চেন্নাইয়ের ভেলোরে চিকিৎসা করাতে চান? জেনে নিন ভেলোরের খুঁটিনাটি!

চেন্নাইয়ের ভেলোরে চিকিৎসা করাতে চান? জেনে নিন ভেলোরের খুঁটিনাটি!

প্রতি বছর বাঙালীরা চিকিৎসার জন্য ভিড় জমায় ভেলোর। যাকে আমরা ভেলোর বলে চিনি সেই হাসপাতালের আসল নাম হল “Christian Medical College & Hospital(CMC)”।এই হাসপাতালটি তামিলনাডুর ভেলোরে অবস্থিত। সেই কারনে আমাদের কাছে এই হাসপাতাল ভেলোর নামে বেশি পরিচিত। ভারতে চিকিতসা জগতে দিল্লি, মুম্বাই, ব্যাঙ্গালোর, চেন্নাই ইত্যাদি স্থানের মহত্ব আমরা জেনে থাকলেও বাঙালীরা তামিলনাডুর ভেলোর কেই বোধহয় বেশি ভরসা করি। এটি হল ভেলোর এর বিখ্যাত CMC হসপিটাল। শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের বাঙালীরা নয়, বাংলাদেশ থেকে অসংখ্য মানুষ এই ভেলোরে চিকিৎসা করাতে যান। এতো বাঙালী এখানে যান বলে এখানে বাঙালী খাবারের অভাব হবে না।

এই খ্যাতির কারণ অবশ্যই এখানকার বিশ্বমানের চিকিতসা, উন্নত টেকনোলজি, যন্ত্রপাতি এবং অত্যাধুনিক প্যাথলজিোলজিসেই কারনেই বাংলাদেশ, পাকিস্তান সহ অনেক দেশ এমনকি প্রায়শই চিনের নাগরিকও এসে থাকেন এখানে চিকিৎসা করাতে। কিন্তু যারা ভাবছেন প্রথম বারের জন্য ওখানে চিকিৎসা করাতে যাবেন, তাদের আগে সবকিছু জেনেশুনে তারপর যাওয়া উচিত। নাহলে সেখানে গিয়ে বিপদে পড়তে পারেন। আজ আমরা আলোচনা করব সেখানে যাওয়ার ট্রেন, খরচ, থাকা-খাওয়া, মেডিসিন, এবং Appointment নিয়ে। সুতরাং যারা ভাবছেন ওখানে গিয়ে চিকিৎসা করাবেন তাঁরা জেনে নিন ভেলোরের খুটিনাটি।

যাবেন কিভাবে – 

কলকাতা থেকে ভেলোরের দূরত্ব প্রায় ১৭১২ কিমি। ট্রেনে করে যেতে চাইলে আপনাকে কাটপাডি জংশনে (Katpadi Jn) নামতে হবে।  হাওড়া থেকে কাটপাডি যাওয়ার অনেক ট্রেন পেয়ে যাবেন। সময় লাগবে ২৫ থেকে ২৯ ঘন্টার মতো। কাটপাডিতে নেমে অনেক গাড়ি পেয়ে যাবেন ভেলোর যাওয়ার জন্য। কাটপাডি থেকে ভেলোরের দূরত্ব প্রায় ৮ কিলোমিটারের মতো। ফ্লাইটে যেতে চাইলে আপনাকে নামতে হবে চেন্নাই এয়ারপোর্টে। চেন্নাই থেকে ভেলোর গাড়িতে লাগবে ২ ঘন্টার মতো। মানে ফ্লাইটে গেলে আপনার সময় লাগবে কমপক্ষে ৫ ঘন্টা।

Appointment – 

অফলাইন এবং অনলাইন দুই ভাবেই এখানে appointment নেওয়া সম্ভব। মানে আপনি ওখানে যাওয়ার কিছুদিন আগে অনলাইনে CMC-র ওয়েবসাইটে গিয়ে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করাতে পারেন অথবা সরাসরি ভেলোরে গিয়েও appointment করাতে পারেন। তবে যেহেতু অনেক দূর থেকে যাচ্ছেন তাই অনলাইন appointment করাই সবচেয়ে ভালো হবে। ওখানে গিয়ে appointment করালে অনেক বেশি দিন ওখানে থাকতে হবে। আর বেশিদিন থাকা মানে খরচ বেড়ে যাওয়া।

Online appointment –

অত্যন্ত ভীড় এর জন্য যে কোনো ডিপার্টমেন্টের প্রাইভেট appointment পেতে হলে কমপক্ষে ১৫ দিন থেকে ৩ মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। সেইজন্য ভেলোরে যাওয়ার ১৫ দিন  থেকে ৩ মাস আগে অনলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে। অনলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে চাইলে আপনাকে আগে জানতে হবে আপনার এই রোগের জন্য কোন ডিপার্টমেন্টে চিকিৎসা করাতে হবে। সেই চিকিৎসার স্পেশালিষ্ট চিকিৎসক আপনাকে অনলাইনে বেছে নিতে হবে। অনলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে চাইলে আপনাকে CMC ভেলোর এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে। CMC ভেলোরের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট হল – www.clin.cmcvellore.ac.in

Offline appointment –

ভেলোর এর মেন গেটে ঢুকলেই দেখতে পাবেন “Silver Gate For New Appointment ” বলে বড় করে লেখা রয়েছেন। সেখানে গিয়ে আপনি আপনার প্রবলেমটা জানালেই ওরা নির্দিষ্ট ডিপার্টমেন্টে appointment দিয়ে দেবে। তবে এক্ষেত্রে আপনি ৩ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে প্রাইভেট appointment পেয়ে যাবেন। সুতরাং অফলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিলে আপনাকে অনেক ভেলোরে অনেক দিন থাকতে হতে পারে। তাই আমরা পরামর্শ দেব অফলাইনের ভরসায় না থেকে আগে থেকে অনলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করিয়ে তবেই ভেলোরের উদ্দেশ্যে রওনা হোন। এতে আপনার টাকা এবং সময় উভয়ই বাঁচবে।

Appointment এর প্রকারভেদ –

অ্যাপয়েন্টমেন্ট মূলত দুই প্রকারের হয়ে থাকে। যেমন জেনারেল অ্যাপয়েন্টমেন্ট এবং প্রাইভেট অ্যাপয়েন্টমেন্ট।

General appointment –

আপনি যদি জেনারেল অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে থাকেন তাহলে জুনিয়ার ডক্টররা রুগী দেখে। সেই কারনে জেনারেল অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেয়ে যাবেন অনেক কম সময়ে। জেনারেল অ্যাপয়েন্টমেন্ট অনলাইন বা অফলাইনে করা যায়। মোটামুটিভাবে ১ থেকে ৩ দিনের মধ্যে এই জেনারেল appointment পেয়ে যাবেন।

Private appointment –

আপনি যদি প্রাইভেট অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেন তাহলে সিনিয়র ডক্টররা রুগী দেখেন। তবে এখান থেকে গেলে অবশ্যই প্রাইভেট appointment নেওয়া উচিত। সিনিয়ার ডাক্তাররা দেখলে চিকিৎসা ভালো হয়।

 

থাকবেন কোথায় –

ভেলোরে থাকার জন্য অনেক লজ পেয়ে যাবেন। ডাবল বা ট্রীপল বেডের রুম পেয়ে যাবেন ৩০০-৪০০ টাকা থেকে ১৫০০-২০০০ টাকায়। তবে চেষ্টা করবেন হাসপাতালের কাছাকাছি থাকার।

 

 

ফার্মেসি –

এখানে সাধারনত রোগীদের তিন মাসের জন্য মেডিসিন দিয়ে থাকে। এখান থেকে ঔষধ কিনে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। কারণ বাইরে সব মেডিসিন নাও পেতে পারেন।

CRISS Card –

এই হাসপাতালে পেমেন্টের জন্য এক ধরনের কার্ড পাওয়া যায়। এই কার্ড একবার বানিয়ে নিলে সেই কার্ডের মাধমেই সব ধরনের পেমেন্ট করতে পারবেন।   এই কার্ড বানালে আপনার হায়রানি কিছুটা কম হবে। আপনার Hospital no ( Patient ID ) বললেই এই CRISS কার্ড বানিয়ে দেবে ৪০২ নম্বর কাউন্টারে। এবং পরবর্তীকালে এই কার্ড সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ এই ৪০২ নম্বর কাউন্টারে এসে করতে পারবেন। এই CRISS কার্ডে আগে থেকে টাকা ভরে রাখতে হবে এই ৪০২ নম্বর কাউন্টার থেকে। টাকা ভরতে পারেন ATM বা Money Transfer এর মাধমে। এই কার্ডের মজা হল এই কার্ডে পেমেন্ট করতে চাইলে আপনাকে বেশিক্ষন লাইনে দাঁড়াতে হবে না। কারণ এই কার্ডে পেমেন্ট কাউন্টার প্রায় সব জায়গায় আছে। এবং এই কার্ডে পেমেন্ট কাউন্টারে লাইনও পড়ে কম।

 

এই প্রতিবেদনটি কাজের মনে হলে লাইক করুন। আরো কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করে জানান। আপনার ফেসবুকের বন্দুদের সাথে শেয়ার করুন যাতে সবাই উপকৃত হয়। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment