পরিবহন ধর্মঘটে বিপাকে বিদেশফেরত যাত্রীরা

পরিবহন শ্রমিকদের ডাকে শুরু হওয়া ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘটে বিপাকে পড়েছেন বিদেশফেরত যাত্রীরা। ব্যক্তিগত গাড়ি না থাকায়, গাড়ি ভাড়া বেশি হওয়ায় বিমানবন্দর থেকে ঢাকার বাইরের গন্তব্যে যেতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বেশি। বিমানবন্দরের ট্যাক্সি সার্ভিস চালু থাকলেও ধর্মঘট আহ্বানকারী শ্রমিকদের সড়কে অবস্থানের কারণে বিপত্তির আশঙ্কায় অনেকেই যেতে চাচ্ছেন না। দুই-চারজন যেতে চাইলেও ভাড়া চান কয়েক গুণ। অনেকেই ঢাকার বাইরে বাস চলছে না শুনে বিহ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।

সম্প্রতি জাতীয় সংসদে পাস হওয়া ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’-এর কয়েকটি ধারা সংশোধনসহ আট দফা দাবিতে রবিবার (২৮ অক্টোবর) সকাল থেকে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে গণপরিবহন শ্রমিকদের ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট শুরু হয়েছে। এ ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন স্থানে নৈরাজ্যের ঘটনা ঘটেছে।
স্বামীর মৃত্যুর খবর শুনে সৌদি আরব থেকে দেশে এসেছেন পারুল বেগম। রবিবার বিকেলে তিনি এমিরেটসের একটি ফ্লাইটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। এয়ারপোর্ট ইমিগ্রেশন শেষ করে ক্যানপিতে অসহায় হয়ে বসে ছিলেন। এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে শুনেছেন, পরিবহন ধর্মঘট, বাস চলছে না। গাড়ি ভাড়া করে যাওয়ার সামর্থ্য নেই। দুশ্চিন্তায় প্রায় কান্না-কান্না অবস্থা তার।

জানতে চাইলে পারুল বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার স্বামী চার দিন আগে মারা গেছেন। তার খবর শুনে দেশে ফেরত আসছি। যে জায়গায় কাজ করতাম তারা বেতন দেয়নি। তাই খালি হাতে আসতে হয়েছে। গাড়ি ভাড়া করে নিয়ে যাওয়ার মতো টাকা নাই। বাস নাকি চলে না, এখন যাবো কেমনে? বগুড়ার ট্রেন সকালে আর রাতে পাওয়া যায়। এখন রাত ১০টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে দেখি তারপর যদি যেতে পারি।’ভাইকে বিমানবন্দর থেকে নিতে সাভার থেকে এসেছেন জহির। পরিবহন ধর্মঘট থাকায় গাড়ি ভাড়া করে আসতে হয়েছে তাকে। সাভার থেকে এয়ারপোর্ট আসা-যাওয়ার জন্য গাড়ি ভাড়া করতে হয়েছে ছয় হাজার টাকায়। তিনি বলেন, ‘সবার পক্ষে তো গাড়ি ভাড়া করা সম্ভব নয়। বাসে চলাচল করলে সুবিধা হয়। ভাবছিলাম এয়ারপোর্টে গিয়ে গাড়ি ভাড়া করে নিয়ে আসবো। কিন্তু এয়ারপোর্টে এসে যদি গাড়ি না পাই, এজন্য গাড়ি ভাড়া করে নিয়ে আসছি।’

পরিবহন ধর্মঘটের অজুহাতে সিএনজি অটোরিকশার ভাড়াও আকাশচুম্বী। মালয়েশিয়া থেকে ফেরত আসা এক যাত্রী ধানমন্ডি যেতে চাইলে তার কাছে ভাড়া চাওয়া হয় ৬০০ টাকা। এ নিয়ে অনেকটা আক্ষেপ করেই বিমানবন্দর ত্যাগ করেন তিনি।এয়ারপোর্ট ট্যাক্সি ক্যাব সার্ভিসের এক শ্রমিক জানান, আজ প্রচুর ট্যাক্সি সার্ভিসের চাহিদা আছে। কিন্তু ভাড়া নির্ধারিত আছে। তাই বেশি নেওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু সবার পক্ষে তো সেই ভাড়া বহন করা সম্ভব হয় না। তাই একই গন্তব্যে কয়েকজন যাত্রী হলে তারা একসঙ্গে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আজকে আমাদের কয়েকটি গাড়ির ড্রাইভারের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়েছে। গায়ে, মুখে মবিল মারসে, আমরাও তো পরিবহন শ্রমিক নাকি? মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে সার্ভিস চালু রাখা হইসে।’

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সারাদেশে আহ্বান করা ৪৮ ঘণ্টার ‘কর্মবিরতি’ চলবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment