নওগাঁয় অনুমতি ছাড়াই পাউবোর মাটি কেটে বিক্রির মহোৎসব; নেই কোন পদক্ষেপ

নওগাঁয় অনুমতি ছাড়াই পাউবোর মাটি কেটে বিক্রির মহোৎসব; নেই কোন পদক্ষেপ

নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁয় তুলশীগঙ্গা নদী খননের পর তীরে মজুদ করা মাটি কেটে বিক্রি করছে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের নেতারা। মেশিন দিয়ে মাটি কেটে প্রতিদিন শত শত টাক্টরের মাধ্যমে বিভিন্ন ভাটা এবং নিচু জায়গা উচু করার কাজে এই মাটিগুলো মানুষের কাছে প্রতি গাড়ি মাটি ৫শত-৬শত টাকা করে বিক্রি করছে স্থানীয় ইউপি আ’লীগের নেতারা। অপরদিকে সরকারের কোটি টাকার এই সম্পদ মাটি দিনে-দুপুরে হরিলুট হওয়ার বিষয়ে কোন কিছুই জানা নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তার।

এই মাটি কাটার দৃশ্য সদর উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের ইলশাবাড়ি নামক স্থানের তুলশীগঙ্গা নদীর তীরের। গতবছর তুলশীগঙ্গা নদী খনন করার পর সেই মাটিগুলো নদীর দুই তীরের জমির উপর মজুদ রাখা হয়। এরপর থেকে বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা প্রভাব খাটিয়ে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই মাটিগুলো মসজিদ, মন্দির ও মাদ্রাসার কাজে ব্যবহারের নাম করে বিক্রি করে আসছে। ইতিমধ্যেই ওই এলাকার অন্যান্য স্থানে মজুদ করা মাটিগুলোও বিক্রি করা প্রায় শেষের দিকে। অথচ এই মাটি সংরক্ষন ও রক্ষনাবেক্ষনের জন্য একটি কমিটিও রয়েছে। গত বছর অবৈধ ভাবে মাটি কাটার অভিযোগে উপজেলা প্রশাসন একাধিক ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পরিচালনা করে। তবুও থেমে নেই অবৈধ ভাবে মাটি কাটার কাজ। গত কয়েকদিন যাবত তুলশীগঙ্গা নদীর ইলশাবাড়ি নামক স্থান থেকে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের নাম করে দেদারছে মজুদ করা মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে।

রোববার সরেজমিনে সেখানে গিয়ে জানা যায় যে, সদর উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়ন পরিষদের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান খুরশিদ আলম রুবেল ইউনিয়ন আ’লীগের নেতৃবৃন্দকে বিভিন্ন মানুষের জমির উপর রাখা মাটিগুলো কিনে নিয়ে বিক্রি করার অনুমতি দিয়েছেন। আর তার অনুমতিতেই নেতারা এই মাটি কেটে বিভিন্ন ইট ভাটা ও মানুষের কাছে বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। অপরদিকে ফসল নষ্ট করে মাঠের মধ্যদিয়ে মাটি বহন করার কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন কৃষকরা। আর অপরিকল্পিত ভাবে ট্রাক্টরে করে বিভিন্ন সড়ক দিয়ে মাটি বহন করার সময় পাঁকা সড়কগুলোর উপর মাটি পড়ে চলাচলের সময় দুর্ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়তই। বিশেষ করে আকাশের একটু বৃষ্টি হলে পাঁকা সড়কের উপর পড়ে থাকা মাটিতে কাঁদা সৃষ্টি হয়ে মোটরসাইকেলসহ সকল প্রকারের যানবাহন চলতে গিয়ে ঘটতে পারে বড় বড় দুর্ঘটনার। সেদিকেও নজর নেই কারো।

এই বিষয়ে চন্ডিপুর ইউনিয়ন পরিষদের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান খুরশিদ আলম রুবেল মুঠোফোনে জানান, ইউনিয়ন আ’লীগের নেতাদের জমির মালিকের কাছ থেকে মাটি কিনে বিক্রি করার অনুমতি দিয়েছি। এই বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়েছে। এছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেই এই মাটি বিক্রি করা হচ্ছে। কিছু মাটি মসজিদ, মন্দির ও মাদ্রাসার কাজে আর কিছু মাটি ইটভাটায় বিক্রি করার পরামর্শ দিয়েছি।

এই বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মির্জা ইমাম উদ্দিনের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলে ফোন রিসিভ না হওয়ায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফউজ্জামান বলেন নদী খনন করার পর মজুদ করে রাখা মাটির মালিক একমাত্র সরকার। এই মাটি কেউ নিতে চাইলে যথাযথ কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদনের মাধ্যমে শুধুমাত্র মসজিদ, মন্দির কিংবা মাদ্রাসার মতো প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নকল্পে কিছু পরিমাণ মাটি ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু কেউ মাটি কেটে বিক্রি করার ক্ষমতা রাখে না। আমি এই মাটি কাটার বিষয়ে কোন কিছুই জানি না। কেউ আমাকে লিখিত ভাবে আবেদনও দেননি এবং কেউ বিষয়টি জানায়নি। আমি দ্রæত ঘটনাস্থলে লোক পাঠিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

আপনি আরও পড়তে পারেন