ঠাকুরগাঁওয়ে যাদুরানী আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে জমি জবর দখলের অভিযোগ

জুনাইদ কবির , ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি:


ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার যাদুরানী আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ এ. কে. এম শামীম ফেরদৌস টগর এর বিরুদ্ধে হরিপুর থানায় জমি জবর দখল করার অভিযোগ করেছেন আবু সামাদ ।


অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, যাদুরানী আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের সংলগ্ন শিয়াল্লাড় মৌজার জে এল-৩২ এর ১৭ নং খতিয়ানের ৪৮১/৭৩৬ দাগের ক্রয়কৃত সূত্রে ৯ শতক জমি ভোগ দখল করে আসছিল আবু সামাদ।

বিগত ২০১৫ সালে যাদুরানী আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষসহ কলেজের প্রফেসর ও কর্মচারীরা উল্লেখিত ভোগ দখলী জমিতে জোর পূর্বক বালি ফেলে। এতে বাঁধা দিতে গেলে জমির ক্রয়কৃত মালিক শিয়াল্লাড় গ্রামের আবু সামাদসহ তার পরিবারে সদস্যদের মামলা মোকদ্দমার ভয় দেখিয়ে জমি থেকে বেড় করে দেয় তাদের। বর্তমানে কলেজের সীমানা প্রাচীর করার জন্য জমিতে জোর পূর্বক ইট বালি ফেলেছে।

প্রাচীর নির্মাণে আবার বাঁধা দিতে গেলে পূণরায় তারা ভয়-ভীতি ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হেস্ত নেস্ত করতে পারে ও জমি ভোগ দখল পাবার জন্যে আবু সামাদ বাদি হয়ে গত ৭ সেপ্টেম্বর-২০২০ ইং তারিখে হরিপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন।


অভিযোগ দেওয়ার দীর্ঘ দিন পার হলেও কোন সুরাহা না পেয়ে তিনি। তাই আবার হরিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর অভিযোগ করেন। এছাড়াও তিনি হরিপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছেও এবিষয়ে অভিযোগ দেন। এখন পর্যন্ত এর কোন সুরাহা পান নি বলে জানান বাদি পক্ষ।


আবু সামাদের ছেলে ইসমাইল আহম্মেদ জানান, দলীয় ক্ষমতার জোরে কয়েক বছর আগে যাদুরানী আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ এ. কে. এম শামীম ফেরদৌস টগর জমির মূল্য দেওয়ার কথা বলে আমার পিতার কাছ থেকে জমিটি নেয়। কিন্তু পরবর্তীতে কথা অনুযায়ী জমির মূল্য চাইতে গেলে তিনি টাকা না দিয়ে আমাদের মিথ্যা মামলা করাসহ বিভিন্ন রকম হুমকি প্রদান করেন।

ইসমাইল আহম্মেদ আরও জানান, এবিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও বরাবর ও থানায় অভিযোগ দিলে শামীম ফেরদৌস টগর মিমাংসার আশ্বাস দেন। কিন্তু তারিখের পর তারিখ গেলেও তিনি থানায় ও ইউএনও অফিসে আসেন নি। এতে শুধু দিন ক্ষেপন করা হয়েছে এর কোন সুরাহা হয়নি।

বরং এখন  তিনি আমাদের হাত-পা কেঁটে নেওয়া, প্রাণে মেরে ফেলার, ভয়ভীতি, মিথ্যা মামলাসহ নানা হুমকি প্রদান করে আসছেন। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছি। বাড়ি থেকে বেড় হলে বাসায় ফিরতে পারবো কি না? তার কোন নিশ্চয়তা নেই আমাদের।


এছাড়াও স্থানীয় নওসাদ আলীর কাছেও  জমির বদলে জমি দেওয়া কথা বলে জমি নিয়েছি কলেজ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তাকে এখনো কোন জমি অন্য জায়গায় দেওয়া হয়নি। এবিষয়ে তিনি থানায় অভিযোগও করেছিলেন তাতেও কোনো কাজ হয়নি বলে জানান তিনি।
বিষয়টি নিয়ে হরিপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান মুকুল বলেন, আমার কাছে বাদি পক্ষ অভিযোগ পেয়েছিলাম।

তাৎক্ষণিক আমি কলেজের অধ্যক্ষকে জমির বিষয়টি সুরাহা করার জন্য বলেছি। তিনি ১ মাসের মধ্যে জমির সমস্যা সমাধান করার কথা ছিল। পরবর্তীতে বিষয়টির সমাধান না হওয়ায় তারা থানার আশ্রয় নেন।

পরে এবিষয়ে পুলিশ থানায় তাদের ৩ বার ডেকে ছিল কিন্তু বাদি পক্ষ আসলেও কলেজ কর্তৃপক্ষ আসেন নি বলে আমি শুনেছি। তবে বাদি পক্ষকে আমার কাছে বেশ ভালো মনে হয়েছে। কারণ বাদি পক্ষ বলছে, যে কলেজ কর্তৃপক্ষ বসুক, কাগজ পত্র দেখুক। কাগজ অনুযায়ী যদি জমি আমরা পাই তাহলে আমাদের জমির মূল্য প্রদান করে তারা কলেজের জন্য জমি ক্রয় করে নিবেন।


এবিষয়ে হরিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস.এম আওরঙ্গজেব বলেন, যাদুরানী আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় জনগণের মাঝে দীর্ঘদিন ধরে জমির বিরোদ চলছে। এবিষয়ে দুই পক্ষরই অভিযোগ পেয়েছি।  অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুই পক্ষকেই ডাকা হয়েছিল তবে রহস্যজনকভাবে কলেজ কর্তৃপক্ষ থানায় আসেন নি।

পরে ফোনের মাধ্যমে আমরা তাদের দুই পক্ষকেই বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা একজন আরেক জনের উপরে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে। আমরা এখনো আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা  চাই আলোচনার মাধ্যমে আমরা চাই শান্তিপূর্ণভাবে বিষয়টি সমাধান হোক।


যাদুরানী আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অমাকান্ত ভৌমিক এর সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি মৌখিকভাবে জানান, এবিষয়ে আমাকে কেও অবগত করেনি। তাই তিনি এ বিষয়ে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে নারাজ।


অন্যদিকে যাদুরানী আদর্শ মহাবিদ্যালয়ে সরাসরি গেলে অধ্যক্ষ এ. কে. এম শামীম ফেরদৌস টগর এর সাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি। এবংকি তার সাথে মোবাইল ফোনে একাধিক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি কল ধরেননি। তাই তার সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে তার মতামত নেওয়া যায় নি।

বাদি পক্ষ তাদের ক্রয়কৃত জমি যাতে ফেরত পান, সে বিষয়ে সরকারের ও প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছেন।


উল্লেখ্য: এ. কে. এম শামীম ফেরদৌস টগর হলেন, হরিপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি।  


ভক্সপপ- (১) আবু সামাদ-বাদি পক্ষ, যাদুরানী হরিপুর, ঠাকুরগাঁও, (২) ইসমাইল আহম্মেদ- বাদি পক্ষ, যাদুরানী হরিপুর, ঠাকুরগাঁও, (৩) নওসাদ আলী-যাদুরানী হরিপুর, ঠাকুরগাঁও।

বাইট- জিয়াউল হাসান মূকুল, চেয়ারম্যান উপজেলা পরিষদ হরিপুর, ঠাকুরগাঁও।
সিংক- এস.এম আওরঙ্গজেব-অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হরিপুর থানা, ঠাকুরগাঁও।

আপনি আরও পড়তে পারেন