কোনো মানুষ যেন টিকা থেকে বাদ না থাকে : প্রধানমন্ত্রী

কোনো মানুষ যেন টিকা থেকে বাদ না থাকে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু করেছি। দেশের প্রত্যেক মানুষ যাতে এই ভ্যাকসিন নিতে পারে, সেজন্য যত দরকার আমরা তা ক্রয় করবো। কোনো মানুষ যেন ভ্যাকসিন নেওয়া থেকে বাদ না থাকে, সেভাবেই আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি।

রোববার (১৮ জুলাই) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মন্ত্রণালয় বা বিভাগগুলোর ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) স্বাক্ষর এবং ‘এপিএ ও শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান-২০২১’- এ অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে করোনার এ পরিস্থিতিতে সবাই যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে, সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব। কারণ যেভাবে কাজগুলো হচ্ছে প্রত্যেকটা মন্ত্রণালয় নিজেদের ভেতরে একটা উৎসাহ-উদ্দীপনা আছে এবং সবচেয়ে যেটা ভালো লাগে, আগে যেমন ‘সরকারি মাল দরিয়া মে ঢাল’ একটা ভাব ছিল, সেটা এখন  নেই।

সরকারপ্রধান বলেন, জাতির পিতার নির্দেশনাগুলো আপনারা যদি একবার দেখেন, তাহলে দেখবেন তিনি প্রত্যেকটা জিনিস বলে গেছেন। আপনাদের দায়িত্ব জনগণের সেবা করা। কারণ আমার দেশের কৃষক মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল উৎপাদন করে। সেই ফসল খেয়েই তো আমাদের জীবন বাঁচে। আমার দেশের শ্রমিকরা শ্রম-ঘাম দিয়ে যে উৎপাদন করে সেটাই তো আমাদের আর্থিক সঙ্গতি। দেশের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের অবদানটা আমরা ছোট করে দেখতে পারি না, কোনো কাজই ছোট না।

পরিবারিক শিক্ষার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ছোটবেলা থেকে আমাদের শিখিয়েছে, রিকশাওয়ালাকে আমরা কখনও তুমি বলতে পারতাম না। আমাদের আপনি বলতে হবে। বাড়ির ড্রাইভারকে ড্রাইভার সাহেব বলে ডাকতে হবে। কাজের লোককে আমরা কখনো ‘চাকর-বাকর’ বলে এই শব্দ উচ্চারণ করতে পারতাম না এবং এটা নিষিদ্ধ ছিল। বয়স্ক হলে তাদের আপনি বলে এবং তাদের একটা আত্মীয়তার সম্মানজনক সম্বোধন আমাদের করতে হতো। এটাই বাবা-মা আমাদের শিখিয়েছেন।

কাজেই যেকোন কাজকে নিজের করে নেওয়া, নিজের মতো চিন্তা করা, অর্থ্যাৎ ওন করা। বিশেষ করে ২০০৯ এ সরকার গঠন করার পর থেকে এ পর্যন্ত আমি যেটা সর্বক্ষেত্রে লক্ষ্য করেছি আমাদের যারা প্রশাসনে আছেন, আইনশৃঙ্খলায় আছেন অথবা আমাদের সশস্ত্র বাহিনীতে আছেন বা অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রত্যেক ক্ষেত্রে যারা স্ব স্ব কর্মরত, প্রত্যেকের ভেতর কিন্তু এই পরিবর্তনটা এসেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, সবাই কিন্তু আমাদের দেশের কাজগুলো, যেগুলো জাতির জন্য, যেটা মঙ্গলের জন্য, জনগণের জন্য সে কাজগুলোকে ওন করেছে অর্থ্যাৎ আপন বলে গ্রহণ করে, সবার দায়িত্বগুলো গ্রহণ করে আপনারা তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। আর সেই বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন বলেই এতো অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ সফলতা অর্জন করতে পেরেছে।

জাতির পিতা স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে রেখে গিয়েছেন ১৯৭৫ সালে। আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশ হতে পেরেছি। এই অল্প সময়ে যে উন্নতিটা অর্থ্যাৎ ২০০৯ থেকে ২০২১; এর মধ্যে যে উন্নতিটা, এর মধ্যে কিন্তু আমাদের সেই অর্জনগুলো হয়েছে। আজকে সারাবিশ্বে বাংলাদেশ একটা সম্মানজনক অবস্থানে এসেছে। আগে আমরা বাইরে গেলে শুনতাম, বাংলাদেশকে শুনলেই বলত দুর্ভিক্ষের দেশ, ঘূর্ণিঝড়ের দেশ, জলোচ্ছ্বাসের-প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ এখন আর সেটা বলে না কিন্তু। ভিক্ষা চাওয়ার দেশ না এখন আমরা। কারণ জাতির পিতা বলেছেন, ভিক্ষুক জাতির ইজ্জত থাকে না। সেটাই আমাদের লক্ষ্য ছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ যেন আমাদের অবহেলা করতে না পারে। যেটুকু সম্পদ আছে সেটা দিয়েই আমরা এগিয়ে যাব। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি এবং এই এগিয়ে যাওয়ার পথে আপনারাই হচ্ছেন সবথেকে বড় চালক। সেজন্য মন্ত্রণালয়ের সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সদস্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পুরস্কার ও সম্মাননাপত্র তুলে দেন এবং এপিএ প্রতিবেদন গ্রহণ করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবসহ অন্যান্যরা।

আপনি আরও পড়তে পারেন