থাটি কাতারে ৮০টি সম্পত্তি থাকা শতাধিক বৈশ্বিক ব্র্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করে এমন ১৯টি হোটেল কোম্পানির ওপর এই জরিপ চালিয়ে দেখেছে, জোরপূর্বক কাজ করা শ্রমিকদের এ থেকে মুক্তি ও বিষয়টি নিরসনে পদক্ষেপের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে।

বিজনেস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস রিসোর্স সেন্টার অংশীদারের মাধ্যমে এসব জায়গায় কাজ করে এমন অভিবাসী শ্রমিকদের সাক্ষাতকার নিয়েছে। সেখানে শ্রমিকরা যা জানিয়েছেন, সে অনুযায়ী প্রতি ১৮ জন শ্রমিকের ৮ জন নিয়োগ পেতে অতিরিক্ত অনেক ফি দিয়েছেন।

রান্নার কাজ করেন কেনিয়ার এমন একজন শ্রমিক বিজনেস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস রিসার্স সেন্টারকে বলেন, ‘চাকরির নিশ্চয়তা পেতে আমাকে এক হাজার ডলার কমিশন দিতে হয়েছে। আমি এখনো সেই ঋণ শোধ করতে পারিনি। কেউ এসব বিষয় শুনতে চায় না।’

আফ্রিকা ও এশিয়ার প্রতি ১৮ জনের মধ্যে ১০ জন শ্রমিক বলছেন, তাদের বেতন ও অবস্থান কি হবে তা নির্ভর করে তারা কোন দেশের নাগরিক। এছাড়া সাবকন্টাক্টে যারা নিয়োগ পেয়েছেন, তারা অন্যদের থেকে কম বেতন পান এবং জুলুমের শিকারও হন সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া, বেতন দিতে বিলম্ব করা ছাড়াও আরও নানা ধরনের ঝুঁকি ও হুমকির মুখে থাকেন তারা।

বিজনেস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস রিসোর্স সেন্টারের ওই প্রতিবেদনে অনুযায়ী, কাতার শ্রমিকদের চাকরি পরিবর্তন সংক্রান্ত অনাপত্তিপত্র বা কাফালা পদ্ধতি বাতিলের যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিলেও শ্রমিকরা চাকরি পরিবর্তন করতে পারেন না। করতে চাইলে ভয় দেখানো হয়।

প্রায় সব অভিবাসী শ্রমিক চাকরি বদল করতে চান এমন অনুরোধ তাদের নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে করতে ভয় পান। ফলে ভালো সুযোগ থাকলেও চাকরি বদল করতে পারেন না তারা। অনেকে তাদের দেশের ফেরত পাঠানো হবে এমন ভয়ে তটস্থ থাকেন। চাকরিদাতাদের হাতে জিম্মি হয়ে গেছেন তারা। তাদের দিয়ে যেভাবে ইচ্ছা, সেভাবে কাজ করানো হচ্ছে। এটা করতে বাধ্যও হচ্ছেন এসব শ্রমিক।

আপনি আরও পড়তে পারেন