দিনে ৩ বার চা খেলে সারবে করোনা, তথ্য কি ঠিক!

করোনাভাইরাসের সঙ্গেড় যুদ্ধ করছে এখন গোটা বিশ্ব। প্রতিনিয়তই হাজারে হাজারে বাড়ছে আক্রান্ত ‍ও মৃতের সংখ্যা। এর সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গুজব। গুজবে কান দিয়ে সর্বশান্ত হচ্ছেন অনেকে। যেখানে এ ভাইরাস ঠেকাতে চিকিৎসকরা কোন ওষুধের কথা বলছেন না। বিজ্ঞানীরাও আবিষ্কার করতে পারেননি প্রতিষেধক। এমন সময় করোনার দাওয়াই দিচ্ছেন অনেকে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে তিনবার চা খেলে নাকি ভয় নেই করোনায়। ভারতের চা বোর্ড থেকে ছড়িয়েছে এই গুজব। এমনকি রীতিমতো কিভাবে কি কি উপকরণ দিয়ে চা করতে হবে তার পদ্ধতিও বাতলে দিচ্ছেন।

গুজব তথ্যে বলা হয়েছে, ইসরায়েলে আবিষ্কার হয়েছে করোনা সারানোর এক সহজ উপায়। গরম পানি, স্লাইস করা লেবু আর বেকিং সোডা মিশিয়ে চায়ের মতো খেলেই নিমেষে শেষ হয়ে যাবে করোনাভাইরাস। কারণ এতে শরীরের পিএইচ মাত্রা বেড়ে যায়। করোনাভাইরাসের পিএইচ মাত্রা ৫.৫ থেকে ৮.৫ এর মধ্যে। আপনার শরীরের পিএইচ মাত্রা এর চেয়ে বেশি হলেই নির্মূল হবে করোনাভাইরাস। ইসরায়েলিরা এই সহজ উপায়টি শিখে নিয়ে দিব্যি আছেন। তাই তাদের মধ্যে এই ভাইরাস নিয়ে কোনো আতঙ্ক নেই।

আরেকটি গুজব ছড়িয়েছে সিএনএনের একটি ব্রেকিং নিউজকে উদ্ধৃত করে। বলা হচ্ছে, চীনের যে চিকিৎসক প্রথম বার কোভিড-১৯ নিয়ে সতর্ক করেন, তিনি নিজে এই ভাইরাসের সংক্রমণে মারা গেলেও এর নিরাময়ের উপায় বলে দিয়ে গেছেন।

তিনি নাকি বলেছিলেন, মিথাইলজ্যানথাইন, থিওব্রোমিন বং থিওফাইলিন, এই তিন যৌগ শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং এই ভাইরাসের সংক্রমণ আটকায়। এই তিনটি যৌগই পাওয়া যায় চা পাতায়। চীনারা কোভিড-১৯ আক্রান্তদের দিনে তিন বার চা খাইয়ে সারিয়ে তুলছেন। এ ভাবেই উহানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানোও আটকানো গেছে। থেমেছে কমিউনিটি সংক্রমণও।

চা করোনার প্রতিষেধক, এই তথ্য কি আদৌ সঠিক?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেসব উপায়গুলির কথা বলা হয়েছে সেগুলির স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ এখনো বিশ্বের কোথাও নেই। ইসরায়েলে কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা ১৩ হাজার ছাড়িয়েছে। চীনেও চা খেয়ে লোকে সুস্থ হয়েছেন এমন তথ্য পাওয়া যায়নি।

জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, গতকাল পর্যন্ত ইসরায়েলে মৃতের সংখ্যা ১৭১। সেই দেশে সরকারি ভাবে এই ধরণের কোন ঔষধি পানীয়ের কথা বলা হয়নি। যেভাবে লেবু আর বেকিং সোডা মেশানো পানীয় খেয়ে শরীরের পিএইচ মাত্রা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।

জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জাঁ ফিলিপ বঁজুর একটি গবেষণাপত্র বলছে, ডায়েটে পরিবর্তন ঘটিয়ে এভাবে শরীরের পিএইচ মাত্রায় পরিবর্তন ঘটানো যায় না। হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথের একটি ব্লগ বলছে, এমন কোনো প্রমাণ নেই যেখানে দেখা গেছে লেবু বা রসুন এই নতুন করোনাভাইরাস থেকে মানুষকে রক্ষা করেছে।

দিনে তিন বার চা খেয়ে চীনে করোনাভাইরাস সংক্রমণ আটকানোর যে কথা বলা হচ্ছে। চা, কফি, চকোলেটে উপস্থিত মিথাইলজ্যানথাইন। এই যৌগ ঝিমুনি কাটিয়ে শরীরকে চনমনে করতে সাহায্য করলেও তা যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ আটকায়, তার কোনো প্রমাণ নেই।

ভাইরাল হওয়া দ্বিতীয় মেসেজটিতে সিএনএনের একটি ব্রেকিং নিউজের কথা বলা হয়েছে। সিএনএন এমন কোনও খবর আদৌ প্রচার করেনি। লি ওয়েনলিয়াং বলে যে চিকিৎসকের কথা বলা হয়েছে, কভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে তিনি গত ৭ ফেব্রুয়ারি মারা যান। তিনি ছিলেন পেশায় চক্ষু বিশেষজ্ঞ। ভাইরাস নিয়ে তার কোনো গবেষণা ছিল না।

তবে এটা ঠিক যে আমাদের রোজকার অভ্যাসে গলা খুসখুস করলে গরম পানীয় দিয়ে গড়গড়া করা, গলা ব্যথা হলে আদা দিয়ে চা খেয়েই থাকি। তাতে উপকারও পাওয়া যায়। কিন্তু সে সবে যে করোনাভাইরাস আটকাবে না।

আপনি আরও পড়তে পারেন