প্রধান শিক্ষককে লাথি মারলেন শিক্ষা অফিসার

প্রধান শিক্ষককে লাথি মারলেন শিক্ষা অফিসার

গোপালগঞ্জে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে লাথি মারাসহ দুদফা মারপিট করে হাসপাতালে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে। এরপর উল্টো ওই শিক্ষা অফিসারকে মারপিটের অভিযোগ এনে প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত ও বিভাগীয় মামলাও দায়ের করা হয়েছে! অথচ এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ভুক্তভোগী ওই প্রধান শিক্ষক।

সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কর্তৃক ওই প্রধান শিক্ষককে মারধরের একটি ভিডিও ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লেও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আনন্দ কিশোর সাহা বলেছেন, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ওই বিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষকের লিখিত অভিযোগসহ এটিপিইও’র অভিযোগ পেয়ে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

 

এদিকে সদর উপজেলার ২৮ নম্বর উরফি বড়বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনোজ কান্তি বিশ্বাস জানান, গত ৩ অক্টোবর একটি ক্লিনিকে ছেলে সন্তান প্রসব করেন তার স্ত্রী। খবর পেয়ে ওইদিন দুপুরে তিনি ক্লিনিকে যান। বিকেল ৪টায় ছুটির পর সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার গৌতম কুমার রায় বিদ্যালয় পরিদর্শনে আসেন। সঙ্গে পার্শ্ববর্তী গোপালপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রাজু নামে এক সহকারী শিক্ষকও ছিলেন। সহকারী শিক্ষকের ফোন পেয়ে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হন মনোজ কান্তি। সামনে গিয়ে দাঁড়ালে কিছু না বলেই তাকে লাথি মারেন সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার। তারপরই সহকারী শিক্ষক রাজুও তাকে মারপিট ও গালিগালাজ করে। মার খেয়ে তিনি কোনোরকমে দৌঁড়ে নিরাপদে যান। এসব ঘটনার সময় ওই বিদ্যালয়ের আরও দুই শিক্ষক সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

গত ৫ অক্টোবর সকালে তিনি বিদ্যালয়ে গেলে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, এলাকার সাবেক চেয়ারম্যান মো. মহিদুল আলম মাহাত্তাব খানের লোকজন তাকে ডেকে নিয়ে দ্বিতীয় দফায় গালিগালাজ ও মারপিট করে এবং মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে ধারণকৃত ভিডিওচিত্র মুছে ফেলে। এসময় তিনি দৌঁড়ে গিয়ে বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে আশ্রয় নেন এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান। তাদের সাড়া না পেয়ে তিনি তার বোনদের মাধ্যমে পুলিশে জানালে, পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। তার স্ত্রী কাকলী হীরা এ ব্যাপারে থানায় একটি অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন।

প্রধান শিক্ষক মনোজ কান্তি বিশ্বাস অভিযোগ করেন, উন্নয়ন বরাদ্দের ব্যয়সহ নানা বিষয় নিয়ে সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এবং জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব রয়েছে। এর জেরেই মার খেয়ে উল্টো বরখাস্ত হতে হয়েছে তাকে। অপরদিকে, দুটি ঘটনারই প্রত্যক্ষদর্শী শিল্পী খানম ও শিপ্রা বিশ্বাস একরমের আতঙ্ক নিয়েই সাংবাদিকদের সামনে মুখ খুলতে রাজি হননি। তবে জানিয়েছেন, তাদেরকে দিয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত নেওয়া হয়েছে। এক পর্যায়ে তারা কেঁদে ফেলেন এবং বলেন, প্রধান শিক্ষকের ওপর যে হামলা হয়েছে তা মর্মস্পর্শী এবং চরম অমানবিক।

ঘটনার আরেক প্রত্যক্ষদর্শী জুলফিকার বেগম বলেন, তার সামনেই শিক্ষা অফিসার কিছু না বলেই প্রধান শিক্ষককে লাথি মারেন। এটা অত্যন্ত অমানবিক। এরপর তাকে মেরে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে, আবার বরখাস্তও করা হয়েছে।

ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. মহিদুল আলম মাহাত্তাব খান প্রধান শিক্ষকের ওপর হামলার বিষয়টিকে অস্বীকার করে বলেন, এ অভিযোগ অবান্তর। সাময়িক বরখাস্তের বিষয়টি নিয়ে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলতে গেলে সে এলোমেলো কথা বলে মোবাইলে ভিডিও করতে শুরু করে। তাই তার কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে ভিডিও চিত্র মুছে ফেলা হয়েছে কিন্তু তাকে কোনো মারধর করা হয়নি।

এদিকে, অভিযুক্ত সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার গৌতম কুমার রায়ের সঙ্গে কথা বলতে গেলে সাংবাদিকদের দেখে তিনি হকচকিয়ে যান এবং হাত জোড় করে সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে অফিসকক্ষ থেকে বেরিয়ে যান।

 

আপনি আরও পড়তে পারেন