দোহারে সমিতির নামে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

দোহারে সমিতির নামে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
https://www.youtube.com/watch?v=Ky0ueUXhSI4
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
ঢাকার দোহার উপজেলায় সমিতির নামে গ্রাহকদের লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে “যোগ বাজার”সমিতির সভাপতি মাসুদ পত্তনদারের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভুগীরা। যোগ বাজার সমিতির সভাপতি মাসুদ পত্তনদার মাহমুদপুর ইউনিয়নের হরিচন্ডি গ্রামের সামাদ মাস্টারের ছেলে।
স্থানীয়দের মাধ্যমে জানা যায়, উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের সামাদ পত্তনদারের ছেলে মাসুদ পত্তনদার প্রায় বারো বছর আগে “যোগ বাজার” নামে একটি সমিতি করেন। সেখানে গ্রাহকদের কাছ থেকে সঞ্চয় আদায় করেন তিনি। কয়েক বছর যেতে না যেতে গ্রাহকের টাকা ফেরত না দিয়ে সমিতি বন্ধ করে দেন মসুদ। অনেক গ্রাহক তার পিছনে ঘুরে টাকা না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
মাহমুদপুর ইউনিয়নের হরিচন্ডি গ্রামের সায়মা আক্তার অভিযোগ করে বলেন, মাসুদ প্রতি মাসে মুনাফা দেয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে দশ লাখ টাকা জমা নেন। যখন আমার টাকা ফেরত চাই তখন অনেক ঘুরিয়ে ৪ লাখ টাকা দিলেও বাকি ৬ লাখ টাকা এখনো দেয় নি। অনেকবার বিচার হয়েছে, অনেক বছর ধরে মাসুদের পিছনে ঘুরছি।
একই গ্রামের সামরত বেগম বলেন, আমার মেয়ের কাছ থেকে এক লাখ টাকা নিয়েছিলো মাসুদ ওর সমিতিতে। এক টাকা লাভও দেয় নি আর আমাদের টাকাও ফেরত দেয়নি। মাসুদের বাড়িতে অনেক ঘুরেছি, ওর বাবা মায়ের কাছেও চেয়েছি তাও দেয়নি। আমার মেয়েটা এখন বিদেশে গেছে। অল্প অল্প করে দিতে বলছিলাম তাও দেয় নাই।
উপজেলার কার্তিকপুর বাজারের চা দোকানদার মজনু অভিযোগ করে বলেন, অনেক আগে মাসুদের সমিতিতে সঞ্চয় জমা রেখেছিলাম। প্রায় ১১ হাজার টাকা জমা হয়েছিলো, কিন্তু এক টাকাও ফেরত দেয় নি সে।
একই বাজারের মুদি দোকান ব্যবসায়ী মানিক জানান, মাসুদের সমিতিতে প্রায় ৬০ হাজার টাকা সঞ্চয় আমার জমা হয়েছিলো। আমার টাকা ফেরত দেইনি। অনেক ঘুরেছি তার পিছনে, কিন্তু কোন লাভ হয়নি।
মুরগি ব্যবসায়ী হালিম জানান, আমারও প্রায় ১৬ হাজার টাকা জমা হয়েছিলো মাসুদের সমিতিতে। এক টাকাও ফেরত দেয় নাই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাসুদ পত্তনদার বর্তমানে মাহমুদপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক। প্রায় ১২ বছর আগে“যোগ বাজার’একটি সমিতি করেন যোগ বাজার নামে। ছোট একটি অফিসও নেন উপজেলার জয়পাড়া লটাখোলা নতুন বাজার আজাহার আলী মোজাহার শপিং কমপ্লেক্সে। বেশি টাকার মুনাফার লোভ দেখিয়ে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে টাকা আনতো তার সমিতিতে। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি সেই সমিতির কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। ঠিক তখনই গ্রাহকের টাকা ফেরত না দেয়ার অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। অনেক গ্রাহককে বছরের পর বছর ঘুরিয়েও টাকা না দেয়ার অভিযোগ রয়েছে আওয়ামীলীগ নেতা মাসুদ পত্তনদারের বিরুদ্ধে। উপজেলা সমবায় ও সমাজ সেবা অফিসে গিয়ে জানা যায় সেখান থেকে কোন ধরনের রেজিষ্ট্রেশন না নিয়েই কার্যক্রম শুরু করেছিলেন যোগ বাজারের অথচ তার প্রতিষ্ঠানের নামের নিচে গভঃ রেজিঃ নং-এস ৭৪৯১(৬৮০)২০০৮ একটি নিবন্ধন নং দেখা যায়।
সরজমিনে উপজেলার জয়পাড়ার লটাখোলা নতুন বাজারের গিয়ে জানা যায়, মাসুদের অফিস (যোগ বাজার) বেশ কয়েক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে, কিন্ত হঠাৎ মাঝে মাঝে অফিসে আসে কিছুক্ষণ খোলা রেখে আবার বন্ধ রাখা হয়। সবসময় বন্ধই থাকে। অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও মাসুদের কাছে টাকা পাবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী জানান, বিভিন্ন বাজারের অনেক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সমিতির মাধ্যমে প্রতিদিন সঞ্চয় জমা নিতো মাসুদ পত্তনদার ও তার লোকজন। কিন্তু যখন সে অফিস ছেড়ে দেয় তখন কোন কোন ব্যবসায়ীকে কিছু কিছু টাকা ফেরত দিলেও অনেক ব্যবসায়ীর টাকা সে ফেরত দেয় নি। অফিস বন্ধের পর বিভিন্ন জায়গায় থেকেও লোকজন আসতে দেখা গিয়েছে, যারা এই সমিতিতে টাকা রেখেছিলো।
এ বিষয়ে দোহার উপজেলা সমবায় অফিসার আরিসা বানু জানান, যোগ বাজার নামে কোন প্রতিষ্ঠান আমাদের এখান থেকে কোন নিবন্ধন নেয় নি। যদি কেউ নিবন্ধন না নিয়ে সমবায় সমিতি নাম ব্যবহার করে মানুষের সাথে প্রতারণা করেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এব্যাপারে দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোবাশ্বের আলম জানান, টাকা ফেড়ৎ চেয়ে যারা অভিযোগ করেছে। এবিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এবিষয়ে অভিযুক্ত মাসুদ পত্তনদার বলেন, আমরা অনেক আগে যোগ বাজার নামে একটি প্রতিষ্ঠান শুরু করেছিলাম, এটি দেওলিয়া হয়ে গেছে। আমরা অনেকের কাছ থেকে শেয়ার নিয়েছি সমিতির লস হয়েছে তাই টাকা দিতে পারিনি। এগুলা সব মিথ্যা, আমার কাছে কেউ টাকা পাবেনা। তিনি আরও বলেন, সামনে ইউপি নির্বাচন তাই আমাকে হেয় করার জন্য হয়তো কেউ এমন ঘটনা ঘটাচ্ছে।

আপনি আরও পড়তে পারেন