কৃষিক্ষেত্রে আজও ফুরায়নি লাঙ্গলের ব্যবহার

কৃষিক্ষেত্রে আজও ফুরায়নি লাঙ্গলের ব্যবহার

Brand Bazaar

বিশ্ব কবির ভাষায় বলতে হয়, ‘চাষী খেতে চলাইছে হাল তাঁতি বসে তাঁত বোনে, জেলে ফেলে জাল বহুদূর প্রসারিত এদের বিচিত্র কর্মভার তারি পরে ভর দিয়ে চলিতেছে সমস্ত সংসার’। তাই হাল, লাঙ্গল, মই আদিকাল থেকে কৃষি কাজে ব্যবহৃত বহুল প্রচলিত যন্ত্র। বীজ অথবা চারা রোপণের জন্য জমির চাষের ক্ষেত্রে গরুর হাল ব্যবহার করা হয়ে থাকে আর ওই মাটিকে সমান করার জন্য প্রয়োজন হয় মই। কৃষি কাজে ব্যবহৃত অন্যতম এই পুরনো যন্ত্র দিয়ে জমি চাষ উপযোগী করার জন্য ষাঁড়, মহিষের প্রয়োজন হতো। পুরানো লাঙ্গল দিয়ে হালচাষ করতে কমপক্ষে একজন লোক ও একজোড়া গরু অথবা মহিষ প্রয়োজন হয়।

কৃষিক্ষেত্রে আজও ফুরায়নি লাঙ্গলের ব্যবহার

কিন্তু বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রেরযুগে যন্ত্রদিয়ে জমি চাষের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বংলার এই ঐতিহ্যবাহি গরুর লাঙ্গল। বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ এই দেশের প্রায় ৮০% লোকের জীবিকা কৃষি কাজের ওপর নির্ভর। তবে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক হিসেবে হাজার বছরের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা লাঙ্গল-জোয়াল, ফাল, দা, কাস্তে, খুনতি, মই, গরু, মহিষ আজ বর্তমান যুগে ও মানুষের দৈনন্দিন জীবনে এখনও ব্যবহৃত হতে দেখা যাচ্ছে। চিরায়ত বাংলার লোকজ যন্ত্রপাতির সন্ধান করতে গেলে কৃষি কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন উপকরণের মধ্যে হালের গরুর লাঙ্গল অন্যতম।

গতকাল লালপুর উপজেলার ওয়ালিয়া মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, গরুর লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষের দৃশ্য। এ সময় ওয়ালিয়া গ্রামের আবুল হোসেন, রান্টু আলী, রবিউল ইসলাম, আমির হোসেন, আনছার আলীসহ অনেক কৃষকের সঙ্গে কথা বললে তারা  বলেন, বাংলাদেশের মানচিত্রে সবচেয়ে উষ্ণ ও কম বৃষ্টি পাতের এলাকা হিসেবে পরিচিত এই লালপুর উপজেলা ৬০% মানুষের অন্যতম পেশা কৃষি এক সময় এই অঞ্চল মানুষদের সকাল হতো লাঙ্গল-জোয়াল আর হালের গরুর মুখ দেখে। আধুনিক যন্ত্র যুগে এখন সেই জনপথের মানুষদের ঘুম ভাঙে হালচাষ যন্ত্র ‘পাওয়াট্রিলার’ এর শব্দে। এইতো কিছু দিন আগের কথা যখন এই অঞ্চলের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই গরু লালন-পালন করা হতো। এই গরুগুলো ছিলো পরিবারের এক একটা সদস্যের মতো। তাজা ঘাস আর ভাতের মাড়-খৈল, ভুসি ইত্যাদি খাইয়ে সবল করে তোলা হতো হালের জোড়া বলদদের, আবার তাদের দিয়ে বিঘার পর বিঘা জমি চষে বেড়াতেন কৃষকরা আর মনের সুখে গান গাইতেন ‘বাড়ির পাশে বেতের আড়া হাল জুড়াইছে ছোট্ট দেওরা রে, এতো বেলা হয় ভাবিজান পান্তা নাই মোড় ক্ষেতে রে’। গ্রামীণ জনপথে জমিগুলোতে এই ভাবেই চাষাবাদ করা হতো। বর্তমানে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার কৃষি ক্ষেত্রে অনেক সাফল্য নিয়ে এসেছে স্বীকার করে তারা বলেন, যে কৃষক গরু দিয়ে হাল চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতো কালক্রমে তারা পেশা বদল করে অন্য পেশায় ঝুঁকছেন। তবে ক্ষেত্র সমীক্ষায় দেখা যায়, এখনো এই অঞ্চলের অনেক কৃষক জমি চাষের জন্য লাঙ্গল-জোয়াল, গরু আর মই দিয়ে চাষ পদ্ধতি টিকিয়ে রেখেছেন।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment