ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে কক্সবাজার জেলার পরিবেশ ও দেশের সামগ্রিক জলবায়ু

ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে কক্সবাজার জেলার পরিবেশ ও দেশের সামগ্রিক জলবায়ু

মোঃসাইফুল ইসলাম:: কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ফলে কক্সবাজারে যে পরিমাণ গাছ কাটা হয়েছে সেই গাছগুলো প্রতি হেক্টর এলাকা থেকে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ পাউন্ড কার্বন শোষণ করতে পারতো। ফলে বর্তমানে ওই এলাকার প্রতি হেক্টর আকাশে সমপরিমাণ কার্বন জমাট হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে।

 বনবিভাগ বলছে, বর্তমানে কক্সবাজারে ৮ লাখ ৪২ হাজার ৫০৪ দশমিক ৬৮ মেট্রিক টন কার্বন জমাট হয়েছে।

 এতে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে জেলার পরিবেশ ও দেশের সামগ্রিক জলবায়ু।

জানা গেছে, গত বছরের ১৮ অক্টোবর কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বনবিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ন্যাচারাল ফরেস্ট ইনভেনটরি ২০১৫-১৮-এর রিপোর্টে প্রতি হেক্টরে গড়ে ৫ লাখ ৪২ হাজার ৫০৪ পাউন্ড কার্বন সংরক্ষণ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দিন দিন এর মাত্রা আরও বাড়ছে।

 বর্তমানে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৪২ হাজার ৫০৪ দশমিক ৬৮ মেট্রিক টনে। তখন কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, এই ক্ষতি ইতোমধ্যেই হয়েছে এবং ভবিষ্যতে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।

 প্রাথমিক হিসাবে যার পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ১৭ লাখ মেট্রিক টন। বাংলাদেশের জন্য এ ক্ষতি অনেক বেশি।

 এ অবস্থায় মানসম্মত পদ্ধতি অবলম্বন করে বিশদ ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য এরইমধ্যে ১০ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

 কমিটিকে রোহিঙ্গাদের কারণে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে।

 পাশাপাশি পানির স্তর নেমে যাওয়া, সুপেয় পানি ব্যবহার, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ, পরবর্তী ক্ষতি রোধের উপায় খোঁজা, কতটুকু ক্ষতি পুষিয়ে আনা যাবে এবং এ উদ্দেশ্যে কী কী করণীয় তা ঠিক করতে হবে।

 এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয় জনসাধারণের চাহিদা, কার্বন লস, বন্যপ্রাণী ও হাতির করিডোর সৃষ্টির বিষয় উল্লেখ করে কমিটির পরবর্তী বৈঠকে প্রতিবেদন আকারে উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে।

 কমিটিকে আরও যেসব কাজ করতে বলা হয়েছে তা হচ্ছে−রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কারণে বিলীন হওয়া বনের গাছপালার কার্বন মজুত করতে না পারায় ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ কমিটির পরবর্তী বৈঠকে উপস্থাপন করতে হবে।

 স্থলভাগের পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের পাশাপাশি জলভাগের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। তবে কমিটি গঠনের প্রায় এক বছর পার হলেও এখনও কাজ শুরু করতে পারেনি তারা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির সদস্য সচিব ও কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে এটা ঠিক।

 কিন্তু কমিটির কার্যপরিধি কী হবে এবং সদস্যদের সরেজমিন পরিদর্শন ব্যয়সহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ কারা বহন করবে, সে বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি। আমরা বিষয়টি জানিয়ে এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছি। মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত দিলে কাজ শুরু হবে।

 বিষয়টি সম্পর্কে সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, বন উজাড়ের কারণে গাছপালা যে পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করতো, সেটা হচ্ছে না। সেই গ্রিনহাউস গ্যাস এখন পরিবেশে থেকে যাচ্ছে। আমরা চাচ্ছি এই ক্ষতির সব দিক প্রতিবেদনে নিয়ে আসতে। যাতে এটা নিয়ে আমরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কথা বলতে পারি।

তিনি আরও বলেন, এ ক্ষতিটা স্থায়ী। জীববৈচিত্র্যও একবার ধ্বংস হলে ফেরানো যাবে না। কক্সবাজার-উখিয়াতে শুধু গাছ কাটা নয়, শিকড়ও উপড়ে ফেলা হচ্ছে। তাই নতুন করে ডালপালা গজানোর সম্ভাবনাও নেই।

 সরেজমিন দেখা গেছে, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পর কক্সবাজার বনবিভাগের বিপুল পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হলেও এখনও বৃক্ষ নিধন থামেনি। জ্বালানির চাহিদা মেটাতে প্রতিনিয়ত কেটে ফেলা

আপনি আরও পড়তে পারেন