পেয়ারা চাষ করে লাভবান স্বল্প শিক্ষিত যুবক

পেয়ারা চাষ করে লাভবান স্বল্প শিক্ষিত যুবক
জসীমউদ্দীন ইতি ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি:
মাধ্যমিকে পড়াশোনা করা অবস্থায় বেশ ভালো ছাত্র ছিলেন পারভেজ। স্বপ্ন ছিল উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ শেষে চাকরি করবেন। তবে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেই পড়াশোনার ইতি টানতে হয় তাকে। পরিবারের হাল ধরতে শুরু করেন ইলেক্ট্রনিক্সের ব্যবসা।
শুরু থেকে ব্যবসা ভালোই চলছিল পারভেজের। সব খরচ বাদ দিয়ে লাভ আসছিল সন্তোষজনক। তবে মহামারি করোনায় বন্ধ হয়ে যায় তার একমাত্র আয়ের উৎস। ব্যবসায় হতে থাকে লোকসান। পরিবারের চাহিদা মেটাতে অনবরত হিমশিম খেতে হতো তাকে।
ব্যবসায় ক্ষতি হওয়ার পরও করোনা সময়ে বসে না থেকে পারভেজ জমি লিজ নিয়ে শুরু করেন পেয়ারা বাগান। বছর যেতে না যেতেই ফলনে ভরে যায় তার বাগান। আর আশানুরূপ দাম পেয়ে বদলে তার যায় ভাগ্য। এখন তিনি পেয়ারা বাগান করে লাখপতি।
ঠাকুরগাঁও পৌরশহরের ১২নং ওয়ার্ডের ছিট চিলারং গ্রামের আমিনুর রহমানের ছেলে পারভেজ খান। জেলার সদর উপজেলার বুড়িবাধ এলাকায় সাড়ে চার একর জমি দশ বছর লিজ নিয়ে শুরু করেছেন বাগান। পেয়ারা, কূল, পেঁপে, আপেল, মাল্টা, ডালিম ও সবেদাসহ অনেক ফলের বাগান দিয়ে চমক সৃষ্টি করেছেন তিনি। ইতোমধ্যে কয়েক দফায় বাগান থেকে তার আয় হয়েছে লক্ষাধিক টাকা। সৃষ্টি হয়েছে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান। তাকে দেখে বাগান করার উদ্যোগ নিতে আগ্রহী হচ্ছেন অনেক বেকার যুবক।
বাগান দেখতে আসা কলেজ শিক্ষার্থী আফরোজ আহমেদ বলেন, কয়েকদিন আগে জানতে পারলাম এখানে একটি বড় বাগান হয়েছে। শোনার পর থেকে দেখার খুব আগ্রহ জন্মেছিল। তাই আজ সরাসরি আরেক বন্ধুসহ বাগানে এসেছি। সত্যি কথা বলতে দেখে মনটা জুড়িয়ে গেল। পেয়ারা আর বরই দেখে তো লোভ সামলাতে পারলাম না। আর প্রচুর পরিমাণ ফল হয়েছে গাছগুলোতে। বেশ ভালো লাগলো।
পারভেজের বন্ধু ইউসুফ আলী বলেন, আমি তার বাগানের শুরু থেকে তার সঙ্গে আছি। কয়েকটা গাছ দিয়ে সে তার বাগান শুরু করে। আমি শুরুতে ওকে অনুৎসাহিত করতাম। বলতাম কী দরকার বাগান করার। এগুলো করে কোনো লাভ হবে না। অযথা সময় নষ্ট করে ক্ষতি ডেকে আনিস না। ধীরে ধীরে পারভেজ আমার সে ধারণা পাল্টে দিয়েছে। এখন সে বাগান করেই লাখ লাখ টাকা আয় করছে। তার বাগানের ফলন দেখে আমি নিজেই এখন বাগান করতে আগ্রহী হয়ে উঠছি। তার কাছে আমি নানা পরামর্শ নিচ্ছি। চারার বিষয়েও বলে রেখেছি৷
বাগানে কাজ করা শ্রমিক গুরুদাস বলেন, মুই শুরু থেকে বাগানডাত কাজ করেছু। গাছ দেখাশোনা করা, স্প্রে করা, ফল গাছ থেকে পারা সব কাজ করু। এইঠে থেকে যে টাকাটা পাও সেইটা দিয়া মুই সংসারের খরচ চালাও। খেত বাড়িত দিন হাজিরা চাহিতে এইঠে কষ্ট কম। মাঝেমধ্যে ফের পেয়ারা, বরইসহ ফলমূল খাওয়া যাচে।
বাগানে পেয়ারা কিনতে আসা রিফাত আহমেদ বলেন, আমি পল্লী বিদ্যুৎ এলাকা থেকে বাগানে পেয়ারা নিতে এসেছি। নিজে গাছ থেকে পেরে নিতে পারব সেজন্য এখানে আসা। এখানে এসে খুব ভালো লাগলো। দেখে শুনে ফরমালিন মুক্ত পেয়ারা কিনতে পারলাম। সেই সঙ্গে বরই আর পেয়ারা তরতাজা খেতে পারলাম। মনটাও সবুজ বাগানে তৃপ্তি পেল।
তরুণ উদ্যোক্তা ও বাগানের মালিক পারভেজ খান বলেন, আমি মূলত ইলেকট্রনিক্সের ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম। করোনার সময় ব্যবসা একেবারে শেষ হয়ে যায়। পরক্ষণে ভাবতে শুরু করলাম সবকিছু সমস্যা হলেও কৃষিখাত স্থবির হবে না। তখন থেকে বিভিন্ন জায়গার বাগানগুলো দেখার জন্য যেতাম। প্রথমে যদিও বিভিন্ন ফসল আবাদ করি। পরে পেয়ারা, বরই সহ আরও যে ফলগুলো রয়েছে সেগুলোর চারা রোপন করি। আমার আশা ছিল কিভাবে ব্যবসার মতো ফল বিক্রি করে বারো মাস আয় করা যায়। সে কারণে মূলত ফলের বাগানে আসা। তবে আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো ফলন পেয়েছি। সেই সঙ্গে বরই ও সাথী ফসলের আয় দিয়ে বাগানের সকল খরচ বহন করতে পেরেছি। সেই সাথে লক্ষাধিক টাকা আয়ও হয়েছে। পেয়ারায় ফলন বেশ ভালো এসেছে। যদি খুব কম দামও হয় তবুও ১৫-১৬ লাখ টাকা আয় করতে পারব ইনশাআল্লাহ। বাগান দেখাশোনা করাসহ আমার এখানে ৭ জন শ্রমিক অনবরত কাজ করে থাকেন। কখনো আবার সংখ্যাটা বাড়ে। আমার ব্যক্তিগত স্বপ্ন হলো বাগানটাকে আরও বড় করা। সেই সঙ্গে আরও অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। আর কেউ যদি নতুন করে বাগানের প্রজেক্ট শুরু করতে চায় সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে আমি তার পাশে থাকব ইনশাআল্লাহ। আর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে দুবার এখানে এসেছিলেন তারা শুধু দেখে গেছেন। যদি তারা আমাকে আরও সহযোগিতা করে তবে আমার বাগানকে আরও বেশি সমৃদ্ধ করতে পারব।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. আব্দুল আজিজ বলেন, তার বাগানে অনেক ফলন এসেছে। তিনি কয়েক দফায় সেটি বিক্রি করে ভালো দাম পেয়েছেন। আমরা কয়েকবার গিয়েছি তার বাগানে। আমাদের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব আমরা পাশে থাকব। সেই সঙ্গে আরও নতুন কেউ আগ্রহী হলে আমরা সেসকল উদ্যোক্তার পাশে থাকব।

আপনি আরও পড়তে পারেন