বিচ্ছেদের তিক্ততা থেকেই বিয়ে করছেন না মুনমুন!

পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুরের মেয়ে। আপাদমস্তক বাঙালিয়ানায় মোড়া। ছোট থেকেই ইচ্ছা ছিল অভিনয়ে নাম লেখানোর। কলকাতা থেকে ইংরেজি নিয়ে পড়াশোনা করার পর তাই মুম্বাইয়ে পাড়ি দিয়েছিলেন তিনি। এখন নিজের নামের চেয়েও ‘ববিতা’ নামেই বেশি জনপ্রিয় হিন্দি ধারাবাহিকের অভিনেত্রী মুনমুন দত্ত।

২০০৪ সাল থেকে অভিনয় শুরু করেন মুনমুন। তার প্রথম কাজ ছিল কমল হাসনের সঙ্গে। ‘মুম্বই এক্সপ্রেস’ নামের একটি সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন মুনমুন।

স্বল্পদৈর্ঘ্যের সিনেমা থেকে শুরু করে হিন্দি ধারাবাহিকেও কাজ করেন মুনমুন। কিন্তু জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছান ‘তরক মেহতা কা উল্টা চশমা’ ধারাবাহিকে ববিতার চরিত্রে অভিনয় করে। তার কাজ বহুল প্রশংসিত হয়। এরপর থেকেই পাপারাজ্জিদের ক্যামেরার লেন্সের নজরে থাকতেন তিনি।

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ৩৫ বছর বয়সী মুনমুন জানান, তিনি কোনো দিন বিয়ে করবেন না। ক্যারিয়ারের দিকেই মন দিতে চান তিনি। কিন্তু টেলিপাড়ার অনেকেই দাবি করেছেন যে, সাবেক প্রেমিক আরমান কোহলির সঙ্গে সম্পর্কের তিক্ততা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি মুনমুন।

আরমানের বাবা-মা দু’জনেই ফিল্ম জগতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তার বাবা রাজকুমার কোহলি ছিলেন বলিউডের অন্যতম পরিচালক। মা ছিলেন অভিনেত্রী। পঞ্জাবি এবং হিন্দি ছবিতে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। সেই সূত্রেই অভিনয়ে নামেন আরমান।

‘বিরোধী’, ‘জানি দুশমন: এক আনোখি কাহানি’, ‘এলওসি: কার্গিল’, ‘প্রেম রতন ধন পায়ো’র মতো বহু ছবিতে অভিনয় করেছেন আরমান। কর্মসূত্রেই তার আলাপ হয় মুনমুনের সঙ্গে।

মুনমুনের সঙ্গে আরমানের বন্ধুত্ব ক্রমশ গভীর হতে থাকে ও সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তারা। এমনকি একই ছাদের নিচে বসবাস করতেন দু’জনে। কিন্তু কখনও প্রকাশ্যে তাদের সম্পর্কের কথা স্বীকার করেননি কেউই।

তবে মুনমুনের সঙ্গে আরমানের সম্পর্ক খুব একটা ভালো ছিল না। বলিউডে কানাঘুষা শোনা যায় যে, মুনমুনকে নাকি মাঝেমধ্যেই মারধর করতেন আরমান। কিন্তু আরমানের সঙ্গে সম্পর্ক ভাঙতে চাইতেন না মুনমুন। মুখ বুজে সব সহ্য করতেন তিনি।

কিন্তু মুনমুন এবং আরমানের সম্পর্কের তিক্ততা হঠাৎ জনসমক্ষে এসে পড়ে। ২০০৮ সালের ঘটনা। ভ্যালেন্টাইনস ডে উপলক্ষে আরমানের সঙ্গে মুম্বইয়ের একটি বিলাসবহুল ক্লাবে পার্টি করতে গিয়েছিলেন মুনমুন।

পার্টিতে গিয়ে সুরাপান করে মত্ত আরমান সবার সামনে মুনমুনের গায়ে হাত তোলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। জনসমক্ষে এই ঘটনা ঘটে যাওয়ায় মুনমুন মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। আরমানের সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়ে চর্চা শুরু হয়।

কিন্তু মুনমুন প্রতিবার আরমানের সঙ্গে তার সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেন। মুনমুনের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী ডলি বিন্দ্রা অবশ্য আরমানের সঙ্গে মুনমুনের সম্পর্ক নিয়ে মুখ খোলেন।

এক সাক্ষাৎকারে ডলি জানান, ঘরের ভেতরেও মদ খেয়ে মুনমুনকে মারতেন আরমান। মানসিক নির্যাতনও করতেন তিনি। কিন্তু মুনমুন কখনওই আরমানের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ করতেন না।

পরে অবশ্য আরমানের সঙ্গে সম্পর্কে ইতি টানেন মুনমুন। দীর্ঘদিন একা ছিলেন তিনি। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ মুনমুন তার সহ-অভিনেতা রাজ আনাদকাটের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন বলে কানাঘুষা শোনা যায়। তবে দু’জনেই এই বিষয়টি অস্বীকার করেন।

আরমানের সঙ্গে মুনমুনের বিচ্ছেদের পরেও বার বার অভিনেতার বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ এসেছে। ২০১৩ সালে ‘বিগ বস’ রিয়্যালিটি শোয়ে প্রতিযোগী হিসাবে অংশগ্রহণ করেন আরমান।

সহ-প্রতিযোগী সোফিয়া হায়াতকে নিগ্রহের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় আরমানকে। কিন্তু ঘটনার এক দিন পরেই জামিন পেয়ে ‘বিগ বস্’-এর ঘরে ফিরে আসেন আরমান।

‘বিগ বস্’-এর ঘরে আবার ফিরে আসার পর অভিনেত্রী তানিশার সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান আরমান। কিন্তু আরমানের বদরাগী স্বভাবের জন্য সেই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসেন তানিশা।

তানিশার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর অভিনেত্রী নীরু রণধাওয়ার সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান আরমান। নীরুর অভিযোগ, তার গায়ে প্রায়ই হাত তুলতেন আরমান।

আরমানের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন নীরু। কিন্তু অর্থাভাবে নীরু মামলা চালাতে না পারায় জামিনে ছাড়া পেয়ে যান আরমান।

২০২১ সালের অগস্ট মাসে নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর (এনসিবি) হাতে ধরা পড়েন আরমান। তার বাড়ি থেকে ১.২ গ্রাম মাদক উদ্ধার হয়।

আরমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি শুধু বেআইনি পথে মাদক কিনতেন না, তা বিক্রিও করতেন। মাদক রাখার অভিযোগে এক বছর জেলও খাটেন তিনি।

অবশেষে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে হাইকোর্টের নির্দেশে এক লাখ টাকার ব্যক্তিগত জামিনে ছাড়া পান আরমান। বর্তমানে অভিনয় জগৎ থেকে দূরে রয়েছেন তিনি। ২০১৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘প্রেম রতন ধন পায়ো’ সিনেমায় শেষ বারের মতো অভিনয় করতে দেখা যায় আরমানকে।

 

 

আপনি আরও পড়তে পারেন