ঝিনাইদহে ভারতের কাশ্মীরি আপেল কুলের চাষ

ঝিনাইদহে ভারতের কাশ্মীরি আপেল কুলের চাষ

কাশ্মীরি আপেল কুল। দেখতে অনেকটা মাঝারি সাইজের আপেলের মতো। রং আপেলের মতো সবুজ ও হালকা হলুদের উপর লাল। স্বাদ হালকা মিষ্টি অনেকটা বাউকুলের মতো। তবে আপেলের থেকে কাশ্মীরি কুলের স্বাদ ভালো। নতুন এ জাতের কুল ঝিনাইদহ সদরের গান্না ও কালীগঞ্জ উপজেলার কাষ্টভাঙ্গা গ্রামের দুই কৃষক তাদের আট বিঘা জমিতে চাষ করেছেন। এর আগে আপেল কুল চাষ হলেও নতুন জাত কাশ্মীরি আপেল কুল এবারই প্রথম। প্রচলিত আপেল কুল ও বাউকুলের থেকে আকারে বেশ বড়। ৬ থেকে ১০ টি কাশ্মীরি আপেল কুলে কেজি।

কথা হয় কালীগঞ্জ উপজেলার কুল চাষি রিয়াজ উদ্দীনের সাথে। তিনি চলতি বছরের বৈশাখ মাসে সাতক্ষীরা থেকে ১০ হাজার টাকায় ২০০ চারা কিনে এনেছিলেন। যে গুলো প্রতিবেশি দেশ ভারত থেকে আনা হয়েছিল। এ চারা এক বিঘা জমিতে রোপন করেন। মাত্র নয় মাস পর এবারই প্রথম ফল এসেছে। একেকটি গাছে ফলও হয়েছে অনেক। আর ১৫ দিন মতো পর গাছ থেকে কুল তোলা যাবে।

রিয়াজ উদ্দীন উপজেলার কাষ্টভাঙ্গা গ্রামের মৃত আবু বক্কর বিশ^াসের ছেলে। তিনি গত ১০ বছর ধরে বিভিন্ন প্রজাতির কুল চাষ করছেন। নতুন জাতের কাশ্মীরি কুলের পাশাপাশি এবারও তার আট বিঘা জমিতে বাউকুলের চাষ রয়েছে।

কুলচাষি রিয়াজ উদ্দীন আরো জানান, চারা রোপন, চারপাশে ঘেরা ও পরিচর্যা দিয়ে এক বিঘা জমিতে প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আশা করছি প্রথম বছরেই প্রায় দুই লাখ টাকার কুল বিক্রি করতে পারবো। তিনি জানান, সাধারনত আপেল কুল ও বাউকুল ৩০ থেকে ৭০ টাকা প্রতি কেজি পাইকারী বিক্রি হয়। কিন্তু এই নতুন জাতের কুল ১০০ থেকে ১৫০ টাকা প্রতি কেজি বিক্রি হবে। তাছাড়া অন্য কুলের থেকে এ কুলের চাহিদাও বেশি। ইতিমধ্যে পাইকার ব্যপারীরা জমিতে এসে দাম করে গেছে। তার সাথে সফর আলী নামের আরো এক কৃষক যৌথভাবে এসব কুলের চাষ করেন বলে যোগ করেন।

কাষ্টভাঙ্গা গ্রামের কৃষক বকুল হোসেন জানান, আমাদের এলাকায় অনেকে বিভিন্ন প্রজাতির কুলের চাষ করে। তবে নতুন এই জাতের কুল দেখতে যেমন সুন্দর স্বাদও তেমন ভালো। ফলে এলাকার কৃষকরা এবার নতুন জাতের কাশ্মীরি আপেল কুল চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না গ্রামের কৃষক আনিচুর রহমান জানান, এবারই প্রথম আমি সাত বিঘা জমিতে এই উন্নত জাতের কাশ্মীরি কুলের চাষ করেছি। এরমধ্যে চার বিঘা জমিতে ফল এসেছে। এরমধ্যে তিন বিঘা বিক্রি করবো। ইতিমধ্যে ব্যবসায়ীরা তিন বিঘা বাগনের কুল ৬ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকায় ক্রয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি চলতি বছর বৈশাখ থেকে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে সাত বিঘা জমিতে ৭০০ কাশ্মীরী আপেল কুলের গাছ লাগিয়েছিলাম। গাছের বর্তমান বয়স ৫ থেকে ৯ মাস। তিনি জানান, গাছ রোপনের শুরু থেকে এ পর্যন্ত গাছ পরিচর্যায় তার খরচ হয়েছে প্রায় তিন লাখ টাকা। প্রথম বছররেই যে কুল ধরেছে তা ধারনার থেকে অনেক বেশি।

নতুন জাতের এই কুল চাষ দেখে পার্শ্ববর্তী অনেক কৃষক কাশ্মীরী আপেল কুলের চারা সংগ্রহের জন্য আমার সাথে যোগাযোগ করছেন। তবে আমাদের দেশে এ চারা উৎপাদন এখনো তেমন একটা শুরু হয়নি। আমি নতুন জাতের এ কুল সম্প্রসারণে চারা উৎপাদন করতে চাই কিন্তু আমার তেমর কোন অর্থ নেই। এখস যদি সরকারী বা বেসরকারী কোন ব্যাংক স্বল্প সুদে ঋণ দেই তাহলে সুবিধা হয়।

ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জিএম আব্দুর রউফজানান বলেন, সদর উপজেলার গান্না ও কালীগঞ্জ উপজেলার কাষ্টভাঙ্গা গ্রামে নতুন জাতের এই কাশ্মীরি নুরানি আপেল কুল এ জেলায় প্রথম চাষ হয়েছে। দেশে এ জাতের কুলের চাষ সম্ভবত দ্বিতীয়। শুরু থেকে নতুন জাতের এই কুলচাষে আমাদের কর্মীরা সহযোগীতা করছে। এখন এই জাতের কুল চাষে কৃষকরা প্রচুর আগ্রহ দেখাচ্ছে। গাছের ডাল কেটে বাডিং পদ্ধতিতে এ চাষের সম্প্রসারণ করা যাবে। এছাড়া কাশ্মীরী আপেল কুল উৎপাদন বৃদ্ধিতে খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে সহায়ক ভ‚মিকা রাখবে বলে যোগ করেন এই জেলা কৃষি কর্মকর্তা।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment