টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার সাপুড়েদের ঐতিহ্যবাহী ‘শাওনে ডালা’ উৎসব উদ্‌যাপিত হয়েছে

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার সাপুড়েদের ঐতিহ্যবাহী ‘শাওনে ডালা’ উৎসব উদ্‌যাপিত হয়েছে
সৈয়দ মিঠুন ঘাটাইল প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার সাপুড়েদের ঐতিহ্যবাহী ‘শাওনে ডালা’ উৎসব উদ্‌যাপিত হয়েছে। আজ মঙ্গলবার শ্রাবণ সংক্রান্তিতে ‘শাওনে ডালা’ নামের প্রাচীন এই উৎসবটি পালন করা হয়। প্রতিবছরই এই দিনে তারা এই উৎসব পালন করে থাকেন।
এ দিনে সকাল থেকে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে সাপুড়েরা নৌকা সাজিয়ে বেরিয়ে পড়েন। রতনপুর, পুংলি, গর্জনা, বাইচাইল গ্রাম থেকে বের হওয়া নৌকাগুলো টোক নদী ধরে পশ্চিম দিকে গিয়ে ঝিনাই নদীতে চলে যায়।
উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় উৎসবটির আয়োজন করেন রতনপুর গ্রামের প্রবীণ সাপুড়ে ইয়াকুব আলী। ইয়াকুব আলীকে তার শিষ্যরা ওস্তাদ বলে ডাকেন।
ইয়াকুব আলী রতনপুর গ্রামে তাঁর নিজ বাড়িতে ‘শাওনে ডালা’ সাজান। তারপর দল নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে উৎসবের বন্দনা করেন। বন্দনা শেষে বেলা এগারোটার দিকে আনুষ্ঠানিকতা শেষে ডালা নিয়ে নৌকায় ওঠেন। তারপর নৌকার মধ্যে শুরু হয় পদ্মা দেবীর উদ্দেশ্যে নিবেদিত গান।
নারী-পুরুষ মিলে বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে চলে নাচ-গান। স্থানীয়রা এই গানকে ‘বেইলা নাচাড়ি’ বলেন।
ইয়াকুব আলী বলেন, আমরা বংশানুক্রমে মনসাদেবীর চরণে নৈবেদ্য দিই। পুরাণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ইয়াকুব বলেন, মনসাদেবীকে পূজা না করায় চাঁদ সওদাগরের সাতজন সন্তানকে দংশন করে হত্যা করেন। সবশেষ সন্তান লক্ষিন্দরকে লোহার বাসরঘরে দংশন করেন দেবী। বিধবা বেহুলা স্বামীর মৃতদেহ নিয়ে কলার ভেলায় করে দেবালয়ে যান। সেখানে তিনি নেচে গেয়ে দেবতাদের তুষ্ট করে স্বামীকে বাঁচান।
গর্জনা গ্রামের নওজেশ আলী বলেন, আমরা পদ্মা দেবীকে তুষ্ট করার জন্য তাকে প্রতিবছর ভোগ দিই। এতে করে সারা বছর সাপ আমাদের ওপর খুশি থাকে। চান্দশি গ্রামের শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রতিবছর এই উৎসবটির জন্য অপেক্ষা করি। সরাদিন নেচে গেয়ে দারুণভাবে দিনটি উদ্‌যাপন করি।
বাইচাইল গ্রামের সাপুড়ে আয়নাল হোসেন জানান, সারা দিন পদ্মা দেবীর স্মরণে নাচ গান শেষে আমরা নদীর মাঝখানে ‘শাওনে ডালা’ ভাসাব। এই ডালার মধ্যে দেবীর উদ্দেশ্যে দুধ-কলাসহ নানা ফলমূল থাকবে। দেবী এই ভোগ পেয়ে আমাদের ওপর সন্তুষ্ট হবেন। আমরা এক বছর নিরাপদ থাকব।
সদ্য প্রয়াত টাঙ্গাইলের প্রখ্যাত লোকগবেষক শফিউদ্দিন তালুকদার তার এক সাক্ষাৎকারে শাওনে ডালাকে এ অঞ্চলের মানুষের বংশ পরম্পরায় চলে আসা চর্চা এবং সেই অর্থে একটি ঐতিহ্যবাহী লোক উৎসব বলে আখ্যায়িত করেছেন। ঘাটাইল ছাড়াও পার্শ্ববর্তী গোপালপুর, কালিহাতী ও ভুয়াপুর উপজেলাতেও এ উৎসব হয় বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।

আপনি আরও পড়তে পারেন