বাংলাদেশের শিয়াল হঠাৎ ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে কেন?

বাংলাদেশের শিয়াল হঠাৎ ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে কেন?

সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে শিয়ালের কামড়ে নারী, পুরুষ ও শিশুসহ অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হন। শনিবার (২ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাতটার দিকে উপজেলায় দুর্গাপুর ইউনিয়নের তাজপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়া নয়, দেশের বেশ কিছু স্থান থেকে প্রায়ই পাওয়া যাচ্ছে শিয়ালের এমন হিংস্রতার সংবাদ। তাই প্রশ্ন উঠেছে বাংলাদেশের শিয়াল কী আসলেই এতো ভয়ঙ্কর?

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তাজপুর গ্রামের প্রত্যক্ষদর্শী হারুন মিয়া জানান, আমার ভাই আর ভাতিজি শনিবার সন্ধ্যায় বাড়ির উঠানে দাঁড়ানো ছিল। হঠাৎ একটি শিয়াল আমার ভাই ও ভাতিজিকে কামড়িয়ে পালিয়ে যায়। এর মধ্যে গোলাপ মিয়া একটি শিয়ালকে ঝাপটিয়ে ধরলে সবাই গিয়ে শিয়ালটি মেরে ফেলি। অপর একটি শিয়াল পালিয়ে যায়।

অপর প্রত্যক্ষদর্শী আবু সাঈদ জানান, গ্রামের শিয়ালের উপদ্রব বেড়েছে। রাতে শেয়ালের দল চিৎকার চেঁচামেচি করে। প্রায়ই খাবারের সন্ধানে শেয়ালের দল বাড়ি ঘরে হানা দেয়। তবে এভাবে কখনো কাউকে কামড়ায় নি।

আহতদের সবাই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। পরে আহতদের সবাইকে জলাতঙ্ক রোগের টিকা দেয়া হয়।

এর আগে, একই জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শিয়ালের কামড়ে অন্তত ২৭ জন পথচারী আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তার আগে নওগাঁ, জয়পুরহাট, বগুড়া, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের কয়েকটি এলাকায় শিয়ালের কামড়ে অন্তত ১০০ জন আহত হওয়ার খবর প্রকাশ হয়েছে।

তবে শেয়াল কোন হিংস্র প্রাণী নয়, বরং নিশাচর বন্য এই প্রাণীটি লোকালয় থেকে সবসময় দূরেই থাকে। শুধুমাত্র খাবারের অভাব দেখা দিলেই সন্ধ্যা বা রাতের বেলা লোকালয়ে এদের বিচরণ করতে দেখা যায়। বনে খাবার না পেলে লোকালয়ে হানা দিয়ে হাঁস-মুরগি ধরে নিয়ে যায় তারা। 

শিয়ালদের আচরণ প্রসঙ্গে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ। সেখানে প্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আত্মরক্ষা ছাড়া শিয়াল কোন মানুষের ওপর হামলা চালায় না, অবশ্য জলাতঙ্ক রোগ হলে এদের আচরণ কিছুটা বেপরোয়া হয়ে যায়।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের বেশিরভাগ শেয়ালই পাতিশিয়াল ও ছোট আকারের খেঁকশিয়াল প্রজাতির, যা দেখতে অনেকটা দেশি কুকুরের মতো, গায়ের লোম বাদামি এবং লেজ কালো। ক্যানিডি পরিবারের স্তন্যপায়ী প্রাণীটিকে বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-১ অনুযায়ী সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু নির্বিচারে গাছপালা ঝোপঝাড় কাটার পাশাপাশি গর্ত ভরাট করে ফেলায় অন্য সব প্রাণীর মতো শিয়ালের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, শিয়ালের বাঁচার উপযুক্ত পরিবেশ যদি থাকতো, তাহলে সে লোকালয়ে আসতো না। কারণ মানুষ তার খাবার নয়। শিয়াল বরং ইঁদুর, পোকামাকড়, মৃত প্রাণী- এক কথায় সব ধরনের পচা-গলা খাবার খেয়ে পরিবেশকে ভালো রাখে। আর এই প্রাণীটি রোগ ছড়ায় না। তাই এই পরিবেশে ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র রক্ষায় শিয়াল অনেক প্রয়োজন। এছাড়া, ইঁদুর-পোকামাকড় কমে যাওয়ায় শিয়ালের লোকালয়ে হানা দেয়ার অন্যতম কারণ। মানুষ এদের দেখে ভয় পায়, তাড়া করে। মানুষের ভয় দেখে তারাও আতঙ্কিত হয়ে যায় যা এই হিংস্রতাকে উস্কে দিতে পারে। কিন্তু শিয়াল হিংস্র নয়।

আপনি আরও পড়তে পারেন