জুমার বরকত থেকে আমাদের বঞ্চিত কর না হে আল্লাহ

জুমার বরকত থেকে আমাদের বঞ্চিত কর না হে আল্লাহ

আজ পবিত্র মাহে রমজানের শেষ জুমা। বিশ্বময় মহামারি করোনার কারণে অধিকাংশ মুসলমানই স্বাস্থ্যবিধি মেনে সচেতনতার সাথে আজ জুমার নামাজ আদায় করবেন। 

অনেকে এমনও হবেন যারা রমজানের এই শেষ জুমাকে অত্যধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। তারা সারা বছরের জুমার নামাজ আদায় না করলেও আজকে মসজিদে আসবেন। আর এ কারণেই প্রতিটি মসজিদে রমজানের এই শেষ জুমায় কোন জায়গা খালি থাকে না। 

এছাড়া আমাদের মাঝে প্রচলিত এই ধারণাও রয়েছে, রমজানের শেষ জুমা যা জুমাতুল বিদা নামে পরিচিত তা আদায় করে নিলে আমরা গত বছরের সমস্ত পাপ থেকে পরিত্রাণ লাভ করব আর সারা বছরের ইবাদতের দায়িত্ব হয়তো এই জুমা পড়ার ফলে পালিত হয়ে যাবে। 

এমন ধারণা যারা করেন তারা আসলে ভুল করেন। কেননা, এমন কোন শিক্ষা ইসলামের কোথাও পাওয়া যায় না যে, রমজানের শেষ জুমায় যোগদানের ফলে আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য সাধিত হবে।

আল্লাহতায়ালার বাণী এবং মহানবীর (সা.) হাদিস থেকে প্রমাণিত যে, কেবল রমজানের শেষ জুমা পড়া মুক্তির কারণ হয় না। তবে আজকের জুমায় যথাযথ প্রস্তুতির সাথে যারা অংশগ্রহণ করে আর অঙ্গীকার করে, আজ থেকে আমি নিজেকে সর্বপ্রকার পাপ থেকে দূরে রাখবো, তাহলে অবশ্যই এমন লোকদের জন্য রমজানের শেষ জুমার গুরুত্ব রয়েছে। 

নিজের মাঝে পবিত্র পরিবর্তনের অঙ্গীকার যদি এই জুমায় করা হয়, তবেই এই জুমা কল্যাণে পরিণত হবে। 

জুমার গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেছেন-‘হে যারা ঈমান এনেছ, জুমার দিনের একটি অংশে যখন তোমাদেরকে নামাজের জন্য আহ্বান করা হয় তখন দ্রুত আল্লাহতায়ালার স্মরণে নিবদ্ধ হও আর ব্যবসা-বাণিজ্য পরিত্যাগ কর, এটি তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমাদের জ্ঞান থাকে। আর নামাজ শেষ হওয়ার পর পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর কৃপারাজির মধ্য থেকে কিছু সন্ধান কর আর অজস্র ধারায় আল্লাহতায়ালাকে স্মরণ কর যেন তোমরা সফলকাম হতে পার’ (সুরা জুমা)। 

এখানে আল্লাহতায়ালা রমজানের জুমা বা রমজানের শেষ জুমায় যোগদানের নির্দেশ দেন নি বরং কোন বিশেষত্ব ছাড়াই সাধারণভাবে জুমার নামাজের গুরুত্বের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন আর বলা হয়েছে, সব জুমাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর জুমায় শুধু যোগদান করলেই হবে না বরং খুতবা শুরু হওয়ার অনেক পূর্বেই আসতে হবে। মহানবী (সা.) জুমায় প্রথম আগমনকারীকে বড় পুণ্যের ভাগী আখ্যায়িত করেছেন। 

তিনি (সা.) বলেছেন, ‘জুমার দিন মসজিদের সব দরজায় ফিরিশতারা দাঁড়িয়ে যায়। আর তারা মসজিদে প্রথমে প্রবেশকারীর নাম প্রথমে লিখে আর এভাবে মসজিদে আগমনকারীদের একটি তালিকা প্রস্তুত করতে থাকে। ইমামের খুতবা প্রদান যখন শেষ হয় তখন ফিরিশতারা সেই রেজিষ্টার বা খাতা বন্ধ করে দেয়’ (বোখারি)। 

তাই প্রত্যেক ব্যক্তি, জুমার দিন মসজিদে আসা এবং আল্লাহর স্মরণ করার ফলে বিশেষ পুণ্যের ভাগী হয়। ইমামের জন্য অপেক্ষমান অবস্থায় ও খুতবা চলাকালেও তারা এই পুণ্য থেকে অংশ পেতে থাকে। 

জুমাকে যারা গুরুত্ব দেয় না তাদেরকে মহানবী (সা.) ভীষণভাবে সতর্ক করেছেন। তিনি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি বিনা কারণে একাধারে তিনটি জুমা পড়ে না আল্লাহতায়ালা তার হৃদয়ে মোহর মেরে দেন’ (তিরমিজি)। 

এই গুরুত্বকে আমাদের সবার দৃষ্টিপটে রাখা উচিত। কোরআন ও হাদিসে কোথাও বলা হয়নি যে, রমজানের শেষ জুমা খুবই গুরুত্বপূর্ণ! বরং সব জুমাকেই গুরুত্বপূর্ণ আখ্যা দেয়া হয়েছে। 

একটি হাদিসে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘হে মুসলমানগণ! আল্লাহতায়ালা জুমার দিনকে তোমাদের জন্য ‘ঈদ’ নির্ধারণ করেছেন। তাই এই দিনে বিশেষ ব্যবস্থার অধীনে গোসল ইত্যাদি করে প্রস্তুতি নিবে’ (আল মুজিমুস সাগির লিত তিবরানি, পৃ: ১২৯)।

আমরা যেন প্রত্যেক জুমাকে সমান গুরুত্ব দেই, মুমিনের ঈমানের মানকে উন্নত করার জন্য জুমার নামাজ পড়া আবশ্যিক। জুমা না পড়ার ক্ষতি সম্পর্কেও মহানবী (সা.) উল্লেখ করে বলেছেন, অ-কারণে জুমা পরিত্যাগকারীর হৃদয় পুণ্য করার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এটি সত্যিই ভয়ের বিষয়। 

তবে বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রবল আকাঙ্খা থাকা সত্ত্বেও যারা জুমার নামাজে অংশ নিতে পারছেন না তাদেরকে আল্লাহ অবশ্যই ক্ষমা করবেন। 

কেননা আল্লাহ মানুষের নিয়ত ও অন্তর দেখেন। আমাদেরকে এই নিয়ত রাখতে হবে যে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া মাত্রই আমরা মসজিদে গিয়ে জুমার নামাজ আদায় করব। 

ইসলাম কোন ক্ষেত্রেই কঠোরতা প্রদর্শন করে না আর ধর্মে বাড়াবাড়ির শিক্ষাও নেই। বৈধ কোন কারণ ছাড়া জুমার নামাজ পরিত্যাগ করা নিষিদ্ধ। 

আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে জুমার ফজিলত উপলব্ধি করে এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি ও নিয়ম-নীতি মেনে জুমায় অংশ গ্রহণের তাওফিক দান করুন, আমিন। 

আপনি আরও পড়তে পারেন