ঢাকার দোহারে বিয়ের ভুয়া কাবিননামা দিয়ে অভিনব প্রতারণা

 আবুল হাশেম ফকিরঃ

দেশে নারী নির্যাতনের সুনির্দিষ্ট আইন থাকলেও নেই নারী কতৃক পুরুষ নির্যাতনের আইন। কিছু অসাধু নারী আছে যারা এই সুযোগকে পুঁজি করে বিভিন্ন ভাবে পুরুষদের ফাঁদে ফেলে অর্থ সম্পদ হাতিয়ে নিচ্ছে। এমনই এক ঘটনা ঘটেছে, ঢাকার দোহারের বাস্তা গ্রামের প্রতিবন্ধী হাযরত আলীর(হজা) ভাগীনা রিপনের(৩৫) সাথে। রিপন ২০০৩ সনে ডিসেম্বরে কাজের তাগিদে কুয়েতে যান। সেখানে ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার বাবু নামে এক ছেলের সাথে রিপনের বন্ধুত্ব হয়। বাবুর মাধ্যমেই বাবুর খালা কুয়েত প্রবাসী হোসনে আরার সাথে কুয়েতে ২০১৭ সালে পরিচয় হয়। হঠাৎ কিছুদিন পর বাবুর মাধ্যমে রিপন জানতে পারে হোসনে আরার বৈধ কাগজপত্র না থাকায় পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে গেছে। বাবু তাকে সাহায্য করতে বললে রিপন তার আরবাব(মালিক) এর সহযোগিতায় হোসনে আরাকে ছাড়িয়ে এনে বাংলাদেশে প্রেরনের ব্যবস্থা করেন। এই সহযোগিতার কারনে রিপন ও হোসনে আরার মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়। রিপন বিদেশে থাকা অবস্থায় হোসনে আরা তাদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ককে পুঁজি করে অসৎ উদ্দেশ্য রিপনের বন্ধু পরিচয়ে দোহারের বাস্তা গ্রামে রিপনের মামার বাড়ীতে কয়েকবার বেড়াতে আসে। যদিও তখন কেউ তা বুঝতে পারে নি। পরবর্তীতে রিপন ২০১৮ সালে দেশে আসলে হোসনে আরা রিপনের স্ত্রী বলে দাবি করেন। রিপনের মামা হযরত আলী তাদের বিয়ের কাবিননামা সহ প্রমান পত্র চান। এবং সেই সাথে স্থানীয় চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন আজাদ, হোসনে আরাকে আশ্বস্ত করে বলেন, বিয়ের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, কাবিননামা ও সাক্ষীদের হাজির করো আমরা বসে উভয়পক্ষের সম্মতিতে যা ভালো হবে তাই করবো। প্রয়োজনে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু হোসনে আরা কাবিননামা বা কোন কাগজপত্র না দেখাতে পেরে, কিছুদিন পরে একটি ভূয়া ৪০ লক্ষ টাকার কাবিন নামা যোগার করে বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নুরুন্নাহার ইয়ামিনের আদালতে ১৯৮০ সনের যৌতুক নিরোধ আইনের ৪ ধারায় একটি মামলা করেন। বিজ্ঞ আদালত রুপগঞ্জ থানাকে ঘটনাটি তদন্ত সাপেক্ষে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য বলেন। উক্ত ঘটনাটি তদন্তের জন্য রূপগঞ্জ থানার এস আই রুহুল আমীন দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। বিবাদীর ঠিকানা দোহার থানা থাকায় ও কাবিন নামার ঠিকানা কেরানীগঞ্জের থাকায় এস আই রুল আমিন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা ও দোহার থানাকে তদন্ত সাপেক্ষে প্রতিবেদন চেয়ে লিখিত চিঠি পাঠান। দোহার থানার এ এস আই শাহীনুর ইসলাম রিপন গং এর ঠিকানা সত্য বলে প্রতিবেদনে জানান, অপর দিকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার এস আই আজহারুল ইসলাম তার প্রতিবেদনে রিপন ও হোসনে আরার কাবিননামা ও কাবিন নাময় উল্লেখিত টাকার অঙ্ক দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার পাইনার বাজার সাকিনস্থ মৃত মাওলানা নাজিমউদ্দীন এর অফিসকক্ষে হাজির হইয়া নিকাহ নামা পৃষ্ঠা নং ৭৫, বালাম নং ৫/এ,২০১৮ রেজিস্ট্রার পর্যালোচনা করে দেখতে পান কাজি অফিসে ৫/এ ক্রমিক নং অনুযায়ী কোন রেজিস্ট্রার রক্ষনা বেক্ষন করা হয় নাই এবং এই ধরনের বালাম বহি তার অফিসে পাওয়া যায়নি। রিপন ও হোসনে আরার বিবাহ সংক্রান্তে কোন তথ্য প্রমাণাদি প্রদান করা সম্ভব হয় নাই বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এসব তথ্যের ভিত্তিতে বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত (গ) অঞ্চল নারায়ণগঞ্জ পিটিশন মামলা নং ২৪৪/১৮ বিরুদ্ধে বাদী কোন সঠিক তথ্য উপস্থাপনা করতে পারেনি। নথি দৃষ্টে দেখা যায় বাদী পর পর তিনটি ধার্য তারিখে হাজির না থাকায় সে কারনে মামলাটি ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮এর ২৪৭ ধারা অনুযায়ী খারিজ হয়ে যায়। কিন্তু এখানেও হোসনে আরা থেমে থাকেননি, সে কিছুদিন পর বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন বিশেষ ট্রাইবুনাল ৪ এ ঢাকার অধিনে পিটিশন মামলা ২৬৪/২০১৯ আরেকটি মিথ্যা মামলা রিপনের বিরুদ্ধে দায়ের করেন। একই কাবিননামা সুধু লেখার ধরন পরিবর্তন করা হয়। বর্তমানে রিপন জামিনে আছে বলে জানা যায়। দৈনিক আগামীর সময় প্রতিবেদক তদন্ত সাপেক্ষে জানতে পারেন, হোসনে আরা ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার বাঞ্চারামপুর থানার ৯নং ফরদাবাদ ইউনিয়নের চর লৌহনিয়া গ্রামের মৃত আবদুল মালেকের মেয়ে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হোসনে আরা প্রবাসে যাওয়ার আগে একই গ্রামের লুৎফরের ছেলে নাদিমের সাথে বিয়ে হয়। চার পাঁচ বছর সংসার করার পর হোসনে আরার স্বভাব ভালো না থাকায় তার স্বামীর সাথে মামলার মাধ্যমে বিচ্ছেদ হয়। তারপর হোসনে আরা প্রবাসে যান। সেখানে গিয়ে জাহাঙ্গীর নামে একজনকে বিয়ে করেন। জাহাঙ্গীরের সাথে সংসারে তাদের চার সন্তানের জন্ম হয়। এখানেও হোসনে আরা মামলা করে কাবিননামার টাকা হাতিয়ে নেয়। আর চার সন্তান জাহাঙ্গীরের হেফাজতে রয়েছে বলে জানা যায়। স্থানীয় সূত্রে আরো জানা যায়, হোসনে আরার এটি একটা ব্যবসা। সে তার প্রেমের ফাঁদে ফেলে ছেলেদের অর্থ সম্পদ হাতিয়ে নিয়ে তাদের নিঃশ্ব করাই তার কাজ। ঠিক একই ভাবে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছে দোহারের রিপনকে। এ বিষয়ে রিপন বলেন, চল্লিশ লক্ষ টাকার ভুয়া কাবিননামা তৈরি করে মামলা করেছে আমার নামে। আমার সাথে তার কোন ভাবেই স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক ছিলো না। আমি তাকে কুয়েতে পুলিশের কাছ থেকে ছাড়িয়ে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করি। তার সাথে আমার একটা বন্ধুত্ব সম্পর্ক ছিলো। মাঝে মধ্যে ফোনে একে অপরের খোজ খবর নেয়া হতো। এই সূত্র ধরে সে আমাকে এতো বড় বিপদে ফেলবে আমার জানা ছিলো না। হোসনে আরার বিষয়ে ফরদাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সেলিম দৈনিক আগামীর সময় কে জানান, হোসনে আরা প্রতারক ও মামলাবাজ মেয়ে। আমি জেনেছি একাধিক ছেলেকে মিথ্যা মামলা দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। এ বিষয়ে মুঠোফোনের মাধ্যমে হোসনে আরার সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। একাধিক বার চেষ্টা করেও কোন মাধ্যমে তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

আপনি আরও পড়তে পারেন