দিনাজপুরে তাজমহল আদলে ১৫ কোটি টাকার মসজিদ

দিনাজপুরে তাজমহল আদলে ১৫ কোটি টাকার মসজিদ

ভা‌লোবাসার নিদর্শনস্বরূপ সম্রাট শাহজাহান স্ত্রী‌র উদ্দেশে তাজমহল নির্ম‌াণ করেছি‌লেন। সেই তাজমহ‌লের খ্যা‌তি আজ বিশ্বজোড়া। সেই আদ‌লেই দিনাজপুর থে‌কে প্রায় ৬৫ কি‌লো‌মিটার দূ‌রে নবাবগঞ্জ উপজেলার আবতাবগঞ্জ এলাকায় নির্মিত হ‌চ্ছে বিশালাকৃ‌তির সুউচ্চ গম্বুজ, নকশাখ‌চিত কারুকাজ, চকচ‌কে মা‌র্বেল পাথর আর উচ্চমাত্রার আধু‌নিকতায় নির্মিত হচ্ছে মস‌জিদ‌।

উত্তরবঙ্গের বৃহৎ পর্যটন এলাকা স্বপ্নপূরীর কোল ঘেঁষে প্রায় এক বিঘার বেশি জায়গা নি‌য়ে চল‌ছে মস‌জি‌দের নির্মাণকাজ। এটি নির্মাণ কর‌ছেন স্বপ্নপূরীর ব্যবস্থাপনা প‌রিচালক দেলোয়ার হোসেন।

তিনি জানা‌ন, স্থানীয় মুসল্লি‌দের কথা ভে‌বে তার প্রয়াত বাবা ডা. আফতাব হোসেন আফতাবগঞ্জ বাজা‌রে এক‌টি মস‌জিদ নির্মাণ ক‌রে‌ছি‌লেন। সেখা‌নে মুসল্লি‌দের জায়গা সংকুলান না হওয়ায় নতুন ক‌রে এই মস‌জিদ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ ক‌রে‌ন তি‌নি।

সরেজমিনে গেলে দূর থেকে দেখে মনে হবে যেন ভারতের আগ্রার যমুনা নদীর ধারে স্ব‌প্নের সেই তাজমহল। যেখানে যুগে যুগে জল গড়িয়েছে অনেক। স্রোতের প্রবাহের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তাজমহলের প্রেমের স্তুতি পৌঁছেছে দু‌নিয়াজু‌ড়ে। নির্মাণাধীন এই মস‌জিদ‌টি ঠিক তাজমহল নয়, তাজমহ‌লের মতো করে গড়া।

আর এর সৌন্দর্য দেখ‌তে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই বিভিন্ন এলাকা থেকে আস‌ছেন দর্শনাথীরা। ইতোমধ্যে জুমার নামাজ পড়াও শুরু হ‌য়ে‌ছে সেখা‌নে। আগত দর্শনার্থীরা নামাজ আদায় করছেন।

জানা যায়, মসজিদটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৫ সালে বাংলা ১৪২১ সালের পয়লা বৈশাখ। কোনো বিশেষজ্ঞ আর্কিটেকচার বা প্রকৌশলী ছাড়াই নিজস্ব নকশা ও পরিকল্পনায় দে‌লোয়ার হো‌সেন গড়ে তুলেছেন নয়নাভিরাম এই স্থাপনা। নিজস্ব পরিকল্পনা ও অর্থায়‌নে তাজমহলের অনুসরণে স্থানীয় ৫০ জন নির্মাণশ্রমিক‌ এর কাজ কর‌ছেন।

চার তলাবিশিষ্ট মস‌জিদ‌টির নিচতলায় থাকবে একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরি, যেখানে থাকবে ধর্মীয় বিভিন্ন গবেষণামূলক বই। যেখান থেকে স্কলার কিংবা জ্ঞান অনুসন্ধানীরা আহরণ করবেন তাদের প্রয়োজনী জ্ঞান। থাকবে সেমিনার কক্ষ। ধর্মীয় বিতর্ক কিংবা আলোচনা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাও থাকবে। এ ছাড়া তাবলিগ জামাত কিংবা জ্ঞান অন্বেষণে আসা অতি‌থিদের থাকার সুব্যবস্থা থাকবে।

দ্বিতীয় তলা থেকে চতুর্থ তলা পর্যন্ত প্রতি‌টি ফ্লোরে ২০ হাজার স্কয়ার ফুটের এ মসজিদে প্রায় পাঁচ হাজার লোকের নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে। পাশাপাশি নারীদের জন্য রাখা হয়েছে নামাজের সুব্যবস্থাও।

১৬টি পিলারের ওপর তৈরি এ মসজিদে রয়েছে ৩২টি ছোট মিনার। চার কোনায় চারটি সুউচ্চ গম্বুজ। যেগুলোর প্রতিটির উচ্চতা ৯৭ ফুট। বাংলাদেশ ছাড়াও চীন, ভারত ও ইতালিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গ্রানাইট, টাইলস, মার্বেল পাথরসহ অন্যান্য নির্মাণসামগ্রী মসজিদটির নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে। মসজিদের দেয়াল, ছাদসহ পু‌রো মসজিদজুড়ে বিভিন্ন নকশা, আররি ক্যালিওগ্রাফি ও চাঁদ-তারাসহ বিভিন্ন ডিজাইন স্থান পেয়েছে নকশায়।

দে‌লোয়ার হো‌সেন বলেন, মসজিদ নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নির্মাণশ্রমিক‌দের নিয়ে একাধিকবার তাজমহলসহ ভারতের বিভিন্ন মসজিদ পরিদর্শন করেন তিনি। কয়েক শতাব্দী পেরোলেও তাজমহল আজও নিজস্ব মহিমায় ভাস্মর। তাই তো তাজমহ‌লের আদলেই মসজিদটি নির্মা‌ণের পরিকল্পনা করেন তি‌নি। আগামী বছরের পয়লা বৈশাখ মসজিদটি উদ্বোধনের ইচ্ছা থাকলেও এটি নির্মাণে আরও বছর দুয়েক সময় লাগবে, এমন‌টিই জানান নির্মাণশ্রমিকরা।

মস‌জি‌দের নির্মাণ ব্যয়ের বিষ‌য়ে জান‌তে চাইলে দে‌লোয়ার হো‌সেন ব‌লেন, এটার কোনো বাজেট নির্ধারিত নেই। নির্মাণকা‌জে যত টাকাই লাগুক, তিনি খরচ করবেন। তবে নির্মাণকা‌জে সং‌শ্লিষ্টরা বল‌ছেন, এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। অব‌শিষ্ট কাজ সমাপ্ত করতে সমপরিমাণ অর্থের প্রয়োজনের কথাও জানান তারা।

উল্লেখ্য, দে‌লোয়ার হো‌সে‌নের বাবা প্রয়াত ডা. আফতাব হো‌সেন স্থানীয়ভা‌বে মসজিদ, স্কুল, কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নি‌র্মাণ ক‌রে‌ছেন। বাবার ঐতিহ্য ধ‌রে রাখ‌তে এবং তার স্বপ্ন পূরণ কর‌তেই এই বিশাল স্থাপনা নির্মাণে ব্রতী হ‌ন দে‌লোয়ার হো‌সেন।

আপনি আরও পড়তে পারেন