জনগণের যে আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন এ সংসদ ঘটাতে পারছে না

জনগণের যে আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন এ সংসদ ঘটাতে পারছে না

জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন বর্তমান সংসদ ঘটাতে পারছে না বলে দাবি করেছেন বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট হারুনুর রশীদ। তিনি বলেছেন, জাতীয় সংসদ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। বর্তমান জাতীয় সংসদ, আমরা এখানে সরকারি দল, বিরোধী দল এ অভিন্ন মত একাকার হয়ে গেছি। আমাদের পাশে বিরোধী দলের সদস্যরা রয়েছেন। উনারাই বলছেন, আমরা কাগজে-কলমে বিরোধী দল। ২০১৮ সালের নির্বাচনে যেখানে লাঙ্গল ছিল সেখানে নৌকা নাই। যেখানে নৌকা ছিল সেখানে লাঙ্গল নাই। তাদের দায়বদ্ধতা আছে। সত্যিকার অর্থে জনগণের যে আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন, এ সংসদ সেটি ঘটাতে পারছে না।

বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) একাদশ জাতীয় সংসদের পঞ্চদশ অধিবেশনে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে জাতীয় সংসদে বিশেষ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

হারুনুর রশীদ বলেন, পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হয় নাই। আমাদের একপক্ষের পরাজয়ের মাধ্যমে অন্যপক্ষ জয়ী হয়েছে। আর ভবিষ্যতে কী হবে আমি বলতে পারব না। সত্যিকার অর্থে আজ আমাদের জাতীয় একটি বিরাট সংকট। উচ্চ শিক্ষাঙ্গন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডাক্তার হয়, ইঞ্জিনিয়ার হয় এবং ওই উচ্চ শিক্ষাঙ্গন থেকে জাতীয় নেতাও তৈরি হয়। কিন্তু আজ ডাক্তার তৈরি হচ্ছে, ইঞ্জিনিয়ার তৈরি হচ্ছে কিন্তু আজ নেতা তৈরি হচ্ছে না উচ্চ শিক্ষাঙ্গন থেকে। কারণ সেখানে রাজনীতি নাই, রাজনীতির চর্চা নেই। আজ জাতি একটা গভীর সংকটের মধ্যে পড়েছে। অবশ্যই রাজনীতি চর্চায় আমাদের ফিরে আসতে হবে। বিরোধী দলকে আজ রাজনৈতিক কথা বলার সুযোগ দিতে হবে।

খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি একাধিকবার সংসদ নেতার সঙ্গে কথা বলেছি। আমি বলেছি আজ ওনার (খালেদা জিয়া) শারীরিক যে অবস্থা ওনাকে বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার ক্ষেত্রে আপনার অনুমতি দিতে অসুবিধা কোথায়? আপনি তাকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগটি দিন। এতে আপনি সম্মানিত হবেন। দেশের মানুষ আপনাকে অবশ্যই সম্মান করবে। তার (খালেদা জিয়া) যে বয়স, তার যে অবস্থা এ অবস্থায় তাকে এটা বিবেচনা করা উচিত।

হারুনুর রশীদ বলেন, যারা সামনের দিনে দেশকে সঠিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবে সেই মানুষগুলো আমরা তৈরি করতে পারছি না। যোগ্য মানুষ তৈরির জন্য প্রয়োজন অনুভব করছি না। প্রয়োজন যুগোপযোগী জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য আমাদের শিক্ষা পরিকল্পনা মোটেও যুগোপযোগী নয়। কোনো প্রচেষ্টা বা উদ্যোগ আমরা দেখছি না। একটা দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ, কার্যকর পদক্ষেপ যদি আমরা নিতে না পারি বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় আমরা নিদারুণভাবে বড় রকমের ক্ষতির মুখে পড়ব।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক প্রশাসনিক সর্বস্তরে মূল্যবোধের চরম অবক্ষয়। আশঙ্কাজনকভাবে দুর্নীতির ভয়াবহ বিস্তার। শিক্ষা ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস, বিভিন্ন নিয়োগে প্রশ্নপত্র ফাঁস। এমসিকিউ পদ্ধতির মাধ্যমে জ্ঞানশূন্য প্রজন্মের বিস্তৃতি শিক্ষাব্যবস্থাকে দেউলিয়া থেকে আরও দেউলিয়ার দিকে আমরা নিয়ে যাচ্ছি। জাতি হিসেবে আমরা সব দিক থেকেই যেন একটা ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। এ কথাগুলো বললে, আমাদের সরকার দলীয় সদস্যরা অনেকে কষ্ট পাবেন। সত্য সত্যিকার অর্থেই বড়ই কঠিন।

সংবিধানের একটি প্রস্তাবনা তুলে ধরে বিএনপি দলীয় এ সংসদ সদস্য বলেন, এখন বাংলাদেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। স্থানীয় সরকারের নির্বাচন। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আগেও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার রূপকল্প-২০৪১ সাল পর্যন্ত রয়েছে, দরকার কী নির্বাচনের নামে এ ধরনের প্রহসন? নির্বাচনের নামে এ ধরনের হানাহানি সংঘাত খুনাখুনি দরকার কী? আমার নির্বাচনী এলাকায় আগামী ৩০ তারিখ পৌরসভা নির্বাচন রয়েছে। কিছুক্ষণ আগে খবর পেলাম সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অফিস ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কী কাজ করে? দায়িত্ব কী? আমরা নির্বাচন কমিশনকে সর্বদা গালিগালাজ করছি, নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা নিয়ে কথা বলছি। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে সংবিধানে পরিষ্কারভাবে যে বলা হচ্ছে নির্বাচন কমিশনকে রাষ্ট্র, আইনবিভাগ, নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ সবাই নিরবচ্ছিন্নভাবে সহযোগিতা করবে। নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ যদি সহযোগিতা না করে আমি কীভাবে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে পারব?

হারুনুর রশীদ বলেন, আজ যারা বিনা ভোটে, নির্বাচন কমিশন যাদের নির্বাচিত ঘোষণা করছে তাদের আমি কী বলব? অনির্বাচিত বলব? না নির্বাচিত বলব? তারা তো নিশ্চয়ই বিনা ভোটে নির্বাচিত। এ সংবিধান আমাদের পরিষ্কারভাবে বলে দিচ্ছে ১১ অনুচ্ছেদে যে যারা সেখানে ভোটার তাদের মাধ্যমে নির্বাচিত করতে হবে স্থানীয় প্রতিনিধিদের। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমরা ব্যর্থ। এ ক্ষেত্রে আমরা সত্যিকার অর্থেই ব্যর্থ। তৃণমূল পর্যায়ের একটি ইউনিয়ন পরিষদে এ বছরে তৃতীয় ধাপের নির্বাচন আগামী ৩০ তারিখ অনুষ্ঠিত হবে। এ যাবৎ গণমাধ্যমে যে তথ্য এসেছে ৩০০/৪০০ অধিক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানসহ ও গোটা পরিষদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত। তাদের কে নির্বাচিত করল? কে তাদের মনোনীত করল? তারা কীভাবে জনগণের দায়িত্ব পালন করবে? এ কথাগুলো বলতে গেলে সরকারি দলের সদস্যরা আমাদের বাধা দিচ্ছেন।

তিনি বলেন, আমাদের বিভিন্নভাবে উপহাস করছেন, তুচ্ছতাচ্ছিল্য করছেন। আমাদের দেশের এখন পঞ্চাশ বছর পূর্তি। আজ চিন্তা করতে হবে যে রাষ্ট্রের যে প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে নির্বাচন কমিশন বলি, আইন বিভাগ বলি, বিচার বিভাগই বলি আর আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কথাই বলি, এদের প্রতি জনগণের আস্থা বেড়েছে? না আস্থা কমে গেছে? এ প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি জনগণের আস্থা একেবারে তলানীতে চলে গেছে। আজ যখন শুনি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা মানুষকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে নাশকতার মামলা দেয়। রাজনৈতিক হাজার হাজার মামলা আজ রয়েছে।

বিএনপি দলীয় এ সংসদ সদস্য বলেন, আজ আমরা আমাদের বিবেক, আমাদের মনুষ্যত্বকে হারিয়ে ফেলেছি। আমাদের বিবেক, মনুষ্যত্বকে জাগ্রত করতে হবে। সত্য যা সেটি আমাদের বলতে হবে। নির্বাচন ক্ষমতা পরিবর্তনের একমাত্র পথ, এটি আমরা বিশ্বাস করি। অবশ্যই নির্বাচনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা নির্মাণ করতে হবে। কিন্তু আজ আমাদের এ ক্ষেত্রে বড় ধরনের ঘাটতি তৈরি হয়ে গেছে। আমাদের গণতন্ত্রের সংকট, আমাদের আইনের সুশাসনের সংকট, আমাদের মাদকের যে ভয়াবহ বিস্তার ঘটছে এ সব সংকট থেকে জাতিকে মুক্ত করতে গেলে অবশ্যই জাতীয় ঐক্যমতের দরকার।

 

 

আপনি আরও পড়তে পারেন