বাইডেনকে বলেও পেলোসির সফর আটকাতে পারেননি জিনপিং

বাইডেনকে বলেও পেলোসির সফর আটকাতে পারেননি জিনপিং

চীনের সামরিক হুমকি উপেক্ষা করে তাইওয়ান সফরে গিয়েছিলেন মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। চলতি মাসের শুরুতে হওয়া ওই সফরের জেরে ব্যাপক ক্ষুব্ধ হয় বেইজিং।

অবশ্য তৃতীয় শীর্ষ এই মার্কিন রাজনীতিকের সফর রুখতে বেশ সক্রিয়ও ছিল চীন। এমনকি পেলোসিকে আটকাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনেরও দ্বারস্থ হয়েছিলেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। শনিবার (২০ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট।

হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে শনিবার প্রভাবশালী এই সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, মার্কিন হাউসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসিকে তাইওয়ান সফর থেকে বিরত রাখতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে বলেছিলেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। গত মাসে ফোনালাপের সময় বাইডেনকে একথা বলেন তিনি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট জিনপিংয়ের উদ্বেগ প্রত্যাখ্যান করা হয় এবং পেলোসির সফরটি অনুষ্ঠিত হলে বেইজিংয়ের ‘উস্কানিমূলক’ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তাকে সতর্ক করা হয়।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট সেসময় শি জিনপিংকে বলেন, সফর না করতে তিনি (পেলোসিকে) ‘বাধ্য করতে পারেন না’ কারণ মার্কিন কংগ্রেস সরকারের একটি স্বাধীন শাখা এবং পেলোসি বিদেশ সফরের বিষয়ে নিজেই নিজের সিদ্ধান্ত নেবেন। এমনকি মার্কিন হাউস স্পিকারের সফর হলে ‘উস্কানিমূলক এবং জবরদস্তিমূলক’ পদক্ষেপ নেওয়ার বিরুদ্ধে চীনা প্রেসিডেন্টকেও সতর্ক করেছিলেন তিনি।

ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র অ্যাড্রিয়েন ওয়াটসন বলেছেন, ‘কংগ্রেসের সদস্যরা কয়েক দশক ধরে তাইওয়ানে সফর করেছেন এবং তা অব্যাহত রাখবেন। স্পিকার পেলোসির (সেখানে) যাওয়ার অধিকার ছিল এবং তার সফর আমাদের দীর্ঘদিনের এক-চীন নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।’

চলতি আগস্টের শুরুতে তাইওয়ান ভ্রমণ করেন ন্যান্সি পেলোসি। ১৯৯৭ সালের পর এটিই ছিল দ্বীপটিতে মার্কিন হাউস স্পিকারের প্রথম কোনো সফর। এছাড়া গত ২৫ বছরের মধ্যে এটি কোনো মার্কিন শীর্ষ রাজনীতিকের তাইওয়ান সফর। এই সফরকে কেন্দ্র করে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে ওঠে।

গণতান্ত্রিকভাবে শাসিত তাইওয়ানকে নিজস্ব অঞ্চল বলে দাবি করে থাকে বেইজিং। চলতি আগস্ট মাসের শুরুতে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইপে সফরের পর দ্বীপের চারপাশে নজিরবিহীন সামরিক মহড়া চালিয়েছে দেশটি।

উল্লেখ্য, তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র-সহ পশ্চিমা দেশগুলোর দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনা চলছে। তাইওয়ান পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপ, যা তাইওয়ান প্রণালীর পূর্বে চীনা মূল ভূখণ্ডের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত। অবশ্য তাইওয়ানকে বরাবরই নিজেদের একটি প্রদেশ বলে মনে করে থাকে বেইজিং।

গত বছরের অক্টোবরে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছিলেন, মূল ভূখণ্ডের সাথে তাইওয়ানের পুনরেকত্রীকরণ অবশ্যই সম্পূর্ণ করতে হবে। এজন্য সামরিক পথে অগ্রসর হওয়ার বিষয়টিও খোলা রেখেছে বেইজিং।

অন্যদিকে চীনের প্রদেশ নয়, বরং নিজেকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র বলে মনে করে থাকে তাইওয়ান। চীনা প্রেসিডেন্টের এমন মন্তব্যের জবাবে সেসময় তাইওয়ান জানায়, দেশের ভবিষ্যৎ তার জনগণের হাতেই থাকবে।

তবে তাইওয়ানকে চীনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করতে বেইজিংয়ের চেষ্টার কমতি নেই। তাইওয়ান উপত্যাকার চারদিকে সামরিক কর্মকাণ্ড জোরদার করেছে চীন। এমনকি গত বছরের মতো চলতি বছরের শুরু থেকেই তাইওয়ানের এয়ার ডিফেন্স আইডেন্টিফিকেশন জোন (এডিআইজেড) লঙ্ঘন করে আসছে বৈশ্বিক এই পরাশক্তি দেশটি।

প্রসঙ্গত, ১৯৪৯ সালে চীনে কমিউনিস্টরা ক্ষমতা দখল করার পর তাইওয়ান দেশটির মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যদিও তাইওয়ানকে বরাবরই নিজেদের একটি প্রদেশ বলে মনে করে থাকে বেইজিং। এরপর থেকে তাইওয়ান নিজস্ব সরকারের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে।

 

আপনি আরও পড়তে পারেন