প্রাইভেট না পড়ায় ছাত্রের পরীক্ষার খাতা ছিঁড়ে ফেললেন শিক্ষক!

প্রাইভেট না পড়ায় ছাত্রের পরীক্ষার খাতা ছিঁড়ে ফেললেন শিক্ষক!

মাদারীপুরে প্রাইভেট না পড়ায় এক স্কুলশিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ওই স্কুলেরই এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

অভিযুক্ত শিক্ষকের নাম রমজান মোল্লা। তিনি মোস্তফাপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের অতিরিক্ত শিক্ষক। নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীর নাম মো. জিহাদ মোল্লা। সে একই বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির মানবিক বিভাগের ছাত্র।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ১৭ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, রমজান মোল্লা টেনেহিঁচড়ে একজন শিক্ষার্থীর জামার কলার ধরে মারতে মারতে মাঠের দিকে নিয়ে আসছেন। পেছনে ছাত্রছাত্রীরা জড়ো হয়ে সেটি দেখছেন।

জিহাদ মোল্লা জানান, আমি পরীক্ষা দেওয়ার সময় আমার এক সহপাঠীর সঙ্গে কথা বলছিলাম। রমজান স্যার দেখতে পেয়ে আমার খাতা নিয়ে যান। আমি প্রতিবাদ জানালে তিনি আমার খাতাটা পুরোপুরি ছিঁড়ে আমার জামার কলার ধরে টেনেহিঁচড়ে সব ছাত্রছাত্রীর সামনে মাঠের মধ্যে নিয়ে আসেন এবং কিল-ঘুষি দিতে থাকেন। এ সময় একই ক্লাসে পড়ুয়া তার নিজের ছেলে এসে স্যারের সঙ্গে আমাকে মারতে থাকেন।

আমি তার পর বাড়ি যেতে চাইলে তিনি আমাকে মাঠের মধ্যে ফেলে দেন। তারপর টেনে লাইব্রেরিতে নিয়ে যান। সেখানে নিয়ে তিনি আমাকে বেদম মারধর করেন।  আমার অপরাধ আমি তার কাছে প্রাইভেট পড়ি না। যারা তার কাছে প্রাইভেট পড়ে তিনি তাদের নকল করার সুযোগ দেন। যারা প্রাইভেট পড়ে না তিনি তাদের বিভিন্ন অজুহাতে মারধর করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া জিহাদের সহপাঠী আরমান বলেন, রমজান স্যার আমাদের স্কুলের কোনো নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক না। তিনি একজন গেস্ট টিচার। সেদিন পরীক্ষার হলে জিহাদকে প্রচণ্ড মারধর করেছেন। জিহাদের উত্তরপত্র ছিঁড়ে ফেলেন। সবার সামনে কলার ধরে মারতে মারতে মাঠের মধ্যে নিয়ে যান। আমরা এর বিচার চাই।

পরশ নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, রমজান স্যার এর আগেও বহু ছাত্রকে মেরেছেন। অনেকে তার মার খেয়ে সুইসাইড পর্যন্ত করতে চেয়েছে। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে সুইসাইড নোট পর্যন্ত জমা দিয়েছে। সেদিন জিহাদকে যেভাবে মেরেছে এটি অত্যন্ত অমানবিক। আমরা শিক্ষক নামের এই ঘাতকের শাস্তি চাই।

নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক জানান, সম্পূর্ণ মৌখিক ভিত্তিতে তাকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অথচ শিক্ষকতা করার কোনো যোগ্যতাই তার নেই। দুই বছরের ডিগ্রিতে পড়াশোনা করেছেন। তাও থার্ড ক্লাস রেজাল্ট। হেড স্যারের কাছে এক ছাত্র কদিন আগে সুইসাইড নোট দিয়েছিল ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে।

অভিযুক্ত রমজান মোল্লা বলেন, ওই ছাত্র আমার সঙ্গে বেয়াদবি করেছে। তাই রেগে আমি তাকে মেরেছি। সে আমার ছেলেকেও মারতে চেয়েছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বোরহান উদ্দিন বলেন, ঘটনার দিন আমি বিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিলাম না। তবে আমি ঘটনাটি শুনে অভিযুক্ত শিক্ষককে শাসিয়েছি।

জেলা শিক্ষা অফিসার হাবিবুল্লাহ বাহার জানান, কোনো শিক্ষক এ কাজ করতে পারেন না। বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে আমি সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষককে ফোন করে বিষয়টি সমাধান করার জন্য বলব।

মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাইনউদ্দিন বলেন, কোনোভাবেই একজন শিক্ষক এ রকম শাস্তি দিতে পারেন না। আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।

আপনি আরও পড়তে পারেন