নতুন জটিলতায় ঢাকা জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণ

সাত বছর আগে উদ্যোগ নিয়েও শেষ করা যায়নি ঢাকা জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ। উদ্যোগের পর থেকে যে জমিতে কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল, তা অবৈধ দখল থেকে মুক্ত করা যায়নি। বাধ্য হয়ে নতুন স্থান খুঁজছে মন্ত্রণালয়। ফলে কবে নাগাদ এই কমপ্লেক্স নির্মাণ হতে পারে, তা নিয়ে শঙ্কা ও জটিলতা দেখা দিয়েছে।

তবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আশা করা হচ্ছে, চলতি ডিসেম্বর মাসেই জমি নির্ধারণ করা যাবে। এরপর শুরু করা যাবে কমপ্লেক্স নির্মাণের কাজ।

২০১০ সালের জুলাই মাসে দেশের ৪১ জেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। দু’বছর পর বাদ পড়া জেলাগুলোসহ মিলিয়ে ৬৪ জেলায় কমপ্লেক্স নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদকাল ধরা হয় ২০১৭ সালের জুন মাস। কিন্তু মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ৫১টি কমপ্লেক্স নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। ৯টি কমপ্লেক্সের নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। তবে জটিলতা রয়েছে চারটি কমপ্লেক্স নির্মাণ নিয়ে। এর মধ্যে ঢাকা জেলা কমপ্লেক্স নির্মাণ নিয়ে রয়েছে সবচেয়ে বড় জটিলতা। কারণ, এই কমপ্লেক্সের জমিই এখনো অনির্ধারিত। মূলত কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য পূর্ব নির্ধারিত স্থান বেদখল হয়ে থাকায় নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারেনি মন্ত্রণালয়। বর্তমানে অন্যত্র এটি নির্মাণ করার পরিকল্পনা করছে মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ড. মইনুল হক আনসারী রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘কমপ্লেক্স তৈরির জন্য আগের যে জায়গা নির্ধারিত ছিল সেটিতে হচ্ছে না। অন্যত্র সেটি নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। জায়গাটি এখনো সুনির্দিষ্ট না হওয়ায় বলা যাচ্ছে না। তবে আমি আশা করছি এ মাসেই সেটি নির্ধারিত হবে এবং প্রাথমিক কাজ শুরু হবে।’

মইনুল হক বলেন, ‘ভবনের জন্য পাঁচতলা ফাউন্ডেশন করার কথা রয়েছে। তবে ভবন আপাতত তিনতলা করা হবে। বাকিগুলো পরে করা হবে। এছাড়া অন্যান্য জেলার ভবনগুলোর কার্যক্রম প্রায় শেষ হয়ে আসছে।’

সূত্র মতে, প্রকল্পের অধীনেই ঢাকা জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ করা হবে। শুরুতে ঢাকা জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন নীলক্ষেতের কাঁটাবনে ৫ কাঠা জমি সরকার থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু নির্ধারিত জমিতে অবৈধ স্থাপনা তৈরি করে দখল করে রাখে কয়েকজন ব্যক্তি ও কিছু প্রতিষ্ঠান।

নির্ধারিত স্থান বেদখল হওয়ার বিষয়টি অবহিত করে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় থেকে ঢাকা জেলা প্রশাসককে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয় ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে। একই সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ঢাকা কমান্ড কাউন্সিলকেও এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। কিন্তু চিঠি দেওয়ার পরেও কমপ্লেক্সের জন্য নির্ধারিত স্থান দখলমুক্ত হয়নি। এসব কারণে ভবন নির্মাণের জন্য স্থাপত্য নকশা তৈরি ও সয়েল টেস্ট করা সম্ভব হয়নি। আর এ কারণে দরপত্র আহ্বানও করতে পারেনি মন্ত্রণালয়। অবশেষে ২০১৭ সালের শেষের দিকে এসে সেটি অন্যত্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়।

অভিযোগ রয়েছে, মোজাফফর হোসেন নামের জনৈক প্রভাবশালীর দখলে রয়েছে বেশিরভাগ জমি। এছাড়া কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান বছরের পর বছর অবৈধভাবে নির্ধারিত জমিটি দখলে রেখে ভোগ করছে। এর মধ্য রয়েছে নিশি এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড প্রিন্টার্স, যশোর মোটর ওয়ার্কার্স, একতা অটো, টোকিও ইঞ্জিনিয়ারিং, সাদিয়া টায়ার নামের প্রতিষ্ঠান। এছাড়া সেরাজুল হক, সুরুজ, আলাউদ্দিন, আইন উদ্দিনসহ কয়েকজন ব্যক্তিও রয়েছেন।

প্রসঙ্গত, প্রকল্পের অধীনে ভবনের নিচতলায় মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে মার্কেট তৈরি করা হবে। এই মার্কেটে কমপক্ষে ৮টি দোকান থাকবে। দ্বিতীয় তলায় দুই হাজার বর্গফুটের একটি কমিউনিটি সেন্টার থাকবে। তৃতীয় তলায় জেলা মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সদর দপ্তর হবে। এখানে নির্বাচিত জেলা কমান্ড কাউন্সিলের দাপ্তরিক কাজ হবে। তৃতীয় তলায় একটি কক্ষে লাইব্রেরিও থাকবে।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment