পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১৮ বছরেও প্লট বুঝে পায়নি গ্রাহকরা

পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১৮ বছরেও প্লট বুঝে পায়নি গ্রাহকরা

নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জ ঃদ্বৈত বরাদ্দের জটিলতায় ঝুঁলে আছে একাধিক প্লট ।সমাধান না করে পদে পদে হয়রানীর অভিযোগ গ্রাহকদের প্লট বুঝে পাননি পূর্বাচলের গ্রাহকরা। এরই মধ্যে ঘোষনা হচ্ছে বাড়ি না বানালে বরাদ্ধ বাতিল করা হবে। প্লট বুঝে না পেলে বাড়ি বানাবো কেমন করে , বলছিলেন একজন ভুক্তভোগি গ্রাহক ডা. মোসলেমা আক্তার। এমনই অভিযোগ আরো অনেকেরই। দ্বৈত বরাদ্দের জটিলতায় ঝুঁলে আছে একাধিক প্লট । সমাধান না করে পদে পদে হয়রানীর অভিযোগ গ্রাহকদের।
সরকারি চাকরীজীবি হিসেবে অধ্যাপক ডা. মো. সহিদুর রহমান রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)’র পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে সাড়ে ৭ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দ পান ২০০৪ সালে। এর আগে ২০০৩ সালে উত্তরা আবাসিক এলাকায় ৩ কাঠার আরেকটি প্লট বরাদ্দ পান তিনি।
পূর্বাচলের প্লটের সকল টাকা পরিশোধের পর ২০১৮ সালের ২১ জানুয়ারী উত্তরার প্লটটি বাতিল করে পূর্বাচলের প্লটটি রেজিস্ট্রার করার আবেদন করেন তিনি। কিন্তু ২০২০ সালে ডিসেম্বরে তার নামের দু’টি প্লট বরাদ্দের কথা বলে উত্তরা প্লট রেখে পূর্বাচলের প্লটটি বাতিল করে দেয় রাজউক।
পরবর্তিতে ২০২১ সালে গণ শুনানীর মাধ্যমে পূর্বাচলের প্লটটি পুন:বহালের আবেদন করেন তিনি। ২০২২ সালের ৩১ মে উত্তরার প্লটটি বাতিল করে পূর্বাচলের প্লটটি অধ্যাপক ডা. মো. সহিদুল রহমানের নামে পুন:বহাল করে রাজউক। তবে প্লটটি নিজের নামে দলিল করতে গিয়ে দেখেন পূর্বাচলের প্লটটি মো. রফিক নামের এক ব্যক্তির নামের বরাদ্দ দেয়া। প্লটের সকল টাকা পরিশোধ করার পরেও ১৮ বছরেও নিজের বরাদ্দের প্লটটি বুঝে পায় নি সহিদুর রহমান। উল্টো বিভিন্ন সময় হয়রানী ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বলে জানান তিনি।
অধ্যাপক ডা. মো. সহিদুর রহমান বলেন, ‘রাজউকের কিছু অসৎ কর্মকর্তাদের কারণে আমাদের এই হয়রানী করা হচ্ছে। সাড়ে ৭ কাঁঠা প্লটের জন্য এ পর্যন্ত ১৭ লাখ টাকা পরিশোধ করেছি। যাবতী সকল টাকা পরিশোধ করার পরেও গত ১৮ বছরেও প্লটি বুঝে পায় নি। রাজউকের একটি অসাধু চক্র পরিকল্পিত ভাবে আমাকে নানাভাবে হয়রানী করছে। তাই গত বছর ২০ সেপ্টেম্বর পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের কোড নম্বর ১২০২৩, আই ডি নম্বর-০২-০৪১০-০১২ প্লটটি লিজ ডিড করার আবেদন করেছি। কিন্তু গত চারমাসেও আমার বিষয় নিষ্পতি করেনি রাজউকের কর্মকর্তারা।’
জানা গেছে, দ্বৈত বরাদ্দের জটিলতার কারণে এভাবে একাধিক প্লটের মালিকানা ঝুঁলে আছে। একই প্লট দুই ব্যক্তিকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে রাজউক থেকে বলা হচ্ছে এই জটিলতা সমাধানে কাজ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে একই প্লটের দুজন মালিকানা দাবির পর কর্তৃপক্ষ প্রথম বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিকে বৈধ ঘোষণা করছে। তবে বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিকে হতাশ না করে খালি পাওয়া সাপেক্ষে তাকেও প্লট বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান কর্মকর্তারা। কিন্তু কোন প্লট, কবে খালি হবে ও কবে পাওয়া যাবে এর কোন সঠিক সময় বলতে পারছে না কর্মকর্তারা। তাই রাজউকের এক অসাধু চক্র গ্রাহকদের পদে পদে হয়রানী করছে ভুক্তভোগীরা জানান।
এ বিষয়ে অধ্যাপক ডা. মো. সহিদুর রহমান বলেন, ‘রাজউকের একটি অসাধু চক্র পরিকল্পিত ভাবে আমার প্লট নিয়ে এই জটিলতা তৈরী করেছে। আমার প্লটটি অন্য জনের নামের বরাদ্দ দিয়ে আমাকে বলছে খালি হলে প্লট দিবে। তবে কোথায় দিবে ও কিভাবে কিছুই বলছে না। আর বিভিন্ন সময় আমাদেরকে ঘুরানো হচ্ছে। আমার মত আরও অনেকেই এভাবে ঘুড়ানো হচ্ছে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না রাজউক।’
তিনি বলেন, ‘আমার প্লট বাতিল করা মাত্রই আমি পুনর্বহালের আবেদন করি, সেই অসাধু চক্রটি তা জানে। প্লটের ব্যাপারে আমার আপত্তি আছে জানিয়ে আবেদন করেছি, কি সিদ্ধান্ত হবে তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু সেই সময় পর্যন্ত অপেক্ষা না করে প্লটটি তড়িঘড়ি করে কারো নামে লিজ ডিড করা হয়েছে তা বিধিবিধানের পরিপন্থি।’ তাই এই অসাধু চক্রটিকে চিহ্নিত করে শাস্তির আবেদন করেছেন বলে জানান তিনি।
রাউজক সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালের জুলাই মাসে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও গাজীপুরের কালীগঞ্জের ৬ হাজার ২২৭ একর জমিতে বাস্তবায়ন শুরু হয় পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প। তিন দফা সময় বাড়িয়ে ২০১০ সালের মধ্যে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা ছিল। এরপর আরও দুই দফা সময় বাড়িয়ে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়। তাও সম্ভব হয়নি। এরপর ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করে একপর্যায়ে ২০২১ সালের জুনে শেষ করার কথা বলা হয়। এ মেয়াদও এক বছর বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। সর্বশেষ পুরো প্রকল্পটি ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে বলে প্রকল্পের সংশ্লিষ্টরা জানান।
এ প্রকল্পে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ২৬ হাজার ২১৩ টি আবাসিক প্লট রয়েছে। এসব প্লট সবই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্লটের মালিকানা কাগজপত্রেও দেওয়া হয়েছে। ফলে একই প্লট দুই ব্যক্তির নামে গেছে। এটি মূলত এমআইএস শাখা ও পূর্বাচল নতুন শহরের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের উদাসীনতা ও অনিয়মের কারণে ঘটেছে বলে দাবি করেছে রাজউকের একটি সূত্র। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, এখন
আর এমনটি হওয়ার সুযোগ নেই। এমআইএস শাখা তথ্যভান্ডার আধুনিক করা হয়েছে। ফলে একই প্লট দুবার বরাদ্দ পুরোপুরি বন্ধ হয়েছে।
এ বিষয়ে রাজউকের চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা বলেন, ‘পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের শুরু দিকে অসতর্কতার কারণে কিছুটা ঝামেলা হয়েছিলো। কিন্তু এখন অনেকটা সহজ হয়েছে। একই প্লট একাধিক ব্যক্তির নামে বরাদ্দ থাকলে তা সমাধান করা হচ্ছে। প্রথম বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তির বরাদ্দপত্র বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এরপর আমাদের হাতে থাকা খালি প্লট পাওয়া সাপেক্ষে অন্যজনকেও বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া রাজউকের এমআইএস (তথ্য যাচাই-বাচাই পদ্ধতি) কিছুটা সমস্যা ছিলো তা সমাধান করা হয়েছে।

 

আপনি আরও পড়তে পারেন