বসের যৌন হয়রানির কথা প্রকাশ করায় ছয় মাসের জেল

শহরের নামকরা এক স্কুলে কাজ করতেন নুরিল নামের এক নারী। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ফোনে তাকে যৌন হয়রানিমূলক কথা বার্তা বলেন।

বস যৌন হয়রানির বিষয়টি প্রমাণে ফোনের কথোপকথন রেকর্ড করে আদালতে উপস্থাপন করেন তিনি । এই ‘অপরাধে’ তাঁকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন ইন্দোনেশিয়ার আদালত। রায়ের বিরুদ্ধে করা আবেদন গত বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) নাকচ করেছেন সুপ্রিম কোর্ট।

রায়ে উল্লেখ করা হয়, বাইক নুরিল মাকনুন নামের ওই নারী অশ্লীল বিষয় ছড়ানোয় তাঁকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। ২০১৫ সালে রেকর্ডিংটি ছড়িয়ে পড়লে নুরিলের বস তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন।

নুরিলের আপিল নাকচ করে আদালতের দেওয়া রায়ের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো।

বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইন্দোনেশিয়ার লোমবোক দ্বীপের মাতারাকের শহরের একটি স্কুলে কাজ করতেন নুরিল। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে যৌন হয়রানিমূলক ফোন পাওয়ার অভিযোগ করেন তিনি। তিনি যে ফোনালাপটি রেকর্ড করেন, সেখানে ওই প্রধান শিক্ষক যৌন হয়রানি ও অবমাননাকর মন্তব্য করেন। রেকর্ডিংটি স্কুলের কর্মচারী এবং স্থানীয় শিক্ষা সংস্থাগুলোর প্রধানদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। পরে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

আদালতের নথিপত্র অনুযায়ী, ওই রেকর্ডিং ছড়িয়ে পড়ার পর প্রধান শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করা হয়। তবে তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত চালিয়ে ইলেকট্রনিক মাধ্যমে তথ্য ও লেনদেন আইনে শ্লীলতা লঙ্ঘনের দায়ে গত নভেম্বর মাসে নুরিলকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। সপক্ষে নতুন কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে না পারায় নুরিলের আপিল বাতিল করা হয় বলে জানান আদালত।

আদালতের মুখপাত্র আবদুল্লাহ সংবাদ সংস্থা এএফপিকে বলেন, অপরাধ আইনগতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় নুরিলের আপিল বাতিল করা হয়। তাঁকে ছয় মাসের কারাদণ্ডসহ প্রায় ৩৫ হাজার ডলার জরিমানা করা হয়েছে।

নুরিলের দাবি, রেকর্ডিং ছড়ানোর পেছনে তাঁর কোনো হাত নেই। এক বন্ধু তাঁর মুঠোফোন থেকে এটি সংগ্রহ করেছেন বলে জানান তিনি।

নুরিলের আইনজীবী জোকো জুমাদি বিবিসি ইন্দোনেশিয়াকে জানান, তাঁর মক্কেল এ রায় মেনে নিতে রাজি। তবে নুরিল আশা করেন, ইন্দোনেশিয়ায় যৌন হয়রানির ব্যাপারে মুখ খুলে হয়রানির শিকার ব্যক্তিকেই সাজা পেতে হবে, তিনিই যেন এমন নিয়মে দণ্ডপ্রাপ্ত শেষ ব্যক্তি হন।

এ রায়ে ইন্দোনেশিয়ার নাগরিকেরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে লিগ্যালএইড ফাউন্ডেশন ফর দ্য প্রেসের প্রধান নির্বাহী আদে ওয়াহিউদিন বলেন, এ রায়ের ফলে হয়রানির শিকার ব্যক্তিকে সাজা দেওয়ার রাস্তা খুলে গেল।

এ রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে হয়রানির শিকার নারীরা মুখ খুলতে ভয় পাবেন বলে আশঙ্কা করছেন দেশটির মানবাধিকার সংগঠনগুলো।

আপনি আরও পড়তে পারেন