তিনশতাধিক ভ্যান চালকের জীবন চলে ঘাস বিক্রি করে

তিনশতাধিক ভ্যান চালকের জীবন চলে ঘাস বিক্রি করে

জসীম উদ্দিন ইতি (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধিঃ

একজন দু’জন নয়, তিনশতাধিক ভ্যান চালকের সংসার চলছে ঘাস বিক্রি করে। ঘাসের
খামার মালিক খুশি যে বাড়ি থেকে প্রতিদিন তার ঘাস বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। আবার
অন্যদিকে বাড়িতে বাড়িতে গুরু ছাগল পালন করছেন এমন গৃহস্থ এবং ক্ষুদ্র
খামার মালিকরাও খুশি বাড়িতে বসে তরতাজা ঘাস পেয়ে।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ঢোলারহাটের আশরত মেম্বার কয়েক বছর আগে প্রায় ৭ একর
জমিতে ঘাসের চাষ শুরু করেন। ঘাস বিক্রি হবে কি না এ নিয়ে কিছুটা ভাবনা
তার ছিলই। এগিয়ে এলেন নিজ এলাকার কয়েকজন ভ্যান চালক। যারা আগে বিভিন্ন
মালামাল পরিবহণ কাজে নিয়োজিত থাকতেন। তারা আশরত মেম্বারকে প্রস্তাব দেন-
নিজেরাই কেটে আটি বেঁধে কিনে নিয়ে যাবেন ঘাস। আশরত মেম্বার রাজি হলে
ভ্যানচালকেরা নিজেরাই ঘাস কেটে আটি বেঁধে ভ্যানে তোলেন। প্রতি আটি ঘাস ৮
টাকা দরে কিনে নিয়ে ভ্যান চালকেরা ছড়িয়ে পড়েন বিভিন্ন গ্রাম আর শহরের
অলিগলিতে। হাক ছাড়েল “ঘাস লাগবে ঘাস”। এমন হাক ডাক শুনে বাড়ির ভেতর থেকে
বাইরে বেরিয়ে আসেন গৃহস্থ আর গরু ছাগলের মালিকেরা। প্রতি আটি ঘাস ১০টাকা
দরে বিক্রি করা হয় তাদের কাছে।
ভ্যানে করে মোহাম্মদপুর ইউনিয়নে ঘাস বিক্রি করতে এসেছিলেন ঢোলারহাটের
ফরিদুল ইসলাম। তিনি একই এলাকার তৈমুদ্দিনের ছেলে। কথা হয় তাঁর সাথে।
ফরিদুল বলেন, আগে ভ্যানে মালামাল বহন করে শারীরিক কষ্ট হত, কিন্তু
সারাদিনে মাত্র তিন-চারশ টাকা পেতাম। এখন খাটনি কম কিন্তু সারাদিন ঘাস
বিক্রি করে ৬শ টাকা লাভ করি। ফরিদুল জানান, আশরত মেম্বারের ঘাসের খামার
থেকে এখন দৈনিক ২৫০-৩০০ ভ্যান ঘাস নিয়ে ঠাকুরগাঁও, রুহিয়া, আখানগর,
পল্লীবিদ্যুৎ এলাকায় চলে যায়। ফরিদুল প্রতিদিন ৩শ আটি ঘাস নিয়ে বের হন।
বেলা ৫ টার আগেই সব বিক্রি হয়ে যায়। এতে তার প্রতিদিন ৬০০ টাকা লাভ হয়।
এভাবে প্রত্যেক ভ্যান চালকই প্রতিদিন ৫-৬ শ টাকা লাভ করে।
কাজিপাড়া এলাকার আরজিনা বেগম তার ছাগলের জন্য ঘাস কেনেন। তিনি জানান, ছোট
ছোট করে কেটে দিলে ছাগল এই ঘাস খুব পছন্দ করে। ঠাকুরগাঁও শহরের বাসিন্দা
আবু শহীদ বলেন আমরা শখ করে বাড়িতে একটা গরু পালন করি, কিন্তু ঘাস খুব
দুস্প্রাপ্য। ভ্যানে করে ঘাস নিয়ে আসায় নিয়মিত গরুকে সবুজ ঘাস দিতে
পারছি। রোড এলাকার আবুল কাশেম বলেন, এসব ঘাস একদিনে শুকিয়ে যায়না।
কয়েকদিন রেখে খাওয়ানো যায়। একটা গরুকে দৈনিক ৫ আটি ঘাস খাওয়ালেই যথেষ্ট
বলে তিনি মনে করেন। তবে ঠাকুরগাঁও শহরের ব্যবসায়ী হাফিজুর রহমান চুন্নু
জানান, শহরের পাশে তাঁর একটি ইটভাটা আছে। সেখানে তিনি ১০টি গরু পালন
করেন। তবে ঘাসের দাম বেড়ে গেছে। ঘাসের আটি ছোট হতে হতে এখন শাকের আটির
মতো হয়ে গেছে। তাই তিনি ঘাস কেনা কমিয়ে দিয়েছেন।
ঘাস বিক্রেতা ভ্যান চালকদের কাছ থেকেই জানা যায়- আশরত মেম্বার তার খামারে
বর্তমানে চিনা ঘাস ও ব্যাম্বু ঘাস আবাদ করছেন।
ঠাকুরগাঁও জেলায় বাণিজ্যিকভাবে ঘাস চাষ করার কোন তথ্য আছে কি না জানতে
চাইলে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, জেলায়
প্রায় ৫০০ একরে ঘাস চাষ হচ্ছে। কৃষক এখন ঘাস চাষ করে লাভবান হচ্ছেন।
ঘাসের আবাদ প্রতি বছর বাড়ছে। ঘাসের আবাদ একদিকে অপ্রচলিত চাষাবাদ,
অপরদিকে সেই ঘাসকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের দল
যাদের জীবিকা নির্বাহের উপাদান এখন ঘাস। ঘাসের হাটও বসছে কয়েক জায়গায়।
মানুষের দোরগোড়ায় ঘাস পৌঁছে দিয়ে প্রাণিসম্পদের উন্নয়নে রাখছে তারা
ব্যাপক ভূমিকা। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ঘাসের উৎপাদন বাড়িয়ে মানুষের দোরগোড়ায়
পৌঁছে দিয়ে প্রাণিসম্পদের সুস্বাস্থ্য রক্ষা এবং উন্নয়নে আরো ভূমিকা
রাখতে পারবে বলে মনে করেন তিনি।

 

 

আপনি আরও পড়তে পারেন