চোখ উঠা রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে কিশোরগঞ্জে

চোখ উঠা রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে কিশোরগঞ্জে
মাহফুজ হাসান,কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি:
কিশোরগঞ্জ জেলার প্রতিটি উপজেলাতেই চোখ উঠা রোগের ছড়াছড়ি। রাস্তা ঘাটে বের হলে দেখা মিলছে কালো চশমা পরিহিত মানুষ।  চোখ ওঠা রোগের প্রাদুর্ভাব ব্যপক ভাবে বাড়ছে।
জানা যায়,এ রোগকে বলে কনজাংটিভাইটিস। চোখের কনজাংটিভা নামক পর্দার প্রদাহই চোখ ওঠা রোগ। এ রোগটি মূলত ভাইরাসজনিত এবং ছোঁয়াচে।
চোখ উঠলে আমাদের বেশি আতঙ্কিত হওয়া উচিত নয়। কেননা মেডিকেল রিপোর্ট বলে যে এটা মারাত্মক কোনো রোগ নয় যেটা আপনার শরীরে অঙ্গহানি বা ভয়ঙ্কর রকমের ক্ষতি করবে। বরং মেডিকেল সাইন্স বলছে চোখ ওঠার মাধ্যমে আমাদের ব্রেইনের অনেক উপকার হয়। যে একই কথাটা হাদিস থেকে পাওয়া যায় রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন আমরা চোখ উঠলে অনেক ভয় পেয়ে যায়,তবে এর কোন ভয়ের কারণ নেই। কারণ চোখ ওঠা একটি নেয়ামত। হাদিস অনুযায়ী যার চোখ ওঠা রোগ হয় সে কোনদিন অন্ধ হবে না ।
 ডা. চন্দ্র শেখর মজুমদার এর দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানা যায়,সাধারণত ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার কারণে চোখ ওঠা রোগ হয়। আবার কখনো কখনো অ্যালার্জির কারণেও এ রোগ হয়ে থাকে। যে মৌসুমে বাতাসে আদ্রতা বেশি থাকে, সে সময় এ রোগটা বেশি হয়।
সাধারণত কন্টাক্টের মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়। যেমন: রোগীর ব্যবহৃত জিনিস (গামছা, তোয়ালে, রুমাল) অন্যরা ব্যবহার করলে এ রোগ ছড়ায়। আবার হ্যান্ড টু আই কন্টাক্টের (হাত না ধুয়ে চোখ ছুঁলে) মাধ্যমেও ছড়ায়। অর্থাৎ আক্রান্ত রোগীর ব্যবহৃত জিনিস কেউ ধরার পর যদি না ধুয়ে হাত চোখে দেয়।
সাধারণত ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যেই এ রোগ ভালো হয়ে যায়। তবে, কারো কারো ক্ষেত্রে হয়তো ১৫ দিনের মতো সময় লাগতে পারে।
এ রোগে বিভিন্ন লক্ষন পরিলক্ষিত হয় যেমন,
চোখ লাল হয়ে যায়। সাধারণত প্রথমে এক চোখ লাল হয়, পরে দুই চোখই হয়,চোখ দিয়ে পানি পড়ে,চোখে অস্বস্তিবোধ হয় (খচখচ করে),চোখের পাতা ফুলে যায়,চোখে ব্যথা হয়,
আলো সহ্য হয় না,চোখে পিচুটি (কেতুর) হয়,
চোখে হালকা জ্বালাপোড়া হয়,ঘুম থেকে ওঠার পর চোখের পাতা লেগে থাকে,কারো চোখের কর্নিয়া আক্রান্ত হলে তারা চোখে ঝাপসা দেখেন।
চোখ উঠা রোগের চিকিৎসা, প্রতিরোধ ও সতর্কতা:
সাধারণত এমনিতেই এ রোগ ভালো হয়ে যায়,
প্রয়োজনে আর্টিফিশিয়াল টিয়ার, অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ডোজ মেনে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে, সেক্ষেত্রে চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে তা ব্যবহার করতে হবে।
হাত দিয়ে চোখ চুলকানো যাবে না,রোগীকে কালো চশমা পরতে হবে,ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে,চোখ মোছার জন্য আলাদা কাপড় ব্যবহার করতে হবে,চোখ ওঠা রোগীদের আলাদা থাকতে হবে, যাতে অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে না পড়ে।
অনেক ক্ষেত্রে আক্রান্তরা ওষুধের দোকান থেকে স্টেরয়েড জাতীয় ড্রপ নেন। কিন্তু এ জাতীয় ড্রপ বেশি দিলে চোখের জটিলতা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যেমন: গ্লুকোমায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। নিজে নিজে ওষুধের দোকান থেকে কোনো ধরনের ড্রপ নিয়ে ব্যবহার করা উচিত না। চিকিৎসকরা অবস্থা বুঝে নির্দিষ্ট কিছু রোগীকে স্টেরয়েড জাতীয় ড্রপ দিয়ে থাকেন।
কখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে,
কারো চোখের খচখচে ভাবটা যদি বেশি হয়, বেশি পরিমাণে কেতুর জমে বা চোখে ঝাপসা দেখে, তাহলে চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উত্তম।
শিশু ও বড়দের ক্ষেত্রে এ রোগের চিকিৎসা একই। তবে, শিশুরা যেহেতু মনের ভাব যথাযথভাবে প্রকাশ করতে পারে না, সেহেতু তাদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উত্তম।
অনেক সময় চোখ বেশি ফুলে যায় এবং কনজাংটিভায় পানি জমে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
খুব কমক্ষেত্রে এমন হয় যে, রোগীর চোখ দিয়ে রক্তও পড়ে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
সাধারণভাবে চোখ লাল হলে ও সামান্য পানি পড়লে ৭ দিন অপেক্ষা করাই ভালো। যদি এই সময়ে ভালো না হয়, তখন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া যেতে পারে।
চোখ ওঠা রোগ নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই উল্লেখ করে অধ্যাপক ডা. চন্দ্র শেখর মজুমদার বলেন, ‘সাধারণত এমনিই এ রোগ ভালো হয়ে যায়। তা ছাড়া যেকোনো প্রয়োজনে চিকিৎসকের কাছ থেকেই পরামর্শ নেওয়া উত্তম।’
 চোখের রোগে নবী কারিম(স:)এর শান্ত্বনা,
এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত যায়েদ ইবনে আরকাম (রা.) বলেন, একবার আমার চোখের রোগ হলো, তখন নবীজি (সা.) আমাকে দেখতে এলেন। তিনি আমাকে লক্ষ্য করে বলেন, যায়েদ, এভাবে যদি তোমার চোখের রোগ অব্যাহত থাকে তবে তুমি কী করবে? আমি বললাম, আমি সবর করব (ধৈর্য ধরা) এবং সাওয়াবের প্রত্যাশা করব।
তিনি বলেন, এভাবে তোমার চক্ষুরোগ যদি অব্যাহত থাকে আর তুমি তাতে সবর করো ও সাওয়াবের প্রত্যাশা করো, তবে তুমি এর বিনিময়ে জান্নাত লাভ করবে। ’ (আল আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৫৩৪)
প্রতিদিন চোখের যত্ন নিতেন আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও। প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে চোখ পরিষ্কার রাখার জন্য তিনি একটি বিশেষ ধরনের সুরমা ব্যবহার করতেন।

আপনি আরও পড়তে পারেন