কয়েক যুগ ধরে পরিত্যাক্ত অবস্থায় শাখা খাদ্য গুদাম

Sony 4K TV

কোন মতে টিকে আছে
কয়েক যুগ ধরে পরিত্যাক্ত অবস্থায় শাখা খাদ্য গুদাম \ বঞ্চিত হচ্ছে হাজার হাজার কৃষক
নওগাঁ প্রতিনিধি: বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার পূর্বাঞ্চল আবাদুপুকর। জেলার দ্বিতীয় বৃহত্তম ধানের হাটও বলা হয় এই আবাদপুকুর হাটকে। এই অঞ্চলটি ধান চাষের জন্য বিখ্যাত। আশির দশকে এই অঞ্চলের ধান সংগ্রহ ও সংরক্ষনের কথা চিন্তা করে তৎকালীন সরকার আবাদপুকুরে একটি টিপিসি (সাময়িক ক্রয় কেন্দ্র) শাখা খাদ্য গুদাম নির্মাণ করেছিলো যা বর্তমানে পরিত্যক্ত। এতে করে এই অঞ্চলের হাজার হাজার কৃষক তাদের উৎপাদিত ধানের নায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন যুগের পর যুগ।

উপজেলা খাদ্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, আশির দশকে তৎকালীন সরকার উপজেলার আবাদুপুকুর ও তার আশেপাশের এলাকার কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ এবং সংরক্ষনের উদ্দ্যেশ্যে আবাদুপুকুর হাট সংলগ্ন স্থানে সিলমাদার মৌজায় ১একর ৮৪শতাংশ খাস জায়গার উপর টিপিসি (সাময়িক ক্রয় কেন্দ্র) শাখা খাদ্য গুদাম নির্মাণ করে। এটি নির্মাণের কয়েক বছর পর অদৃশ্য কারণে সরকার তা বন্ধ করে দেয় এবং কয়েক বছর পর এটিকে পরিত্যাক্ত ঘোষনা করা হয়। এরপর কয়েক যুগ কেটে গেলেও পরবর্তিতে আর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় বর্তমানে গুদামের ভবনটি ক্ষত বিক্ষত দেহ নিয়ে কোন মতে টিকে আছে। এটি বর্তমানে এই অঞ্চলের মাদক সেবক ও ব্যবসায়ীদের অভয়ারন্যে পরিণত হয়েছে। আর এর আশেপাশের সকল জায়গা লিজ নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে বসতি। আবাদপুকুর থেকে রাণীনগর খাদ্য গুদামের দূরত্ব প্রায় ১৫কিলোমিটার। সরকারের ঘরে ধান দেওয়ার জন্য কৃষকদের এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বাড়তি ভাড়াসহ অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হচ্ছে প্রতিবছর। যার কারণে সরকারের ঘরে ধান দেওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে এই অঞ্চলের কৃষকরা। তাই তারা বাধ্য হয়েই আবাদপুকুর হাটেই কম দামে ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের কাছে ধান বিক্রয় করছেন। যার কারণে কৃষকরা বছরের পর বছর ধানসহ অন্যান্য কৃষি পণ্যের নায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন। যদি এই শাখা গুদামটি চালু থাকতো শুধু আবাদপুকুর নয় পাশের বগুড়া জেলার আদমদীঘি, নন্দীগ্রাম উপজেলা, নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলা ও নওগাঁর আত্রাই উপজেলার কয়েক হাজার কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ধান সঠিক মূল্যে সরকারের ঘরে খুব সহজেই সরবরাহ ও সংরক্ষন করতে পারতো। এতে করে এই অঞ্চলের কৃষকরা অধিক লাভবান হতো।

আবাদপুকুর বাজারের ব্যবসায়ী রুহুল আমীন বলেন, আবাদুপুকুর এলাকায় নতুন করে একটি খাদ্যগুদাম নির্মাণের জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছি। উপজেলার সিংহভাগ ধানই উৎপাদন হয় এই অঞ্চলে। এখানে যদি নতুন করে আধুনিক মানের খাদ্যগুদাম নির্মাণ করা হয় তাহলে উপজেলার একমাত্র খাদ্যগুদামে চাপ অনেকটাই কমতো এবং মজুদের ধারন ক্ষমতাও বৃদ্ধি পেতো। যার কারণে দ্বিগুন সংখ্যক কৃষক সরকারের ঘরে ধান দেওয়ার সুযোগ পেতো। তাই এই বিষয়ে সরকারের দ্রæত পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। যে ভাবে প্রতিবছর ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে করে উপজেলার আবাদুপুকর এলাকায় আর একটি নতুন খাদ্যগুদাম নির্মাণ করা খুবই প্রযোজন। এতে করে এই অঞ্চলের কৃষকের জীবন মান পাল্টে যাবে।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম সরকার জানান, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক প্রয়াত স্থানীয় সাংসদ ইসরাফিলের মাধ্যমে আবাদুপুকুরের এই পরিত্যাক্ত শাখা খাদ্যগুদামে নতুন করে একটি খাদ্যগুদাম নির্মাণের জন্য একটি চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। সরকার এটি অনুমোদন এবং অর্থ বরাদ্দ দিলেই খাদ্যগুদাম নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে। প্রতি বছর ধানের উৎপাদন যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তার প্রেক্ষিতে উপজেলার আবাদুপুকুর এলাকায় নতুন করে একটি খাদ্যগুদাম নির্মাণ করা খুবই জরুরী। উপজেলার ছোট্ট খাদ্যগুদামে জায়গা সংকট হওয়ার কারণে অনেক সময় ধান গুদামের বাহিরে পিল দিয়ে রাখতে হয়। আর নতুন করে একটি খাদ্যগুদাম নির্মাণ করা হলে এই উপজেলাসহ আশেপাশের কয়েকটি উপজেলার হাজার হাজার কৃষক উপকৃত হবেন।

বিকাশ চন্দ্র প্রাং
নওগাঁ।

আপনি আরও পড়তে পারেন