বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বৈশ্বিক সাহায্য চায় পাকিস্তান

বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বৈশ্বিক সাহায্য চায় পাকিস্তান

টানা দুই মাস ধরে ভয়াবহ বন্যা মোকাবিলা করছে পাকিস্তান। বন্যা এতোটাই প্রকট আকার ধারণ করেছে যে, গত জুলাই মাস থেকে দেশটিতে কমপক্ষে ৮৩০ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বন্যা মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়েছে পাকিস্তান।

মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) পাকিস্তানের সরকার বৈশ্বিক সহায়তা নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বুধবার (২৪ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বন্যা কবলিত মানুষের ত্রাণ ও পুনর্বাসন এবং ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো পুনরুদ্ধারের জন্য তহবিল চেয়ে আন্তর্জাতিক (সম্প্রদায়ের কাছে) আবেদন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তানের সরকার।

দ্য ডন বলছে, পাকিস্তানের বন্যা পরিস্থিতির ওপর মঙ্গলবার ন্যাশনাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটির (এনডিএমএ) একটি জরুরি ব্রিফিংয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মূলত বন্যায় হওয়া ক্ষয়ক্ষতি পুনঃমূল্যায়ন এবং উন্নয়ন অংশীদার ও দাতাদের সংকটের মাত্রা সম্পর্কে অবহিত করার জন্য এটি আয়োজন করা হয়।

এদিকে অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট এই বন্যা মোকাবিলায় বাইরের সাহায্য বিবেচনা করার পাশাপাশি বন্যা কবলিত লোকদের সাহায্য করার জন্য দেশবাসীর কাছেও আবেদন করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ। কারণ বন্যা দুর্গতদের পুনর্বাসনের জন্য দেশটির সরকারের এখন শত শত কোটি রুপি প্রয়োজন।

এক ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ বলেন, ‘বন্যা দুর্গতদের ত্রাণ তৎপরতার জন্য ৮ হাজার কোটি পাকিস্তানি রুপি প্রয়োজন। একইসঙ্গে বন্যায় হওয়া ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য আরও শত শত কোটি রুপির প্রয়োজন।’

সরকারের ত্রাণ তৎপরতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করে শেহবাজ বলেন, বন্যা দুর্গতদের নগদ ত্রাণ হিসাবে সরকার ৩ হাজার ৭২০ কোটি রুপি বিতরণ করছে। এছাড়া উদ্ধার প্রচেষ্টাকে আরও ত্বরান্বিত করার জন্য ‘তাৎক্ষণিকভাবে’ এনডিএমএ’র কাছে ৫০০ কোটি রুপি দেওয়া হয়েছে।

পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বন্যার্তদের জন্য ২৫ হাজার রুপি করে নগদ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। একইভাবে বন্যায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের পরিবারকে ১০ লাখ রুপি করে ক্ষতিপূরণ দেবে সরকার। এর পাশাপাশি আহতদের জন্য অতিরিক্ত সহায়তা এবং ক্ষতিগ্রস্ত ঘরের মেরামতেও সহায়তা দেওয়া হবে।

ডন বলছে, পরিকল্পনামন্ত্রী আহসান ইকবালের সভাপতিত্বে মঙ্গলবার এনডিএমএ-র বৈঠক হয়। বৈঠকে অংশগ্রহণকারীদের বলা হয়, বন্যায় এখন পর্যন্ত ৮৩০ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং কমপক্ষে ১ হাজার ৩৪৮ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া পাকিস্তানজুড়ে হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়েছেন।

আর তাই বেলুচিস্তান ও সিন্ধু প্রদেশে বিপর্যয়কর বন্যা মোকাবিলায় সাহায্যের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে সেনাবাহিনীকে অনুরোধ করতে সরকারে প্রতি আহ্বান জানান পরিকল্পনামন্ত্রী। সাম্প্রতিক বন্যায় এই দু’টি প্রদেশই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সভায় বক্তৃতাকালে পাকিস্তানের জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শেরি রেহমান ভয়াবহ এই বন্যার পরিপ্রেক্ষিতে অবিলম্বে মানবিক ও উদ্ধার প্রচেষ্টা আরও জোরদারের আহ্বান জানান। এসময় তিনি স্বীকার করেন যে, পাকিস্তান নিজে থেকে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারছে না।

তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমরা এমন একটি পরিস্থিতিতে আছি যখন বন্যায় হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়েছে। এছাড়া ৮৩০ জন মারা গেছেন এবং ১৩৪৮ জন আহত হয়েছেন। সিন্ধুতে ৩০টি জেলা পানির নিচে রয়েছে। গড় বৃষ্টিপাতের চেয়ে সিন্ধুতে ৩৯৫ শতাংশ এবং বেলুচিস্তানে ৩৭৯ শতাংশের বেশি বৃষ্টি হয়েছে। এই তথ্য থেকে দুর্যোগের বাস্তব মাত্রা বোঝা যেতে পারে।’

পাকিস্তানি এই সিনেটর বর্তমান বিপর্যয়কে ২০১০ সালের ভয়াবহ বন্যার সাথে তুলনা করে বলেন, সিন্ধু প্রদেশের কমপক্ষে ৩০টি জেলা, প্রায় পুরো বেলুচিস্তান এবং দক্ষিণ পাঞ্জাব অভূতপূর্ব মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে। তিনি বলেন, মানুষ পানিতে ভাসছে, গবাদিপশু ও ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে এটি এক অভূতপূর্ব মানবিক বিপর্যয়।

শেরি রেহমান আরও বলেন, দুর্যোগের তীব্রতার কারণে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে প্রাদেশিক এবং ফেডারেল সরকার এখন কার্যত অক্ষম। আর তাই পরিস্থিতি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সহায়তা জোগাড় করার আহ্বান জানিয়েছে সরকার।

অবশ্য পাকিস্তানের আহ্বানে ইতোমধ্যেই সাড়া দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ডন বলছে, ইউরোপীয় দেশগুলোর এই ব্লকটি জরুরি মানবিক সহায়তা হিসেবে ইতোমধ্যেই ৭ কোটি ৬০ লাখ পাকিস্তানি রুপি দিতে সম্মত হয়েছে।

পাকিস্তানে ইইউ’র মানবিক কর্মসূচির তদারকি করছেন তাহেনি থামমান্নাগোদা। তিনি বলছেন, ‘বিধ্বংসী এই বন্যায় পাকিস্তান বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে। দেশের বহু মানুষ তাদের বাড়িঘর, জীবিকা এবং জিনিসপত্রের ক্ষতির শিকার হয়েছেন।’

অন্যদিকে ইসলামাবাদে ইইউ মিশনের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘ইইউ তহবিল এই কঠিন সময়ে পাকিস্তানের দুর্যোগপীড়িত মানুষকে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা পেতে সহায়তা করবে।’

 

আপনি আরও পড়তে পারেন