ধর্ষণের প্রতিবাদ করায় ধর্ষিত হলেন নারী

ধর্ষণের প্রতিবাদ করায় ধর্ষিত হলেন নারী

কয়েকদিন ধরে গুঞ্জন ছিল যেকোনো সময় বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়াকে খোলা চিঠি দেবেন ডা. জাফরুল্লাহ। অবশেষে 'বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে, খোলা চিঠি-২' শিরোনামে চিঠিটি পাঠালেন জাফরুল্লাহ। সরাসরি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না হলেও নানা সময়ে বিএনপি চেয়ারপারসকে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকেন তিনি। এতে তিনি বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে পরিচয়, বিএনপির সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, ঘোষিত কমিটি, সরকারবিরোধী আন্দোলন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক, নানা পরামর্শসহ বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন। গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে ই-মেইলে এই চিঠিটি পাঠানো হয়। পাঠকের জন্য জাফরুল্লাহর পুরো চিঠিটি তুলে ধরা হলো- ভাল কাজ করেছেন: দেশের সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনা করে ১৫ আগস্ট আপনার জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠান বাতিল করে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দেখিয়েছেন। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কী মন্তব্য করেছেন তাতে কিছু যায় আসে না। আপনি জিতেছেন। একই দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে বহু শিশুর জন্ম হবে। কিছু মানুষের মৃত্যু হবে, কতক বিয়ে হবে, তালাক হবে, এমনকি শিশুর আকিকা ও হবে। তবে ১৯৭৫ সনের ১৫ আগষ্টের ভিন্ন গুরুত্ব আছে। এদিন দেশের প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমান দুই কন্যা ছাড়া তার পরিবারের অন্য সকলে নিহত হয়েছিলেন। এটা শোকের দিন। এদিনে জন্ম দিবস পালন না করাটা অবশ্যই ভাল কাজ। খালেদা জিয়াকে ১৯৭২ সনে আগস্ট বা সেপ্টেম্বর মাসে প্রথম যে দিন দেখি তখন তার চেহারায় বুদ্ধির দীপ্তি দেখিনি। কর্নেল জিয়াউর রহমান তার পরিবারের সাথে পরিচয় করার জন্যে আমাকে তার ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের শহীদ মইনুল রোডের ৬নং বাংলোতে বৈকালিক চায়ের দাওয়াত দিয়েছিলেন। স্টাফ রোডের ১ম বাড়িতে থাকতেন কর্নেল খালেদ মোশাররফ। তাঁর সাথে দেখা করে পরে জিয়াউর রহমানের বাড়িতে পৌছি। জিয়া ডাকলেন, ‘পুতুল দেখ, বিলেতের থেকে আসা ডাক্তার জাফরুল্লাহ এসেছেন। ধীর পদে খাবার নিয়ে আসলেন ২৪/২৫ বছর বয়সী খালেদা জিয়া। সুন্দরী বটে, ধব ধবে ফর্সা চেহারা, তবে আজকের বুদ্ধির ঝলক সেদিন দেখিনি। সামরিক অফিসাররা সুন্দরী মেয়েদের বিয়ে করেন, বুদ্ধিদীপ্তি বা লেখাপড়া তাদের বিবেচ্য নয়। নাস্তার সময় খালেদা জিয়া কম কথা বললেন, কেবল খাবার উঠিয়ে দিলেন এবং বিদায়ের সময় বললেন ‘আবার আসবেন’। ছোট তারেক তার পাশে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে বিদায় জানিয়েছিল। ঐ বছর প্রতিরক্ষার দায়িত্ব নেয়া প্রধানমন্ত্রী মুজিবুর রহমান জিয়াকে বিগ্রেডিয়ার পদে উন্নীত করে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের দায়িত্ব দেন। পরে বন্দর ও নৌমন্ত্রী জেনারেল এম এ জি ওসমানীর পরামর্শে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান থেকে লেফটেনেন্ট জেনারেল ওয়াসিউদ্দিনকে ঢাকায় ফিরে আনেন এবং বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর পুর্নগঠনের দায়িত্ব দেন ও ক্যান্টনমেন্টে শৃংখলা ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নিতে বলেন। মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী অবস্থার প্রেক্ষিতে জেনারেল ওয়াসিউদ্দিন বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর কমান্ডার ইন চিফের দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করলে বঙ্গবন্ধু শফিউল্লাহ ও জিয়াকে মেজর জেনারেল পদে উন্নীত করেন এবং মেজর জেনারেল শফিউল্লাহকে কমান্ডার ইন চীফ ও মেজর জেনারেল জিয়াকে ডেপুটি কমান্ডার ইন চীফ মনোনীত করেন। জেনারেল ওয়াসিউদ্দিনকে বঙ্গবন্ধু যে দায়িত্ব দিয়েছিলেন, সে দায়িত্ব নিতে তাকে রাজি করাতে পারলে বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৫ আগস্টের শোকাবহ ঘটনাটি ঘটতো না- সামরিক বাহিনীতে শৃংখলা ফিরিয়ে আনার কারণে। কিছু ভুল করছেন: ৩৮ বছরের বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের সাড়ে চার মাস পরে জাতীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণা কমিটির বড় সাইজ বা ক্রমানুক্রমে বয়োজ্যৈষ্ঠতার হিসাব না মানা কিংবা পর্যাপ্ত নারী নেত্রীর স্থান না হওয়া অথবা নবীন তরুণদের সংখ্যাধিক্য ভুল কাজ নয়। ভুলটা হয়েছে অন্য জায়গায়। আপনার দলের কিছু চাটুকার দায়িত্ব পালনে অনিচ্ছুক, সরকারের দমন নীতিতে ভীতসন্ত্রস্থ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ যারা সম্ভবত হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর তৈল এর প্রাসঙ্গিকতা ভালোভাবে হৃদয়ঙ্গম করে দলের মহাসচিব থেকে শুরু করে পুরো জাতীয় কমিটির মনোনয়নের দায়িত্ব আপনার ওপর চাপিয়ে দিয়ে আপনাকে আপাতত দৃষ্টিতে বিশ্বাস ও সম্মান প্রদর্শন মনে হলেও প্রকৃত পক্ষে তা তাদের দলের প্রতি আনুগত্যের অভাব ও দায়িত্ব এড়ানোর প্রচেষ্টা মাত্র এবং আপনাকে সবার চোখে আপনার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার প্রমানের সুক্ষ প্রক্রিয়া। শাস্ত্রী মহাশয়ের তৈল লেখাটার অংশ বিশেষের উদ্ধতি সময়োপযোগী। তিনি লিখেছেন, যে তৈল দিতে পারিবে তাহার বিদ্যা না থাকিলেও সে প্রফেসার হইতে পারে, আহাম্মখ হইলেও ম্যাজিষ্ট্রেট হইতে পারে, সাহস না থাকিলেও সেনাপতি হইতে পারে এবং দুর্লভবাম হইয়াও উড়িষ্যার গভর্ণর হইতে পারে। এসব নেতারা প্রকৃত পক্ষে ভীত মেষ শাবক সমতুল্য। বিভিন্ন অজুহাতে তারা আপনাকে আন্দোলনের পথে না নিয়ে গুলশানের দুই বাড়ীতে অন্তরীন করে রেখেছেন। আমার মনে হয়, দীর্ঘদিন আপনি বিএনপির গঠনতন্ত্র পড়েননি এবং আপনার মনোনীত নির্বাহী কমিটির সদস্যদের অধিকাংশও পড়েননি। আপনার স্থায়ী কমিটির নেতাদের উচিত ছিল আপনাকে অযথা তেল না দিয়ে , গঠনতন্ত্রের নির্দ্ধারিত বিষয়সমূহ আপনার সামনে তুলে ধরা এবং গঠনতন্ত্র মোতাবেক আপনার ক্ষমতা সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য দেয়া। আপনাদের গঠনতন্ত্র সৃষ্টি হয়েছিল ১৯৭৮ সনে আগষ্ট মাসে। ঘোষনাপত্র ও গঠনতন্ত্র তৈরীতে জিয়াউর রহমান কে প্রভাবিত করেছিলেন প্রবাসী সরকারের বৈদেশিক সচিব খন্দকার মোস্তাক আহমেদের প্রিয়জন মাহবুবুল আলম চাষী, প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের অত্যন্ত ঘনিষ্ট সচিব ড. এম এ সাত্তার এবং চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্যারামেডিকদের সাথে আলাপ করে জিয়াউর রহমান বুঝেছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র দেশে স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার সঠিক পথে এগুচ্ছে। তাই এটা তার ১৯ দফার অন্তভূক্ত হয়েছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ভিত্তিক গণঐক্য, জনগনের গণতন্ত্র, সামাজিক অন্যায় ও বৈষম্য দূরীকরণ, মৌলিক অধিকার ও আইনের শাসন, স্থানীয় এলাকা সরকার ও বিকেন্দ্রীভূত রাজনৈতিক ক্ষমতা সৃষ্টি, নারী সমাজের প্রগতি, যুব শক্তির সদ্ব্যবহার, অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পল্লী উন্নয়ন, গণমুখী কৃষিনীতি, সমবায় ও গনতান্ত্রিক শ্রমনীতি, সার্বিক উন্নয়ন ভিত্তিক স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা, জীবন নির্ভর শিক্ষা কার্যক্রম, প্রাকৃতিক সম্পদের সদ্ব্যবহার, বাংলাভাষা ও সাহিত্যের সংরক্ষন, স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি, জাতীয় সার্র্বভৌমত্ব রক্ষার অতন্দ্র প্রহরী সশস্ত্রবাহিনী, ধর্মীয় শিক্ষা প্রভৃতি ছিল জিয়াউর রহমানের বিএনপি সৃষ্টির ২৯ লক্ষ্য ও আদর্শের অন্তর্ভুক্ত। ঘোষণায় ২৯টি লক্ষ্য ও আদর্শের কথা থাকলেও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের গঠনতন্ত্রে ১৭টি উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের কথা লেখা আছে। কোথাও বলা হয়নি বা লেখা হয়নি যে, চেয়ারপারসন একলা সকল কমিটির সদস্যদের মনোনয়ন দেবেন। চেয়ারপারসন হিসাবে খালেদা জিয়ার ক্ষমতা ১০% সদস্য মনোনয়ন দানে সীমাবদ্ধ। তবে তাঁর মত নিয়ে স্থায়ী কমিটি, জাতীয় নির্বাহী কমিটি ও জাতীয় কাউন্সিলের মিটিং ডাকতে হবে। প্রতি ছয় মাসে অন্তত একবার জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হতে হবে এবং কমিটির মেয়াদ তিন বছর এবং সদস্য সংখ্যা হবে ৩৫১জন + চেয়ারপারসনের মনোনীত ১০%। বছরে অন্তত পক্ষে একবার জাতীয় কাউন্সিলের সভা হবে এবং প্রতি তিনমাস পর জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভা হতে হবে। প্রয়োজনে চেয়ারম্যান যেকোন সময় তার ইচ্ছানুযায়ী জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভা আহবান করতে পারবেন। সকল মনোনয়ন দানের জন্য গঠনতন্ত্রে চেয়ারম্যানকে ক্ষমতা দেয়া হয়নি। তবে পরিষ্কারভাবে লিখিত আছে যে, ‘দলের প্রধান কর্মকর্তা হিসেবে চেয়ারম্যান দলের সর্বময় কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণ, তদারক ও সমন্বয় সাধন করবেন’। আপনার সিনিয়র নেতৃবৃন্দ বিশেষত একজন ছাড়া নামের আদ্যক্ষরে এম অলংকৃত নেতারা আপনাকে দিয়ে গঠনতন্ত্র ভঙ্গ করিয়েছেন, যে ক্ষমতা আপনাকে দেয়া হয়নি সে ক্ষমতা ব্যবহার করিয়ে কর্মীদের মনে ক্ষোভ সৃষ্টি করিয়েছেন। আপনাকে পক্ষান্তরে এক রোখা একনায়করূপে চিত্রিত করেছেন। তাদের উচিত ছিল আপনাকে এসে বলা, আপনার মনোনীত তালিকাটি প্রকাশের পূর্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং অন্যান্য আরও ৮/১০জন সিনিয়র নেতাদের দেখান। তা হলে বিবিধ প্রশ্নের উদ্ভব হতো না, ক্ষোভের সৃষ্টি হতো না, পরিবারতন্ত্র এত পাখা বিস্তার করতে পারত না। সুখবর যে, তারেক ছাড়া আপনার পরিবারের অন্য কেউ এই তালিকায় অর্ন্তভুক্ত হয়নি। দলে গণতন্ত্র না থাকলে যা হবার তাই হয়েছে। একলা দু’তিনজন কাছের মানুষের কান কথা শুনে এত বড় একটা জাতীয় কমিটি গঠন করার পরও সবার মন রক্ষা করতে পারেননি। পদ পাবার পরও খুশি হয়নি, যেমন হয়েছে শিরিন সুলতানার ক্ষেত্রে। নারী দলে তার উল্লেখযোগ্য কাজ আছে, সবার প্রিয় , সব সময় খালেদা জিয়ার পাশে ছিলেন তাকে করা হয়েছে স্বনির্ভর সম্পাদক। যেখানে তার প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে পারার সম্ভাবনা নেই। যুগ্ম মহাসচিব ৭ জনের মধ্যে একজন মহিলাও নেই, ঠিক একই ভুল হয়েছে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক সম্পাদকের ক্ষেত্রে -৭ জনের মধ্যে একজনও মহিলা নেত্রী নেই। ঢাকা বা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অধ্যাপিকাকে পাওয়া গেল না ? ধর্ম বিষয়ে ৩ জন সহসম্পাদকের যৌক্তিকতা কী? জাতীয় স্থায়ী কমিটিতে যুদ্ধক্ষেত্রের কোন কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধার স্থান হয়নি। স্থায়ী কমিটিতে ১৯ জনের মধ্যে মাত্র একজন মহিলা। মহাসচিব সহ বিভিন্ন সম্পাদক সংখ্যা ৬৪ জন, তন্মধ্যে মহিলা আছেন মাত্র ৪ জন। পুরো দফতরে সকল বিশিষ্ট পদ ও সহ সম্পাদক, সহ কর্মী সংখ্যা ১২২ জন,তন্মধ্যে মহিলা সংখ্যা ৭ জন। এটা দুর্ভাগ্যজনক। গঠনতন্ত্র অনুসারে জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে ন্যূনতম ১০ ভাগ মহিলা সদস্য হবার কথা যা ২০২০ সালের মধ্যে ৩৩% উন্নীত হবে। ১২২ জন কর্মকর্তা জাতীয় কাউন্সিল কর্তৃক নির্বাচিত হবার বিধান ও পালিত হয়নি। বাংলাদেশের নারীদের উন্নয়নের জন্য জিয়াউর রহমান প্রথম ১৯৮০ সনে মঈদুল ইসলামের নেতৃত্বে নিউক্লিয়ার ফিজিসিষ্ট ড: আমেনা রহমান ও আমাকে নিয়ে নারী উন্নয়ন কমিটি করেছিলেন। কমিটির সুপারিশ ছিল প্রাইমারী স্কুলে ন্যূনতম ৫০% মহিলা শিক্ষক নিয়োগ, সকল সরকারী ও অনুদান প্রাপ্ত হাইস্কুলে কমপক্ষে ২ জন শিক্ষিকা নিয়োগ, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার ক্ষেত্রে ছাত্রী সংখ্যা ক্রমে ৩৩% উন্নীত করন এবং সকল সরকারী চাকুরীর ক্ষেত্রে মহিলাদের ন্যূনতম ১০% নিয়োগ নিশ্চিত করন যা ক্রমে বাড়িয়ে ২০% পৌছার চেষ্টার কথা। জিয়াউর রহমান গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পার‌্যামেডিকদের সাইকেল চালানো দেখে উদ্ধুদ্ধ হন এবং পুলিশে মহিলা নিয়োগের সিদ্ধান্ত দেন। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের দুজন কর্মী ঢাকা পুলিশের প্রথম রিক্রুট। চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা কাউন্সিলে ১৫ জন উপদেষ্টা থাকার কথা, অবশ্য প্রয়োজনে সংখ্যা বাড়ানোর ক্ষমতা চেয়ারম্যানকে দেয়া আছে। তাই বলে কি অতিরিক্ত ৫৮ জন উপদেষ্টা। বাজারে প্রচলিত ধারনা যে স্বাধীনতার চেতনা ও মুক্ত চিন্তার পর্যাপ্ত একাডেমিকদের সাথে বিএনপির যোগাযোগ নেই। বিএনপির একনিষ্ঠ সুহৃদ অধ্যাপক এমাজউদ্দিনের নাম উপদেষ্টার তালিকায় নেই। তাকে খালেদা জিয়ার প্রধান উপদেষ্টা করলে বিএনপির লাভ হবে এবং খালেদা জিয়া দেশবাসীর প্রশংসা পাবেন। গুণী শিক্ষিত ব্যক্তিরা বিএনপির সাথে সম্পৃক্ত হতে উৎসাহী ও সাহসী হতেন গুণীজনের কদর দেখে। জাতীয় স্থায়ী কমিটি ও উপদেষ্টা কাউন্সিলের মেয়াদ নির্দিষ্ট করা নেই গঠনতন্ত্রে। গঠনতন্ত্রকে সুনির্দিষ্ট ভাবে অনুসরণ না করায় কেবল সমস্যার উদ্ভব হয়েছে, তাই নয় জাতীয় কমিটির অনেক সদস্য সুপরিচিত নন এবং অধিকাংশের সাধারণ সদস্য পদের চাঁদা দেয়া নেই। কয়েকজনকে জাতীয় কমিটির পরিবর্তে মহানগর কমিটির দায়িত্ব দিলে ন্যায়্য হতো। বার্ষিক ৫ টাকা চাঁদার বিধান কি শেষ হবে না ? বার্ষিক চাঁদার হার ন্যূনতম ১০০/-(একশত) টাকা ধার্য করা বাঞ্চনীয়। বিএনপির চাঁদা পরিশোধ করা সদস্য সংখ্যা কত ? জাতীয় পরিকল্পনা ও অর্থ, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রন, বন্যা নিয়ন্ত্রন, স্থানীয় শাসন ও পল্লী উন্নয়ন, শিক্ষা, শ্রম কল্যাণ, মহিলা ও যুব সম্প্রদায়, আন্তজার্তিক বিষয় বিশেষত ভারতীয় আগ্রাসন, অনুপ্রবেশ, একাধিক ট্রানজিট ও বাংলাদেশের সাথে সিকিম ভূটান তুল্য ব্যবহার পর্যবেক্ষন ও প্রতিরোধ বিষয়ে ‘দলের (বিএনপি) সদস্য নয় অথচ বিশেষ ক্ষেত্রে পারদশী যোগ্যতা সম্পন্ন ও সুদক্ষ ব্যক্তিদের কোঅপ্ট করার বিধান আছে’। গণতন্ত্রে এসব বিষয়ে অধ্যাপক আসিফ নজরুল, অধ্যাপক তোফায়েল আহমদ, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, অধ্যাপক আহমেদ কামাল, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক ফেরদৌস আজিম, উপাচার্য পারভীন হাসান, নারী পক্ষের শিরীন হক, সুজনের বদিউল আলম মজুমদার, হাফিজ উদ্দিন আহমদ, অধ্যাপক আইনুন নিশাত, অধ্যাপক (ড:) এম আর খান, বারডেমের ডা: এ কে আজাদ খাঁন, আর্ন্তজাতিক পানি বিশেষজ্ঞ ড: এস এ খান, অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্রাচার্য, আইন বিশেষজ্ঞ ডা: শাহদীন মালিক, বিআই ডি এসের বিনায়ক সেন, প্রাক্তন আমলা আলী ইমাম মজুমদার, সাদত হোসেন, শওকত আলী, আলী আকবর খান প্রভৃতি বিশিষ্ট জনকে কমিটিসমূহে কোঅপ্ট করলে কমিটির কাজের গুরুত্ব বাড়বে এবং বিএনপি জ্ঞান সমৃদ্ধ হবে ও ভবিষ্যতে দেশ শাসনে আপনার সুবিধে হবে। অনুগ্রহ করে কুপমন্ডুকতা পরিহার করুন। আপনি সবচেয়ে বড় ভুল করেছেন, আপনার গঠনতন্ত্রের নির্দেশ মোতাবেক ইউনিয়ন, উপজেলা, পৌরসভা ও মহানগর কমিটি সমূহ, নারীদল, ছাত্রদল ও অন্যান্য অঙ্গ সংগঠন সমূহে দুই বৎসর পরপর যথাযথ ভাবে নির্বাচন করে উৎসাহী কর্মীদের বিভিন্ন পদে নির্বাচিত হবার সুযোগ না দিয়ে। পার্টির অভ্যন্তরে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ভিত না নিলে জাতির জন্য গণতান্ত্রিক সুবিধা প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন না। ঘরকুনো কর্মীরা সন্ধ্যায় আপনার গুলশান অফিসে ভিড় করবে, কিন্তু গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আপনার ডাকে মাঠে নামবে না। এরা সুখের পায়রা এবং কতক বয়োবৃদ্ধ। তারা তাদের পরিজনকে জাতীয় কমিটিতে অন্তভূক্ত করার কাজে বেশি ব্যাপৃত থাকবেন যেমন ঘটেছে ২০১৬ সনের আপনার জাতীয় কমিটির ক্ষেত্রে। যতদিন গয়েশ্বর নিতাই তাদের মেয়েদের কমিটিতে ঢোকাতে ব্যস্ত থাকবেন, ততদিন সংখ্যালঘু রাজনৈতিক কর্মীরা বিএনপিতে ভিড়তে উৎসাহী হবেন না। বিএনপি জাতীয় কমিটিতে পরিবারতন্ত্র জিন্দাবাদ- ১০ নেতার স্ত্রী, ১১ নেতার ছেলে, ৬ ভাই বোন স্থান পেয়েছেন অথচ শিষ্টাচার বজায় রেখে যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও আপনি ছেলের বউকে জাতীয় স্থায়ী কমিটিতে স্থান দেননি। স্থায়ী কমিটিতে কমপক্ষে চারজন মহিলা অন্তর্ভুক্ত হওয়া প্রয়োজন। ৪-৬ কোটি মানুষের প্রিয় রাজনৈতিক দল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সংখ্যা গঠনতন্ত্র সংশোধন করে প্রয়োজনে ২৫জন করলে আপত্তি কোথায় ? সদস্যরা পার্টির আভ্যন্তরীন গণতন্ত্রের ভিত্তিতে ২-৩ বছরের জন্য নির্বাচিত হবেন, মনোনীত নন। চেয়ারম্যানের মনোনয়নে আসবেন ৩-৪জন মাত্র। জাতীয় কমিটিতে ‘৭১ যুদ্ধাপরাধী আবদুল আলীম ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্থান অযৌক্তিক ও ভুল সিদ্ধান্ত। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে তো কোন দলীয় রাজনীতিতে নেই। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের নিয়ন্ত্রণ: এটা সর্বজন বিদিত যে, ভারত সুকৌশলে হাসিনা সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছে এবং নিয়ন্ত্রণ করছে, ভারতের জাতীয় স্বার্থে এবং ভারতকে অখণ্ড রাখার অব্যাহত প্রচেষ্টায়। ৫ই জানুয়ারী (২০১৪)র ভোটার বিহীন নির্র্বাচনকে বৈধতা দেবার কৃতজ্ঞতায় আওয়ামী লীগ সরকার বন্ধুত্বের নামে নতজানু নীতি মেনে নিয়েছে, মধ্যে মধ্যে আপনিও ভারতের সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করছেন যা দেশবাসীর চোখে সুবিধাবাদী রাজনীতি বলে মনে হয়েছে। এই সরকারের বদান্যতায় প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে ভারতে চার বিলিয়ন ডলার রিমিটেন্স যাচ্ছে, প্রতি সপ্তাহে একজন বাংলাদেশী মারা যাচ্ছে বিএসএফের হাতে, রামপালের উল্টোদিকে পশ্চিমবাংলার সুন্দরবন এলাকা রাঙ্গাবেলীতে (যা অতীতে আমি সরজমিনে পরিদর্শন করেছি) কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র না করে মাত্র ১৫% মূলধন দিয়ে ভারত রামপালে কয়লা দিয়ে বিদ্যুত উৎপাদন করে আমাদের পরিবেশ ধ্বংস করতে উদ্ধত। আপনি এসম্পর্কে মৃদু প্রতিবাদ করেছেন, আপনার দলকে অধ্যাপক আনু মোহাম্মদের তেল গ্যাস রক্ষা কমিটির আন্দোলনে ব্যাপক ভাবে যোগ দিতে নির্দেশ দেন নি। ধারনা করা হয় যে সারা পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশী ভারতীয় গোয়েন্দার (জঅড) অনুচর রয়েছে বাংলাদেশে, প্রধানমন্ত্রীর আশে পাশে। তারা গুলশানে জঙ্গি ঘটনার প্রতিহত করেনি। বাংলাদেশ থেকে প্রত্যাগত সংখ্যালঘু হিন্দুদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেবার বিল ভারত পাশ করেছে। জেনারেল মঞ্জুর হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে দীর্ঘ কারাদন্ডের ভয় দেখিয়ে জাতীয় পার্টির এরশাদকে আওয়ামী লীগের অনুগত করিয়েছেন। ভারত যে ভাবে মাওবাদী ও অন্যান্য মুক্তিকামী দলের উপর অত্যাচারের ষ্টীম রোলার চালাচ্ছে, একই পদ্ধতিতে বাংলাদেশের স্বনির্বাচিত সরকার তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নিশ্চুপ করাচ্ছে গুপ্ত হত্যা ও ক্রসফায়ারে। ভারতের ইংগিতে ১৪-১৫ হাজার বিএনপি কর্র্র্র্র্র্র্র্মী এখনও জেলে আছে। তাদের পুরো তালিকা আজও প্রকাশিত হয়নি। অন্যান্য রাজনৈতিক দলেরও কয়েক হাজার আছে। পুলিশের ঘুষ বাণিজ্য বন্ধের বিরুদ্ধে একবারও রাস্তায় নামার চেষ্টা করেননি। আপনাকে বিব্রত করার জন্য সরকার জামাত ইস্যু প্রায়শ তুলে ধরছে। আপনি পদক্ষেপ নেবার চেষ্টা করার সাথে সাথে নতুন ইস্যু এনে যোগ করাচ্ছে। জনগণ পরিবর্তন চায়, দূর্নীতিমুক্ত সুষ্ঠ গণতন্ত্রের মাধ্যমে মৌলিক অধিকার ও আইনের শাসনের ভিত্তিতে। দেশবাসী কেন্দ্রীকতা থেকে ও মুক্তি চায়। আপনার করনীয়: আজকে আপনি জিয়াউর রহমানের সুন্দরী বালিকা বধূ নন। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর আপনার পরিশ্রম ও ধীশক্তির বলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে দুই দুইবার নির্বাচনে জয়ী করিয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, ৪-৬ কোটি বাংলাদেশের মানুষ আপনার পক্ষে দাঁড়িয়েছে। তাদের প্রতি আপনার দায়িত্ব আছে, দায়িত্ব আছে ভাল ভাবে তারেককে দেশে ফিরিয়ে এনে আপনার ন্যায় নিজ গুনে এবং সততাও পরিশ্রমে বলীয়ান হয়ে ভবিষ্যতে রাজনীতিতে আপনার স্থানটা নেবার চেষ্টা করুক সুষ্ঠ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে, দুর্নীতি ও গুন্ডামীর মাধ্যমে নয়, জিয়াউর রহমানের ন্যায় সততার ভিত্তিতে। বিএনপির গঠনতন্ত্র সংস্কার: জরুরিভিত্তিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ঘোষণা ও গঠণতন্ত্রের সংশোধন প্রয়োজন। এই নিমিত্তে অধ্যাপক এমাজউদ্দিন, দিলারা চৌধুরী, আসিফ নজরুল ও মাহবুবুল্লাহ প্রমুখকে দিয়ে কমিটি করে দিন, সময় দিন ১৫ দিন। তাদের সুপারিশসমূহ আলোচনা করুন জাতীয় কাউন্সিল ও স্থায়ী কমিটির জরুরি মিটিংএ। পরপরই ইউনিয়ন, উপজেলা ও মহানগর কমিটিসমূহ এবং ছাত্রদল, নারীদল ও শ্রমিকদলে নির্বাচন দিন। নির্বাচন হবে বিএনপির বার্ষিক ১০০ টাকা চাঁদা দেয়া সদস্যদের প্রত্যক্ষ ভোটে। ইউনিয়নের ওয়ার্ড কাউন্সিলে ৫১ জনের নির্বাহী কমিটি অযৌক্তিক। ৭১ জনের ইউনিয়ন নির্বাহী কমিটির যৌক্তিকতা কতটুকু তা বিবেচনায় নিতে হবে। ২৫ বৎসরের অধিক বয়সী কেউ ছাত্র দলের নেতৃত্বে থাকবে না। কে কোন নেতার বউ বা মেয়ে সেটা বিবেচ্য হবে না। বিবেচিত হবে ওয়ার্ডের বিএনপি সদস্যরা তাকে চিনে কিনা, তার উপর বিভিন্ন শ্রেণীর মহিলাদের ভরসা আছে কিনা। কোন নেতাকে একাধিক পদের দায়িত্ব দেয়া সমাচীন নয়। পার্টিতে আভ্যন্তরীন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করুন। এতে পার্টির সর্বস্তরে নতুন জাগরণ সৃষ্টি হবে। তারা দেশের জন্য জীবন দিতে পিছপা হবে না। যদি পার্টি তাদের পরিবারের দায়িত্ব নেয়। জেলে থাকা কর্মীদের পরিবারের সাথে অনুগ্রহ করে নিয়মিত যোগাযোগ রাখবেন। জেল থেকে বেরুলে অবশ্যই তাদের আপনার অফিসে ডেকে এনে আলাপ করবেন, সাহস দেবেন। এরূপ মিটিং অবশ্যই মহাসচিব ও আরও কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাকে সঙ্গে রাখবেন। দলে সংখ্যালঘু সদস্যদের স্বল্পতার ন্যায় বিএনপিতে বুদ্ধিজীবিদের সংখ্যার দরিদ্রতা আছে। স্থায়ী কমিটি ও উপদেষ্টাদের মেয়াদ দুই বছরের মেয়াদে সীমিত করুন। উপদেষ্টাদের বিভিন্ন কমিটির সাথে যুক্ত করুন, কতককে জেলা কমিটির সাথেও যুক্ত করে দিতে পারেন। জনগণের সনদ: দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ হবে বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী, সিনিয়র নেতা, ছাত্রদল, যুবদল ও মহিলা নেত্রীদের সাথে দীর্ঘ আলোচনা করে স্থির করা ‘জনগণের সনদ’। জনগণের সদস্যদের রূপরেখার খসড়া দুমাসের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা করে চুড়ান্ত করুন। কিছু সুপারিশ- সামরিক বাহিনীর দরে সকল শ্রমিক ও দরিদ্র পরিবারদের রেশন সুবিধা প্রদান, জীবনযাত্রা ব্যয়ের সাথে সম্পৃক্ত করে স্থির হবে শ্রমিকের বেতন । সকল শ্রেনীর জনগণের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতিটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে শুরুতে ২জন এবং ২০২৫ সনের মধ্যে চারজন গ্রাজুয়েট ডাক্তারের সার্বক্ষনিক অবস্থান নিশ্চিতকরন। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে ইসিজি, এক্সরে, আল্ট্রাসনোগ্রাফী ও অপারেশন ব্যবস্থা থাকবে। রেফারেল পদ্ধতির মাধ্যমে কঠিন রোগাক্রান্তদের মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা চালু করা হবে সুলভে বিকল কিডনী, ক্যান্সার ও হৃদরোগের চিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে। জিপির রেফারেল স্লিপ চাড়া কোন রোগী সরাসরি মেডিকেল কলেজ ও বিশেষায়িত হাসপাতালে ভিড় করতে পারবে না। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত ৪৫০টি ওষুধের মূল্য অর্ধেকে নামিয়ে আনা হবে। দেশে ওষুধের কাঁচামাল উৎপাদনে প্রনোদনা দেয়া হবে। প্রত্যেক শহরে জেনারেল প্রাকটিশনার পদ্ধতি চালু হবে যেখানে সকল নাগরিক পরামর্শ ও প্রাথমিক চিকিৎসা বিনা খরচে পাবেন। সরকারী বেতন ভুক্ত চিকিৎসক ও শিক্ষকরা কোনরূপ প্রাইভেট প্রাকটিশ বা টিউশনি করতে পারবে না। বিচারপতিদের সান্ধ্যকালীন পরামর্শ করতে দেয়া যেমন অন্যায়, ঠিক তেমনি বিঘ্ন সৃষ্টি করে সরকারী চিকিৎসক ও শিক্ষকদের প্রাইভেট প্রাকটিসে। হযরত আয়েশা, আবুবকর, ওমর , হাজী মুহাম্মদ মহসীন, ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর, সুর্য সেন, ইলামিত্র, প্রীতিলতা ওয়ার্দা, বেগম রোকেয়া, মুজিবপত্নী ফজিলাতুননেছা, সকল জাতীয় নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের বীর ও বীরাঙ্গনাদের কাহিনী পাঠ্য পুস্তকের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। নিশ্চিত করা হবে মফস্বলের স্কুল কলেজ থেকে পাশ করা ৫০% ছাত্রের স্থান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্বদ্যিালয়ের ভর্তির কেন্দ্রীকতার নিয়ম বাতিল করে সরাসরি বিভাগে মৌখিক বা লিখিত পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হতে পারবে। মাদ্রাসা শিক্ষাতে বিজ্ঞান, মুক্তিযুদ্ধ, অংক, ইংরেজী ও কম্পিউটার শিক্ষা সংযুক্ত করা হবে। সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সুষ্ঠ নির্বাচন হবে। সকল সরকারী কর্মকর্তা এবং বিচারপতিদের নিয়োগের সময় এবং প্রতিবছর তাদের পুরো সম্পদের বিবরণ জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে। এতে দুর্নীতি কমবে। গণভোটের মাধ্যমে জনগণের মতামত নিয়ে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরনের লক্ষ্যে সারা বাংলাদেশকে ১০টি প্রদেশ বা ১৭টি স্টেটে ভাগ করে নির্বাচিত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত করা হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে থাকবে পররাষ্ট্র, বৈদেশিক বাণিজ্য, বাংলাদেশ ব্যাংক, আন্ত:প্রদেশ স্টেট যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিমান ও নৌবন্দরসমূহ, বিজিবি, সামরিক ব্যবস্থাপনা, হাসপাতাল সমূহ ও কর ব্যবস্থাপনা। মেডিকেলসহ সকল শিক্ষা, পুলিশ, চিকিৎসা, আন্ত:জেলা যোগাযোগ প্রভৃতি হবে প্রদেশ বা স্টেট শাসনের অর্ন্তভুক্ত। হাইকোর্ট প্রদেশে অবস্থিত হলেও নিয়ন্ত্রিত হবে সুপ্রিমকোর্ট দ্বারা। একটি অপ্রয়োজনীয় আমলাতান্ত্রিকতার স্তরের নাম বিভাগ। বিভাগে জনগনের কোন লাভ হয় না। বিভাগ বিলুপ্তির সুপারিশ ছিল ১৯৩৪ সনে ফ্লাউড কমিশনের। প্রাদেশিক বা ষ্টেট গর্ভনর কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক মনোনীত হতে পারে বা সরাসরি স্থানীয় জনগনের ভোটেও নির্বাচিত হতে পারে। কোন রাজনৈতিক কর্মী সরাসরি খুনে জড়িত না হলে, অভিযুক্ত রাজনৈতিক কর্মী এক মাসের মধ্যে জামিন পাবে। ১০০ দিনের মধ্যে বিচার চুড়ান্ত করতে হবে। বিচারকালীন সময়ে অভিযুক্ত রাজনৈতিক কর্মী দ্বিতীয় বা প্রথম শ্রেণীর ডিভিশন পাবেন। পুলিশকে দলীয় পান্ডা হিসেবে ব্যবহার করা হবে না। স্থানীয় আইন শৃঙ্খলা রক্ষা হবে তাদের কাজ। কেবলমাত্র ঘুষ বাণিজ্যে জড়িত ও দলীয় পুলিশের ভূমিকায় অবতীর্ণ পুলিশের বিচার হবে, অন্যদের নয়। ভারতীয় সংস্কৃতি ও বাণিজ্যিক আগ্রাসন থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি পানির ন্যায্য হিসাব আদায় করা হবে প্রতিবেশী ভারত থেকে, নতুবা কোনো ট্রানজিট নয়। আপনার হাতে বেশি সময় নেই: ২০ দলের বাইরের বিরোধী দলসমূহকে একত্রিত করে বাংলাদেশে জবাবদিহিতামূলক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দেলনকে সুসংহত করার জন্য আপনার হাতে সময় আছে বড়জোর নয় মাস। সম্ভবত এই সময়ের মধ্যে আপনার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলায় রাজনীতির আলোকে বিচারের রায় বেরুবে। এই কয়েক মাস পরিশ্রম করলে জনগণের রায় আপনার পক্ষে আসার সম্ভাবনা সমধিক। ইতিমধ্যে তারেক রহমানের মামলার রায় বেরিয়েছে। অনৈতিক কমিশন নেবার মামলায় আদালত তারেক জিয়ার ৭বৎসরের জেল দিয়েছে। এটা কি সুষ্ঠ বিচারের রায় না রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত ? এর ফয়সালা ছাত্রদলের ২০-৩০ জনের মিছিলে হবে না, এতে কেবল আপনাদের শক্তির অপচয় এবং ভুল কাজ। ফয়সালা হবে মূলত: সুষ্ঠ গণতন্ত্রের আন্দোলনে এবং উচ্চ আদালতে। স্মরণযোগ্য যে, বিচারপতিদের মধ্যে প্রাক্তন ছাত্রলীগের কর্মীদের বাহুল্য রয়েছে। তা হলেও কতক জজসাহেবদের বিবেক নিশ্চয় এখনও কার্যক্ষম এবং স্বল্প সংখ্যক বিচারপতির ন্যায় বিচারে বিশ্বাসী স্বচেষ্ট রয়েছেন। মান্না, মাহমুদুর রহমান, শফিক রেহমানের জামিন না দেয়া এবং আমার দেশ ও অন্যান্য কয়েকটি মিডিয়া বন্ধ করে দেবার কারন অনুসন্ধানের জন্য ভবিষ্যতে বিচারকদের জনতার আদালতে বিচার হতে পারে। ভবিষ্যত আন্দোলনের স্বার্থে নিয়মিত ভাবে সকাল ১০টা থেকে ২টা পর্যন্ত আপনার বাড়ীতে তৃণমূল কর্মীদের সাক্ষাত দিন। কর্মীদের দেখভাল করার জন্য একজন ৫০ অনুর্ধ উচ্চশিক্ষিত, রাজনীতির ভাষা ও শিষ্টাচারের সাথে পরিচিত কিন্তু খয়ের খা নয়, এরূপ একজন মহিলা বিশেষ সহকারী হিসাবে নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন। তার বিশেষ দায়িত্ব হবে বিভিন্ন কমিটির কার্যকলাপের সার সংক্ষেপ এবং অন্তত পক্ষে ১০টি দৈনিক পত্রিকার মুখ্য সংবাদ গুলো নিয়ে আপনার সাথে প্রতিদিন আলোচনা করা। আপনার রাতের গুলশান অফিসের সময় সন্ধ্যায় করলে ভাল হবে। প্রতিমাসে আপনাকে বিভিন্ন জেলা পর্যায়ে ন্যূনতম দুটি করে জনসভা করতে হবে। আপনার ভাষণের মূল প্রতিপাদ্য হবে দেশের মেগা দুর্নীতি, ব্যাংক লুট, খায়রুল হকের মত বিচারপতিদের আর্থিক স্বার্থের বিনিময়ে জনগণের আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে রায়, সরকার মনোনীত পরিচালনা পর্যদ ও কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ৪০,০০০ (চল্লিশ হাজার কোটি টাকা সরকারী ব্যাংক থেকে লুট পাট, কুইক রেন্টাল মারফত কুইক প্রফিট যা পরে সরকারের কিছু ব্যক্তির পকেটে ফেরত আসা, কি করে ৭০০০ কোটি টাকার পদ্মা সেতুর ব্যয় ত্রিশ হাজার কোটি টাকাতে পৌঁছালো, দুর্বিসহ জীবন যাত্রার উপর নতুন করে বর্ধিত বিদ্যুত ও গ্যাস বিল, রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রের কারণে ভবিষ্যতে দেশের ক্ষতির কথা, প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বিশেষজ্ঞ সন্তানের বেতন ভাতা কত এবং কোন মুদ্রায় পরিশোধিত হয়, সেলফোন ব্যবসায়ীদের এর কে কত অংশ পায়, প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রিয় গভর্ণরের ভারতীয় আইটি এক্সপার্ট রাকেশ আস্তানার কারণে বা সম্পৃক্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভয়ানক ক্ষতি, ভারতীয় পরামর্শ সময়মত না আসায় বিডিআর বিদ্রোহে ৫৪ জন সামরিক কর্মকর্তা এবং গুলশানে জঙ্গী হামলায় ২২ জনের প্রাণহানি, প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে ভারতীয়দের ৪ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্সের পরও আন্তর্জাতিক নদীর পানির হিস্যা প্রদানে ভারতের একগুয়েমী ও অনীহা, সীমান্তে প্রতি সপ্তাহে গুলি করে হত্যা, নোয়াখালীর মহুরীর চরে স্থলসীমান্ত নিয়ে ভারত সরকারের নতুন আবদার, পানির দামে ট্রানজিট ফি প্রভৃতি জনগণকে নাড়া দেবে। একই তথ্য বিশেষতঃ ভারতের অনৈতিক কার্যকলাপের কথা বারে বারে বলতে হবে। মাত্র দুবার এ সম্পর্কে মৃদুভাবে উল্লেখ করায় ভারতীয় রাষ্ট্রদূত হর্ষবর্ধন আপনার কাছে উপস্থিত হয়েছেন। জনসভায় শক্ত ভাবে এই সব তথ্য উপস্থাপন করুন, ভারত সরকারের চিন্তায় পরিবর্তন আসতে বাধ্য। ১৯৭২ সনে মওলানা ভাসানী যে ঐতিহাসিক দায়িত্বভার নিয়েছিলেন আপনাকে সেই দায়িত্বভার নিতে হবে ‘ইসলামাবাদের জিজ্ঞির ছিড়েছি, দিল্লীর অনুগত হবার জন্য নয়’। বিভাগ বিলুপ্ত করে জিয়াউর রহমানের স্বপ্ন কেন্দ্রীকতার বিপরীতে কিভাবে ‘স্থানীয় এলাকার সরকার’ প্রদেশ বা স্টেট সৃষ্টির মাধ্যমে জনগনকে অধিকতর দেশ পরিচালনায় সম্পৃক্ত করবেন তা জনসাধারণকে অবহিত করুন। দুর্নীতির কারণে সরকারের তহবিল ফুরিয়ে গেছে বলে কি, অবসর প্রাপ্ত সরকারী কর্মচারীরা পুরো পেনশনের টাকা একবারে পাবেন না? আপনার দৃঢ়চেতা পদক্ষেপ আমাদের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত নিরাপদ হবে এবং তারেক জিয়ার দেশে ফেরার পথ সুগম হবে। জাতীয় ঐক্যে বন্ধ হবে রাষ্ট্রীয় ও ধর্মীয় জঙ্গিবাদ। জবাবদিহিতামূলক গণতন্ত্র ও সুষ্ঠ নির্বাচনের বিকল্প নেই। বুঝে সুজে সকলের সাথে আলাপ করে জামায়াত সম্পর্কে দ্রুত একটা সিদ্ধান্ত নিন। দেশবাসীর কাছে তাদের পুনরায় ক্ষমা চাইতে হবে। অধ্যাপক গোলাম আজম প্রদর্শিত ১৯৯১সনের একক তৃতীয় ধারার রাজনীতি হতে পারে জামায়াতের জন্য মঙ্গলকর কূটকৌশল। অচিরে জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্যে সম্মিলিত বিরোধীদল হিসেবে অংশ গ্রহনের আকাঙ্ক্ষায় বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, ড. কামাল হোসেন, অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদর রহমান মান্না, বাসদের খালেকুজ্জামান, জাসদের আ স ম আবদুর রব প্রমুখদের সাথে নিয়ে একমাসের মধ্যে প্রথম জনসভায় অংশ গ্রহণের ঘোষণা দিন। বিএনপির বর্তমান জোটের নেতারাতো থাকছেনই, আপনি জেলে থাকলেও সম্মিলিত বিরোধী দলের বিজয় সুনিশ্চিত। জয় হোক সুষ্ঠ জবাবদিহিতামূলক গণতন্ত্রের। পতন হবে প্রতারনার উন্নয়ন ও সরকারের মেগা দুর্নীতির। কেন্দ্রিকতা নয়, নির্বাচিত স্থানীয় সরকারই লক্ষ্য। - See more at: http://www.bd24live.com/bn/article/100868/index.html#sthash.TiDdsrJc.dpuf

কলম্বিয়ার কিশোরী ও মহিলাদের অপহরণ করে নিয়ে ধর্ষণ করার অভিযোগ রয়েছে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে। আর এ নিয়ে সেখানকার একজন নারীও প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। তবে তিনিও রক্ষা পাননি। সশস্ত্র জঙ্গিদের বর্বর যৌন অত্যাচারের শিকার হয়েছিলেন প্রতিবাদ করা সেই নারীটি। খবর-বিবিসি বাংলা।

কলম্বিয়ার সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো যে কত শক্তিশালী তারই একটি চিত্র বহন করে ওই নারীর কাহিনী।ওই নারীর নাম ‘মারিয়া’। কলম্বিয়ার বোগোতা শহরে এক নারী ‘মারিয়া’ তার রোগীদের নিয়ে ব্যস্ত থাকেন বেশিরভাগ সময়। সংঘর্ষপ্রবণ এলাকার লোকজন এখানে তাঁর কাছেই চিকিৎসা নিতে আসেন। তিনি মূলত শিকড় ও বীজ থেকে উৎপন্ন ওষুধ দিয়েই রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। তবে অন্যদের সুস্থ করে তোলার চেষ্টার সাথে সাথে তিনি নিজেকেও সুস্থ করে তুলছেন বলা যায়।

ধর্ষণের প্রতিবাদ করায় ধর্ষিত হলেন নারী

কবে নিজ এলাকা কুইবদোতে ফিরবেন এ নিয়ে স্বপ্ন দেখেন মারিয়া। ছয় বছর আগের ঘটনা, মারিয়া তখন বাস করতেন কলম্বিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে কুইবদো শহরে। দেশের অন্যদম দরিদ্র এলাকার একটি কুইবদো। সেখানে বেশিরভাগ পরিবারই আফ্রিকান ক্রীতদাসদের বংশোদ্ভূত।

‘আফ্রোমুপাজ’ নামে একটি নারী সংগঠনের নেতা ছিলেন মারিয়া। ওই সংগঠনটি সংঘর্ষে গৃহহীন হয়ে পড়া মানুষদের সহায়তায় কাজ করতো।

নারী ও শিশুদের যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন তিনি। একই সঙ্গে সশস্ত্র গ্রুপগুলোতে শিশু সৈনিকদের নিয়োগ দেয়ার বিরুদ্ধেও প্রচারণা চালাচ্ছিলেন মারিয়া।

২০১০ সালের জুলাই মাসে হঠাৎ একদিন একজন লোক আসে মারিয়ার সঙ্গে দেখা করতে। লোকটি তখন বলে যে সে শিশুদের জন্য কাপড় দান করতে চায় এবং মারিয়ার সাহায্যে অন্য এলাকাতেও এই কাপড় দিতে চায় বলে তাকে ট্রাকে তোলে লোকটি। “আমি একটুও সন্দেহ না করে তার সাথে ট্রাকে চড়েছিলাম”-বলেন মারিয়া।

“কিন্তু ট্রাকটি যখন শহর ছাড়িয়ে দূরে যেতে থাকলো আমার তখন অস্বস্তি হতে লাগলো। একসময় একজন আমার কানের কাছে বন্দুক ধরলো”। এরপর তাকে জঙ্গলে নিয়ে গেল বন্দুকধারীরা, সেখানে গিয়ে মারিয়া দেখলেন যে তার ১৩ বছর বয়সী মেয়েকেও অপহরণ করেছে তারা।

কলম্বিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে যারা পরিবেশ রক্ষায় কথা বলেন তারা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর আক্রমণের শিকার হন।এসব মিলিশিয়ার আনুষ্ঠানিক কোনও পরিচয় নেই। এক দশক আগে এদের সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় এবং এদের বেশিরভাগই অপরাধীদের দলে ভিড়ে গেছে।বিশেষ করে আমব্রেলা গোষ্ঠীর অধীনে এইউসি বা কলম্বিয়ার ইউনাইটেড সেল্ফ ডিফেন্স ফোর্সের সঙ্গে মিশে গেছে এরা, আর এই গোষ্ঠীগুলোকে অর্থ দিয়ে সহায়তা করে জমির মালিক এবং মাদক পাচারকারীরা।

মারিয়া বলছিলেন সন্ধ্যা হবার পর তারা মেয়েকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায় এবং মারিয়াকে একটি গাছের সাথে বেঁধে রাখে, তিনটি লোক তাকে পাহারা দিচ্ছিল। তাঁর মাথা থেকে রক্ত বেয়ে বেয়ে পড়ছিল। “প্রথমে আমি ভেবেছিলাম তারা আমাকে মেরে ফেলবে। কিন্তু একজন আমাকে বললো বেশি কথা বলার কারণে আমাকে শাস্তি পেতে হবে। আমি বুঝতে পেরেছিলাম তারা কী করতে চাইছে। আমি চিৎকার দিয়ে বললাম যা করার আমাকে করো, কিন্তু আমার মেয়েকে নয়”-বলছিলেন মারিয়া।

মারিয়াকে সেই দিন থেকে টানা পাঁচ দিন অনবরত ধর্ষণ করেছে পাঁচটি লোক। একসময় তিনি তিনি অজ্ঞান হয়ে যান, জ্ঞান ফেরার পর দেখেন যে তিনি কুইবদো হাসপাতালে।

মারিয়া নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পর তাঁর বড় মেয়ে সবাইকে জানিয়েছিল এবং সব জায়গায় তাঁকে খোঁজা হচ্ছিল। রাস্তার পাশ থেকে মারিয়াকে উদ্ধার করে তাঁর বড় মেয়ে।

মারিয়াকে টানা পাঁচ দিন অনবরত ধর্ষণ করেছে পাঁচটি লোক। মারিয়ার অপহৃত ছোট মেয়ে ক্যামিলাও ঘরে ফিরে আসে, সে ওই ঘটনায় প্রচণ্ড মানসিক আঘাত পেয়েছিল, ভীত সন্ত্রস্ত ছিল। তবে শারীরিকভাবে কোনও নির্যাতনের শিকার হয়নি সে।

“তারা মেয়েকে বলেছিল যে কী ঘটেছে সেটা যদি সে কাউকে বলে তাহলে তারা আবার ফেরত আসবে এবং আমাকে মেরে ফেলবে। তাই সে সে ঘটনা নিয়ে কিছুই বলেনি। অনেকদিন তার কথা শুধু হ্যাঁ ও না এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল এবং প্রায় প্রতিদিনই সে কাঁদতো”-বলছিলেন মারিয়া।

ছয় মাসের মধ্যে মারিয়া সুস্থ হয়ে উঠে এবং আফ্রোমুপাজে নিজের কাজ শুরু তরে। কিন্তু একদিন সকালে সেই আধাসামরিক বাহিনীর এক সদস্য এসে বলে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে মারিয়াকে শহর ছেড়ে যেতে হবে।“আমি শুধু জানতাম ওই শহর ছেড়ে চলে যেতে হবে”-বলছিলেন তিনি।

তারপর রাজধানী বোগোতায় বাস করা শুরু করেন মারিয়া। সেখানকার কর্তৃপক্ষ তাঁকে বুলেটপ্রুফ পোশাক, একটি মোবাইল ফোন এবং ট্যাক্সিতে চলাচলের জন্য মাসিক একটা বাজেটও নির্ধারণ করে দেয়।পাবলিক ট্রান্সপোর্টে চলাচলেও বিধিনেষেধ ছিল তাঁর। কয়েক মাস পর মারিয়ার তিন সন্তানও তাঁর কাছে চলে আসে।

কলম্বিয়ার সরকার একং ফার্ক বিদ্রোহীদের মধ্যে শান্তি প্রক্রিয়ায় অন্যতম ব্যক্তি সেখানকার একজন ক্যাথলিক বিশপ হেক্টর ফ্যাবিও হেনাও, তিনি জানাচ্ছিলেন সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে মারিয়ার মতো যেসব মানুষ কথা বলে তারা সবাই আক্রমণের শিকার হন।

ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির মতো সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো কোনও ধরনের অস্ত্রবিরতি চুক্তিতে সম্মত হয়নি।
চলতি বছরের শুরুর দিকে মানবাধিকারকর্মী, পরিবেশকর্মী এবং উপজাতিসহ ১৩জনকে হত্যা করা হয়।গত বছর প্রতি পাঁচ দিনে অন্তত একটি করে হত্যার ঘটনা ঘটতো বলে জানান মি: হেনাও।

আধাসামরিক বাহিনী, ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি বা ফার্কের মতো বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো যারা মূলত হত্যার ঘটনার সাথে জড়িত তারা কোন ধরনের অস্ত্রবিরতি চুক্তিতে যেতে রাজী হয়নি।

“মাদক পাচার বা অবৈধভাবে স্বর্ণ খননের সাথে যারা জড়িত তারা এমন কোনও মানুষ আশেপাশে চায় না যারা পরিবেশ রক্ষা করতে চায়”-বলেন মি: হেনাও।

13319705_887717598005898_3066462706435228240_n

মারিয়ার ছোট মেয়ে ক্যামিলা অপহরণের পর সাময়িকভাবে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেও এখন সে বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন নিয়ে পড়ছে। ভবিষ্যতে সে ‘ভালো রাজনীতিবিদ’ হতে চায়।

“আমি দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদ হতে চাই না, যারা সাধারণ মানুষকে গরীব বানিয়ে ফেলে”-বলছিল ক্যামেলা।
বোগোতায় মারিয়ার সন্তানেরা কোনভাবে নিজেকে মানিয়ে নিলেও, তার নিজেরই কষ্ট হচ্ছে সেই শহরে। সে তার মা, বন্ধু এবং পুরনো কাজ মিস করে।

কিন্তু এখানেও অন্য মানুষের সহায়তায় কাজ করা তার মনের রাগ এবং ক্ষোভকে কিছুটা হয়তো সাহায্য করছে।
মারিয়া বলেন “যা ঘটেছে তা আমি পরিবর্তন করতে পারবো না। ভুলতেও পারবো না কারণ আমার শরীর প্রতিনিয়ত সেই ঘটনা মনে করিয়ে দেয়”।

মারিয়া সব ভুলে যেতে চান এবং একটা সুন্দর আগামীর স্বপ্ন দেখেন। তিনি তাঁর শহর কুইবদোতে ফিরে যেতে চান -“জানিনা কবে পারবো যেতে। আমারতো আগামীকালই চলে যেতে ইচ্ছে করে, কিন্তু আমি জানি না সেই দিন কবে আসবে!”

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment