বিস্ময় শিশু সাদিদ বাংলাদেশকে বিশ্বকাপ জেতাতে চায়

যে বয়সে হাত ঘুড়িয়ে বল ছোড়া যথারীতি বিরল ঠিক সে বয়সেই খেলছে পুরোদস্তুর টুর্নামেন্ট। ব্যাটে বলে ফিল্ডিংয়ে দারুণ পারফর্ম করে ঘরে তুলেছে ১১টি ট্রফি। সকাল থেকে গভীর রাত ক্রিকেটই আসাদুজ্জামান সাদিদের ধ্যানজ্ঞান।

নানাবাড়ির ঘরের দেয়ালে সারাক্ষণ বল ছোড়ার ঠুকঠাক শব্দ কানে সয়ে গেছে সবার। আর বোলিং এ্যাকশনের নৈপূন্যের ভিডিও মামা শখ করে ফেসুবকে আপলোড করার পর তা ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী। ‘ক্রিকেটের ইশ্বর’ খ্যাত খোদ শচীন টেন্ডুলকার ক্ষুদে এই তারকার বোলিং এ্যাকশনের ভিডিওতে মোহিত হয়ে শেয়ার করেছেন। ভিডিও শেয়ার করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের অপারেশন্স ম্যানেজার শাহরিয়ার নাফিসও।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোড়ন তোলা এই তারকা ক্রিকেটারের বয়স মাত্র ৬ বছর। কিন্ডারগার্টেনের ধাপ পার করে সবেমাত্র ভর্তি হলো ২৩ নং উলালঘূনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

কিন্তু এখন পর্যন্ত একদিনও সেখানে ক্লাস করতে পারেনি বলে ওই স্কুলের ছাত্র বলে পরিচয় দেয় না। বিশ্বাসও করে না সে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীর ছাত্র। প্রশ্ন করলেই সহজ উত্তর, ‘আমি আসাদুজ্জামান সাদিদ। কিন্ডারগার্টেনে পড়ি।’

পাশ থেকে একমাত্র মামা সিরাজুল ইসলাম শুভ জানালেন, সাদিদকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি করা হয়েছে। কিন্তু সে ক্লাস করতে পারেনি বলে ওই পরিচয় দেয় না।

শুক্রবার (১৫ অক্টোবর) বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের মহাবাজ গ্রামে গিয়ে দেখা গেলো ব্যাটবল নিয়ে মাঠে সাদিদ। নানা বাড়ি লাগোয়া মহাজাব মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং উলালঘূনী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে নিয়মিত খেলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল সাদিদ। সকাল ৮টায় জুটে গেছে চার-পাঁচজন ভিন্ন বয়সী ক্রিকেটার। এমন আয়োজন অবশ্য আজকের নয়, তিন বছর আগেই শুরু হয়েছিল ব্যাটে-বলে পরিচয়। তখন সাদিদের বয়স তিন বছর।

এরপর একটানা চলেছে চর্চা। প্রথম হাতেখড়িটা হলো ব্যাটিংয়ে, আর সাত মাস আগে সিদ্ধান্ত বদলে শুরু হলো বোলিং। সেক্ষেত্রেও সাদিদ রেখেছে প্রতিভার ছাপ।

শুভ বললেন, ‘সাদিদ নিজেকে সাকিল আল হাসানের মত করে গড়তে চাইছে। সারাক্ষণ সাকিবের খেলা দেখে। সাকিব আল হাসান আউট হলে কান্না করে দেয়।’

এ বয়সে অলরাউন্ডার হওয়ার ভাবনা কী করে এল সাদিদের? উত্তর জানা গেল তার মামার মুখে। শুভ বললেন, ‘ওর যখন তিন বছর বয়স তখন থেকেই ক্রিকেট খেলে, ব্যাটিং করে। আইপিএল, বিপিএলসহ জাতীয়, আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটের সব টুর্নামেন্ট দেখে। কিছুদিন আগে একটি টুর্নামেন্টে সাকিব আল হাসান ম্যান অব দ্যা ম্যাচ হলো। আমরা দু’জনে সেই খেলা দেখছিলাম। সাদিদ আমাকে প্রশ্ন করলো, সাকিব আল হাসান বেশি রান না করেও কিভাবে ম্যান অব দ্যা ম্যাচ হলো। আমি বলেছিলাম, সাকিব অলরাউন্ডার। এজন্য। তখন সাদিদ ইচ্ছা পোষণ করলো, সেও বোলিং শিখবে। তারপরই মূলত বোলিং প্রাকটিস শুর করলো।’

শুধু কি মাঠের নৈপুণ্য? ক্রিকেট জ্ঞানেও তো সাদিদের জুড়ি মেলা ভার! সমসাময়িক শীর্ষ ক্রিকেটারদের নাম বলে দিতে পারে অবলীলায়। তাদের খেলাও দেখে নিয়মিত।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি সর্ম্পকে শুভ বলেন, ‘ভিডিওটি মূলত সাদিদের বোলিংয়ে ভুল সংশোধনের জন্য করা হয়েছিল। ওর ভুলগুলো দেখানোর জন্য ভিডিওটি করা। আর আমরা সবাই স্বাভাবিকভাবে ভিডিও, ছবি ফেসবুকে শেয়ার করি তেমনি ওই ভিডিওটিও কৌতূহলবশত আপলোড করেছিলাম।’

এ বয়সেই এমন পারফর্ম্যান্স! এমন কিছুর পেছনে সাদিদের দ্রুত শিখতে পারার ক্ষমতা নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। অভিমত শুভর। বললেন, ‘আমিও ক্রিকেট পছন্দ করি। কিন্তু ওর তিন বছর বয়সেই দেখলাম ক্রিকেটে ওর ট্যালেন্ট আছে। ফলে ওর পছন্দের খেলায় নার্সিং শুরু করা হয়। সাদিদ হচ্ছে ‘কুইক লার্নার’। ক্রিকেটে যা বলবেন সেটা ও দ্রুত করতে পারে। তখন থেকেই ওর ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন আর আমার স্বপ্ন মিলে গেলো।’

এ বয়সে এত সাধনার একটাই কারণ, একটা বিশ্বকাপ। সে বিশ্বকাপ জয়ের ইচ্ছাই বসতি গেড়েছে ছোট্ট সাদিদের মনে। শুভ বললেন, ‘সাদিদ সব সময়েই জানতে চায়, বাংলাদেশ কখনো বিশ্বকাপ জিতেছে কিনা। ওর ইচ্ছা বাংলাদেশের হয়ে বিশ্বকাপ জয়ের।’

সে উদ্দেশ্যেই সাদিদকে বিকেএসপিতে ভর্তি করানোর আশা ব্যক্ত করলেন শুভ, সঙ্গে সাকিবের একাডেমিতে কোচ সালাহউদ্দিনের অধীনে কোচিং করানোর লক্ষ্যও। বললেন, ‘আমি চাই সাদিদ জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পাবে। এজন্য যখন সাদিদ সপ্তম শ্রেণীতে উঠবে তখন চেষ্টা করবো বিকেএসপিতে ভর্তি করানোর। আমাদের আরেকটি ইচ্ছা আছে, অন্তত দুইমাস হলেও সাকিব আল হাসানের একাডেমিতে সাদিদকে প্রাকটিস করানোর। যেন সেখানে সালাউদ্দিন স্যারের কোচিংটা পায়।’

বরিশাল বিকেএসপিতে ক্রিকেটের সুযোগ না থাকলেও ঢাকায় চেষ্টা করবে উল্লেখ করে শুভ বলেন, ‘বরিশাল জেলা স্টেডিয়ামের কোচ তানিম ভাই, সানি ভাই বর্তমানে সাদিদকে শেখাচ্ছেন। ওর ভুলগুলো ধরিয়ে দিচ্ছেন। তারা অনেক সাহায্য করছেন।’

ভারতীয় কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকার যখন ভিডিওটা শেয়ার করলেন, তখন বিশ্বাসই হচ্ছিল না তাদের। শুভর ভাষায়, ‘সাদিদের ক্রিকেট খেলার ভিডিও শেয়ার করেছেন তা আমার বিশ্বাসই হচ্ছিল না। লিংকটি দেখে আমার হাত-পা কাঁপছিল আনন্দে। আসলে কিছু অনুভূতি আছে ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। এই অনুভূতি প্রকাশেরও আমার কোন ভাষা নেই। শচীন টেন্ডুলকার শেয়ার করার আগেও ওর ভিডিওটি শেয়ার করেছেন শাহরিয়ার নাফিস ভাই।’

এত ছোট বয়সেই ক্রিকেটে এমনভাবে বুঁদ হয়ে যাওয়াটাকে সাদিদের পরিবার কীভাবে দেখছে, জানা গেল সাদিদের মুখ থেকেই। তার ভাষ্য, ‘আম্মু তো বলেই। খেলার পাশাপাশি পড়াশোনাটাও ঠিকভাবে করতে বলে।’

তবে পরিবার থেকে শুরু করে সতীর্থ, আত্মীয়, পাড়া পড়শিদের সবাই সাকিবের প্রতিভা নিয়ে বেশ নিঃসন্দেহ। পরিচর্যা করলে যে সাদিদ বিশ্বমানের একজনই হয়ে উঠবে, এমন আশাবাদ সবার।

 

 

আপনি আরও পড়তে পারেন