বিয়েতে রাজি না হওয়ায় কলেজছাত্রীকে অপহরণ

বিয়েতে রাজি না হওয়ায় কলেজছাত্রীকে অপহরণ

২০১৯ সাল থেকেই রাস্তায় ইভটিজিং ও ভয়ভীতি দেখিয়ে ঝিনাইদহের মেধাবী ছাত্রীকে হয়রানি করতেন আবু জার গিফারী ওরফে গাফফার (৩৫)। হুমকি-ধামকিতেও পরিবার বিয়েতে না রাজি না হওয়ায় এসিডে ঝলসে দেয়ার হুমকি দেন। তাতেও বাগে আনতে না পেরে ওই ছাত্রীকে অপহরণ করে বিয়ে করার হুমকি দেয়। গত ৫ মার্চ ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার একটি রাস্তা থেকে ভুক্তভোগী কলেজ ছাত্রীকে মাইক্রোবাস করে অপহরণ করে গাফফার।

র‍্যাব জানায়, গ্রেপ্তার অপহরণকারী গাফফার একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে সর্বোচ্চ ডিগ্রি লাভ করার পর আইন পেশায় যুক্ত হন।

সোমবার (৭ মার্চ) দুপুরে কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান র‍্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, অপহৃত শিক্ষার্থী অত্যন্ত মেধাবী। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে টেলেন্টপুলে বৃত্তি পায়। পরবর্তীতে এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন-৫ পায় মেয়েটি। যখন তিনি যশোর বোর্ডের মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করে। ২০১৯ সাল থেকে গ্রেপ্তার গাফফার মেয়েটিকে ইভটিজিং ও ভয়ভীতি দেখিয়ে হয়রানি করত। মেয়েটি গাফফারের কারণে প্রাইভেট ও স্কুলে যেতে পারত না। একটা সময় মেয়েটির বাবা নিজে ও মেয়ের বান্ধবীদের সঙ্গে স্কুল-প্রাইভেটে যেত। গত ৫ মার্চ বিকেলে ভিকটিম মেয়ে ও তার এক সহপাঠী প্রাইভেট শেষে রিকশাযোগে বাসায় ফিরছিলেন। এ সময় গ্রেপ্তার গাফফার শৈলকুপার একটি রাস্তা থেকে ওই শিক্ষার্থীকে মাইক্রোবাসযোগে অপহরণ করে নিয়ে যায়।

100%

এর পরিপ্রেক্ষিতে ভিকটিমের বাবা বাদী হয়ে ঝিনাইদহ সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, এ ঘটনায় দেশব্যাপী ব্যাপক জনরোষের তৈরি হয়। মেধাবী ছাত্রীর পাশে দাঁড়ায় তার সহপাঠীরা। গতকাল রোববার ঝিনাইদহ শহরব্যাপী সারাদিন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ করে অবস্থান করে। ঘটনায় তার সহপাঠীদের আহাজারি ও বাবার আর্তনাদ দেশবাসীকে আবেগ আপ্লুত করে। ঘটনাটি ব্যাপকভাবে একটি সামাজিক আন্দোলনে রূপ নেয়।

এরই ধারাবাহিকতায় আজ সোমবার (৭ মার্চ) ভোরে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র‌্যাব-৪ ও র‌্যাব-৬ এর যৌথ অভিযানে মানিকগঞ্জ সদর এলাকা থেকে অপহরণ মামলার প্রধান আসামি ও মূল পরিকল্পনাকারী আবু জার গিফারী গাফফারসহ তার দুজন সহকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ সময় অপহরণ চক্রের সঙ্গে জড়িত গাফফারের দুজন সহকারী রাজবাড়ীর সাব্বির হোসেন (২২) ও হাফিজুর রহমানকে (৪৬) গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে এক কৌটা এসিড সদৃশ বস্তু, তিনটি দেশীয় ধারাল অস্ত্র ও মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার গাফফার অপহরণ সম্পর্কে জানায়, ভু্ক্তভোগী ছাত্রী অত্যন্ত মেধাবী। সম্প্রতি এসএসসিতে খুব ভালো ফলাফল করায় গাফফার ধারণা করে যে ভিকটিম তার নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। মূলত এই কারণেই সে ভিকটিমকে অপহরণের পরিকল্পনা করে। ঘটনার দুইদিন আগে ঝিনাইদহ কোর্ট সংলগ্ন এলাকায় গ্রেপ্তার গাফফার তার সহযোগীদের নিয়ে অপহরণের চূড়ান্ত পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক ভিকটিমকে প্রাইভেট পড়া থেকে বাসায় যাওয়ার পথে রাস্তা থেকে অপহরণ করে। অপহরণ পরবর্তী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দেওয়ার জন্য সে ভিকটিমকে প্রথমে রাজবাড়ীতে তার এক নিকট আত্মীয়ের বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে তার দুইজন সহযোগীকে পরিবর্তন করে নতুন দুজন সহযোগীসহ ভিকটিমকে ঢাকায় নিয়ে আসে। সেখানে আশ্রয় না পেয়ে মাইক্রোবাসযোগে অপহৃত ছাত্রীকে সিলেটে নিয়ে যায়।

সিলেটে অবস্থান পরিবার জেনে যাওয়ায় সেখান থেকে পুনরায় ফরিদপুরের উদ্দেশ্যে রওনা করে। এরমধ্যে গ্রেপ্তার গাফফার ভিকটিমকে এসিড ও দেশীয় ধারাল অস্ত্র দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে ভিকটিম কোনো প্রকার চিৎকার বা আওয়াজ না করে। এরপর মানিকগঞ্জ থেকে অপহৃতকে উদ্ধার ও গাফফারসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গাফফারের বিরুদ্ধে ঝিনাইদহের বিভিন্ন থানায় বিভিন্ন অপরাধে একাধিক মামলা রয়েছে।

মেয়েটিকে অপহরণ করে চারটি জেলায় ৩০ ঘণ্টা ঘোরানোর পরেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেন তাদেরকে ধরতে পারলো না এমন প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মঈন জানান, অপহরণের পর মামলা কিংবা কোনো অভিযোগ না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরবর্তীতে মামলার পর র‍্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে অভিযান চালিয়ে অপহৃত মেয়েটিকে উদ্ধার ও অপহরণ চক্রের মূলহোতাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হই।

আপনি আরও পড়তে পারেন