ছাত্রলীগের ২৯তম সম্মেলন: সক্রিয় হচ্ছে সিন্ডিকেট

ছাত্রলীগের ২৯তম সম্মেলন: সক্রিয় হচ্ছে সিন্ডিকেট

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ২৯তম সম্মেলনকে ঘিরে আবারো সক্রিয় হয়েছে অদৃশ্য সিন্ডিকেট। ছাত্রলীগের সাংবিধানিক নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম ভাঙিয়ে তারা ছাত্রলীগের আসন্ন সম্মেলন নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন কোনো সিন্ডিকেট নয়, ছাত্রলীগের নেতা নির্বাচন হবে যোগ্যতা, মেধা ও আওয়ামী ঘরানার পরিবার থেকে। এ নির্দেশনা আসার পর বোল পাল্টে নতুন বলয়ে সক্রিয় হয়েছে পুরনো সেই কথিত সিন্ডিকেট। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের কথা বললেও তারা মুখচেনা নেতা বানানোর মিশনে তৎপর হয়ে উঠেছেন বলে সূত্রে জানা গেছে। তথ্যমতে, এক যুগেরও অধিক সময় ধরে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব পরিবর্তন হয় কয়েকটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। সিন্ডিকেটের আশীর্বাদই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় অর্জন। যারা এটা অর্জন করতে পারেন, নেতা বনে যাওয়া তাদের মুহূর্তের ব্যাপার। আর যারা তাদের ম্যানেজে ব্যর্থ, ছাত্রলীগে তাদের ঠাঁই হয় না। তাদের ইশারায় নির্ধারিত হয় সংগঠনটির ভবিষ্যৎ।

 

তবে অঘোষিত বা কথিত সিন্ডিকেটের সবাই একসময়ের ছাত্ররাজনীতির রাজপথ কাঁপানো জনপ্রিয় ছাত্রনেতা ছিলেন। তাদের সময়ে ছাত্রলীগের যেমন অর্জন রয়েছে, তেমনি অঢেল বিত্তবান বনে যাওয়ার অভিযোগও রয়েছে। তারা সবাই বর্তমানে আওয়ামী লীগের মূলধারার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ওই সিন্ডিকেটের আশির্বাদপুষ্ট হয়েই রিপন-রোটন, বদিউজ্জামান সোহাগ-নাজমুল ও বর্তমান সোহাগ-জাকির নেতৃত্বে আসেন বলে আওয়াজ রয়েছে। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মহানগরের দুই কমিটিও সিন্ডিকেটের অনুগত। আগামী ১১ ও ১২ মে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ২৯তম আয়োজন হতে যাচ্ছে। সম্মেলনের দিনক্ষণ ঘোষণা হওয়ার পরপরই আলোচনায় উঠে আসে কথিত সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটের বিষয়টি আলোচনায় আসায় ক্ষুব্ধ হন ছাত্রলীগের সর্বোচ্চ অভিভাবক আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ইতোমধ্যে ছাত্রলীগের নেতা নির্বাচনে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ৩ জন কেন্দ্রীয় নেতাকে কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। আর নেতৃত্ব বাছাইয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক দেলেয়োর হোসেন ও কেন্দ্রীয় সদস্য মারুফা আক্তার পপিকে। তারা দুজনেই ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ছিলেন। তবে নেতা নির্বাচনের চূড়ান্ড সিদ্ধান্ত নেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছাত্রলীগের সম্মেলন ঘিরে প্রধানমন্ত্রীর কড়াকড়ি নজরদারি স্পষ্ট হওয়ার পর নতুন মোড়কে সক্রিয় সিন্ডিকেট। বলয়ে যুক্ত হয়েছেন আরও নতুন সদস্য। তবে অদৃশ্য ওই সিন্ডিকেটের মাথায় এখন ছায়া দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দুই নেতা। দুজনই দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচি এবং সম্মেলনের নানা বিষয় তদারকি করছেন। ছাত্রলীগের সাবেক প্রভাবশালী ওই দুই নেতার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন কথিক সিন্ডিকেট বলয়ের হাফ ডজন নেতা। ওই দুই কেন্দ্রীয় নেতার মধ্যে মূল সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করছেন ছাত্রলীগের সাবেক প্রভাবশালী এক সভাপতি। সাবেক ছাত্রনেতাদের ওই বলয়টি ছাত্রলীগের নেতা বানানোর মিশনের মাঠে নেমেছেন। ইতোমধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন হোটেল ও সিনিয়র নেতাদের বাসায় একাধিক বৈঠক করেছেন বলে জানা গেছে। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী নিজেও জেনেছেন এবং তাদের কর্মকাণ্ডের খোঁজখবর রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
মূলত ছাত্রলীগের মাঠের রাজনীত আবদ্ধ ওই সিন্ডিকেট সদস্যদের ঘিরে। ফলে কেন্দ্রীয় কমিটিতে কাক্সিক্ষত পদ পেতে সিন্ডিকেট বলয়ে নেতাদের ঘিরেই রাতদিন ছুটে বেড়াচ্ছেন আসন্ন সম্মেলনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। নিজের কর্মী ও সমর্থক নিয়ে প্রতিদিনই ভিড় করছেন তাদের অফিস-বাসায়। তাদের ধারণা, সিন্ডিকেট বলয়ের বাইরে গিয়ে ছাত্রলীগের শীর্ষ পদে আসীন দুস্কর। আবার অনেক প্রার্থী বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ঘিরে লবিয়িং চালাচ্ছেন। কারণ তাদের মাধ্যমে সিন্ডিকেট বলয়ে দ্রুত অনুগত হওয়া যাবে। এমন ধারণায় পদপ্রত্যাশীরা সবসময় লেগে থাকছেন তাদের পেছনে। বিভিন্ন ইস্যুতে নিজের বলয়ে শোডাউন করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অবস্থান জানান দিচ্ছে। মোটরসাইকেলসহ যে যেভাবে পারছেন ছুটে বেড়াচ্ছেন দুই নেতার সুনজর কুড়াতে। সন্ধ্যায় গুলিস্তানের দলীয় কার্যালয়, আর সকাল হলে বাসার নিচে ভিড় করা তো তাদের রুটিন কাজ। সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী বর্তমান কমিটির এক সম্পাদক জানান, ‘ছাত্রলীগের নেতা যেভাবেই বানানো হোক। বড় ভাইদের আশির্বাদ ছাড়া উঠে আসা সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রী যাদের দায়িত্ব দিয়েছেন, তারা এরা একই।’ ঢাকা মহানগরের এক ছাত্রলীগ নেতা জানান, প্রতিবারই বলা হয়, ছাত্রলীগ নেতা মানেই নেত্রী। এবারো তাই, বলা হচ্ছে ছাত্রলীগের কথিত সেই সিন্ডিকেট এখন দুর্বল। তবে ছাত্রলীগের সাবেক যে নেতা প্রধানমন্ত্রীর নামে সমন্বয় করছেন, তিনিই তো ওই সিন্ডিকেট চালাচ্ছেন। ঘুরে ফিরে তারাই নিয়ন্ত্রক। এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, ‘ছাত্রলীগ একটি আদর্শবান সংগঠন। একমাত্র ছাত্রলীগেই কর্মীর মূল্যায়ন করা হয়। কোনো সিন্ডিকেট ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রক নয়, এসব ভিত্তিহীন। ছাত্রলীগের সাংবিধানিক নেত্রী শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত নেবেন, ছাত্রসমাজ তাই মেনে নেবে।’ এদিকে, সম্মেলনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে এনেছে গঠিত উপ-কমিটি। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি কাজী এনায়েতকে আহ্বায়ক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক চন্দ্র শেখর মণ্ডল, দিদার মোহাম্মদ নিজামুল ইসলাম, নওশের উদ্দিন সুজন, সাংগঠনিক সম্পাদক মোবারক হোসেন এবং বিএম এহতেশামকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে মূল প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মো. আরিফুর রহমান লিমন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং সহ-সভাপতি সাকিব হাসান সুইট, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নওশেদ উদ্দিন সুজন নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার মো. আরিফুর রহমান লিমন দৈনিক আমার সংবাদকে জানান, প্রধানমন্ত্রী আমাদের যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন, আমরা সেভাবে কাজ এগিয়ে এনেছি। ৬ মে ছিল মনোনয়ন জমার শেষ দিন। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ৩২৫-৩৩০টির মতো মনোনয়নপত্র জমা হয়েছে। ভোটার তালিকা প্রকাশ করা প্রসঙ্গে তিনি জানান, ভোটার তালিকা প্রায় চূড়ান্ত। নেত্রী নির্দেশ দিলে প্রকাশ করা হবে, তিনিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment