ছাতকে জনপ্রতিনিধিদের তোপের মুখে সহকারী কমিশনার(ভুমি)

হাবিবুর রহমান নাসির ছাতক প্রতিনিধিঃ

ছাতকে উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায় অনিয়ম-দূর্নীতির প্রসঙ্গে জনপ্রতিনিধিদের তোপের মুখে পড়তে হয়েছে সহকারী কমিশনার(ভুমি) সোনিয়া সুলতানাকে। সভায় ক’জন চেয়ারম্যান ভুমি অফিসের বিরুদ্ধে ঘুষ-দূর্নীতির প্রসঙ্গ তুলে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সভায় উপস্থিত সহকারী কমিশনার(ভুমি) সোনিয়া সুলতানাকে এ সময় ইতস্ততবোধ করতে দেখা গেছে। এ সময় সমন্বয় সভায় ভুমি অফিসের বিরুদ্ধে উত্থাপিত ঘুষ-দূর্নীতির প্রসঙ্গ নিয়ে এক হাস্যরসের সৃষ্টি হয়। ছাতকের ভুমি অফিসের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগটি নুতন কিছু নয়। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা অনিয়ম-দূর্নীতি কখনো হ্রাস বা কখনো বৃদ্ধি পেতে দেখা গেছে। এভাবেই চলছে এখানের উপজেলা ভুমি অফিসের কার্যক্রম। এর উপর রয়েছে সক্রিয় একটি দালাল চক্র। ঘুষ ছাড়া এ অফিসে কোন কাজ করাই সম্ভব হয় না বলে অনেকটা মেনে নিয়েই ভুমি মালিকরা সেবা গ্রহন করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। এ অফিসে স্বাভাবিক ভুমি সেবার পাওয়া আর অরণ্যে রোদন একই বিষয়। সম্প্রতি এ অফিসে অনিয়ম-দুর্নীতি ও ঘুষ গ্রহনের মাত্রা মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় ভুমি মালিকদের মধ্যে বিরাজ করছে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ। ভুমি অফিসের বিরুদ্ধে সেবাভোগিদের ক্ষোভ তিলে-তিলে দানা বেঁধে এর বিস্ফোরন ঘটে উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায়। গতকাল মঙ্গলবার উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভায় জনপ্রতিনিধিদের তোপের মুখে পড়েন সহকারী কমিশনার(ভুমি)। সভায় উপস্থিত জনপ্রতিনিধিরা ভুমি অফিসের বর্তমান ঘুষ-দূর্নীতির বিষয় তুলে ধরে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। এসময় এক বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় সমন্বয় সভায়। ছৈলা-আফজলাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গয়াছ আহমদ ভুমি অফিসের ঘুষ-দূর্নীতির প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তব্যে বলেন, স্বাভাবিক ভুমি নামজারী করতে এ অফিসে ৩০-৫০হাজার টাকা দিতে হয়। সরকারী নিয়ম-নীতির বিষয়টি এ অফিসে সম্পূর্ন অকার্যকর করে রাখা হয়েছে। একই ভুমি একাধিক ব্যক্তির নামে নামজারী করার অভিযোগও রয়েছে এ অফিসের বিরুদ্ধে। খাজনা দিতেও কর্মকর্তা- কর্মচারীদের দিতে হয় অতিরিক্ত টাকা ও বখরা। মোটা অংকের বখরা নিয়ে ৫০বছর আগে করা নামজারী খারিজ করে নতুন নামে নামজারী করে দেয়ার অভিজ্ঞতাও রয়েছে এ ভুমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। পিয়ন, অভ্যর্থনাকারী থেকে এ অফিসের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা পর্যন্ত ঘুষ না দিয়ে ভুমি সংক্রান্ত কোন কাজ করা সম্ভব হয় না। এদিকে অফিসে রক্ষিত ভুমি মালিকদের পাইল-পত্র অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া অন্য কেউ দেখভাল করার বিধান না থাকলেও এখানে প্রায় সময়ই সক্রিয় দালাল চক্র অনাধিকার ফাইল-পত্র ঘাটা-ঘাটি করতে দেখা গেছে। দালাল চক্রের মাধ্যমে বখরা আদায় হয় বলেই তাদের অনাধিকার ফাইল-পত্র ঘাটা-ঘাটিতে সুযোগ করে দেয় অফিস কর্তৃপক্ষ- এমন অভিযোগই ভুক্তভোগী ভুমি মালিকদের। সমন্বয় সভায় ঘুষ-দূর্নীতির বিষয়টি অস্বীকার করে সহকারী কমিশনার(ভুমি) সোনিয়া সুলতানা তার বক্তব্যে বলেন, সরকারী নিয়ম-নীতির আলোকেই এ অফিসের কার্যক্রম চলছে। ঘুষ বা অনিয়মের প্রসঙ্গে কেউ অভিযোগ দিলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান অলিউর রহমান চৌধুরী বকুল দুঃখ প্রকাশ করে জানান, প্রকৃত ভুমি মালিকরাই এখন চরম হয়রানী স্বীকার হচ্ছেন। সরকারের নির্ধারিত ভুমি ফি ছাড়াও মোটা অংকের টাকা দিয়েও প্রকৃত সেবা পেতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে ভুমি মালিকগনকে আরো সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। উপজেলা চেয়ারম্যান অলিউর রহমান চৌধুরী বকুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবেদা আফসারী, সহকারী কমিশনার(ভুমি) সোনিয়া সুলতানা, ইউপি চেয়ারম্যান গয়াছ আহমদ, আওলাদ হোসেন, দেওয়ান পীর আব্দুল খালিক রাজা, অদুদ আলম, আব্দুল হেকিম, আবুল হাসনাত, সাইফুল ইসলাম, মুরাদ হোসেনসহ জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাগন উপস্থিত ছিলেন।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment