কুড়িগ্রামের বনায়ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

 কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ ২৬-০৯-১৮ কুড়িগ্রামের বনায়ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। প্রকল্প এলাকায় নাম মাত্র চারা রোপন করে আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। দুদকে নিকট আতœীয় চাকরি করা এবং চিলমারীতেই বাড়ি হওয়ার সুবাদে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে চলছেন বনবিভাগের কর্মকর্তা ফজলুল হক। কুড়িগ্রাম বন বিভাগ সূত্রে জানাযায়, রংপুর অঞ্চলে টেকসই উন্নয়ন সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে প্রায় ৩৮লাখ টাকা ব্যয়ে জেলার ৭টি উপজেলার ২৫৩কি.মি. স্ট্রিপ (সিডলিং) বাগান করার জন্য ২লাখ ৫৩হাজার ফলজ, বনজ ও ঔষধি চারা বরাদ্দ দেয়া হয়। এরমধ্যে নাগেশ^রী ও ফুলবাড়িতে ১০০কি.মি. পথে এক লাখ চারা, ভূরুঙ্গামারী ও উলিপুরে ৮০কি.মি.পথে ৮০হাজার চারা, রৌমারীতে ৩৩কি.মি. পথে ৩৩হাজার, এবং সদর ও চিলমারীতে ৪০ কি.মি. পথে ৪০ হাজার চারা লাগানো হয়েছে। প্রতি কি.মিটারে এক হাজার চারাসহ রোপনের জন্য ১৫হাজার টাকা খরচ ধরা হয়েছে। রোপনকৃত গাছ পাহারাদার হিসেবে প্রতি কি.মিটারে একজনকে ২হাজার টাকা করে ২ বছরের জন্য নিয়োগ দেয়া কথা রয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় উলিপুর ও চিলমারী উপজেলায় ৬০কি.মি. রাস্তার দুই ধারে ৬০হাজার বনজ, ফলজ ও ভেষজ প্রজাতির গাছ লাগানো নামমাত্র লাগিয়ে অর্থ আতœসাত করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বন বিভাগ কর্মকর্তার ফজলুল হকের বিরুদ্ধে। সরেজমিনে দেখা যায়, চিলমারী উপজেলা থানাহাট ইউনিয়নের পেট্রল পাম্প মোড় থেকে জলিল চেয়ারম্যানের বাড়ী হয়ে রাণীগঞ্জ পর্যন্ত প্রকল্প দেখানো হলেও বাস্তবে কোন চারা লাগানো হয়নি। নরশিংভাজ(শখেরহাট) বাজার থেকে নজির হোসেনের বাড়ী পর্যন্ত প্রায় ১কিঃমিঃ, কাদের ফকিরের বাড়ী থেকে ফকিরের ভিটা পর্যন্ত প্রায় ১কিঃমিঃ এবং নজির হোসেনের বাড়ী থেকে অধিকারী পাড়া পর্যন্ত প্রায় আধা কিঃমিঃ রাস্তার দু’ পাশে চারা লাগানো হলেও দেয়া হয়নি কোন সার এমনকি বনজ, ফলজ ও ঔষধি গাছের অনুপাতও মানা হয়নি। দেখাশোনা , পরিচর্যা এবং পানির অভাবে চারাগুলি ইতোমধ্যে মরে গেছে। সব মিলে ২০কিঃ মিঃ প্রকল্পের মধ্যে মাত্র প্রায় ৩ কিঃ মিঃ রাস্তায় নামে মাত্র চারা লাগিয়ে প্রকল্পের সমুদয় টাকা আত্মসাত করা হয়েছে। অপরদিকে কাগজে-কলমে পাহারাদারের নিয়োগ দেখানো হলেও বাস্তবে প্রকল্প এলাকায় কাউকে দেখা যায়নি। একই অবস্থা উলিপুর উপজেলার হাসপাতাল রোডেও। বাবুরহাট,গাবের তল,আমিন বাজারসহ প্রকল্পের অধিকাংশ জায়গায় গাছ লাগালেও একই অবস্থা বলে জানা যায়। নরশিংভাজ এলাকার মজিবর রহমান(৫৫), লিটন মিয়া(৩০), ফাতেমা বেগম(৫০),মজিরন (৪৮) মাহফুজার রহমান(৪০)সহ অনেকে জানান, দু’মাস আগে বনবিভাগ থেকে এ এলাকায় কিছু ইউক্লিপটাস গাছের চারা লাগানো হলেও তা পরিচর্যার কোন লোক দেখা যায়নি। অধিকাংশ গাছ মরে গেছে। এখানে কোন ফলজ, বনজ, ঔষধি গাছ লাগানো হয়নি। ইউক্লিপটাস গাছ লাগানোর কারণে এখানে কৃষি জমির অনেক ক্ষতি হবে। অথচ বাধা দেবার পরেও তারা মামলা করার হুমকি দিয়ে গাছ গুলি লাগিয়েছে। ফলের গাছ লাগালেও এলাকার উপকার হতো। বনবিভাগের নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকেই জানান, ফজলুল হক তার নিজ এলাকায় চাকুরি করে আসছেন। তার শ্যালক ঢাকায় দুদকে চাকরি করে। সেই প্রভাব খাটিয়ে চলে ফজলুল হক। এর সত্যতা মেলে ফজলুল হকের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি তার ফোন থেকে দুদকে চাকুরিত তার শ্যালকের সাথে কথা বলিয়ে দেন। তার এই প্রতিবেদককে সংবাদটি প্রকাশ না করার জন্য সুপারিশ করেন। উলিপুর- চিলমারী বন বিভাগে কর্তব্যরত ফরেষ্টার ফজলুল হক তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, সরকার শ্রমিকদের জন্য ১৫০টাকা হাজিরা বরাদ্দ দিয়েছে। আমি সেখানে ৩৫০ টাকা করে হাজিরা দিচ্ছি। দু’বছরের জন্য গাছ পাহারাদার নিয়োগ দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন আপনারাতো প্রকল্পের মূল জায়গায় যাননি। শখের হাটে পাহারাদার না থাকার বিষয়টি এড়িয়ে যান। তবে উলিপুর-চিলমারীতে গাছ বিনস্ট হবার বিষয়ে তিনি বলেন, বিনস্ট হয়নি আমিই গাছ বৃদ্ধি করে দিবো। এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম বনবিভাগ কর্মকর্তা এ জেড এম ইকবাল হুসাইন খান বলেন, ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরের বৃক্ষ লাগানো শেষ হয়েছে দাবী করেন। এখন পরিচর্যার পথে রয়েছে। চিলমারীর অভিযোগের ভিত্তিতে পুনরায় বৃক্ষ রোপনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে ওই কর্মকর্তাকে। তিনি আরো জানান প্রতি অর্থ বছরে জুন পাশে শূণ্য স্থান পুরনের জন্য ১০% টাকা সরকার বরাদ্দ দেয়। ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে পুনরায় বনায়ন করার জন্য নাগেশ^রী ও ফুলবাড়িতে ১৫কি.মি. এবং ভূরুঙ্গামারীতে ১০কি.মি. রাস্তার জন্য ৪০হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এছাড়াও বৃক্ষ রোপন শ্রমিকদের জন্য ৩শ টাকা বরাদ্দ থাকলেও তাদের দেয়া হচ্ছে ৩৫০টাকা করে দিন হাজিরা।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment