শিশুদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার সুযোগ করে দেওয়া শিশুদের অধিকার। অধিকার নিশ্চিত করতে প্রয়োজন তাদের সঠিক যত্ন ও পরির্চযা।
বিশ্বের অন্য দেশে শিশুদের বিকাশের জন্য নানা রকম পরিচর্যার ব্যবস্থা রয়েছে। আমাদের দেশেও তার কিছু পদক্ষেপ কাগজে কলমে থাকলেও অশিক্ষা ও দারিদ্র্য আমাদের অনেক পিছিয়ে রেখেছে। ফলে বেশিরভাগ শিশুরই উপযুক্ত পরিচর্যা হচ্ছে না।জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত অনেকগুলো পর্যায় অতিক্রম করতে হয় মানুষকে। যেমন, শিশুকাল (শৈশব, বাল্য, কৈশোর), যৌবন, প্রৌঢ়ত্ব ও বার্ধক্য।
শিশুর ০-৫ বছর বয়স পর্যন্ত শৈশবকাল, ৬-১০ বছর পর্যন্ত বাল্যকাল এবং ১১-১৯ বছর পর্যন্ত কৈশোরকাল।কৈশোরে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে একটি শিশু পূর্ণাঙ্গ নারী বা পুরুষের সব বৈশিষ্ট্য ধারণ করতে থাকে। তখনই প্রত্যেক শিশুর বয়ঃসন্ধিকাল শুরু হয়। যার জন্য কৈশোরকালকে বয়ঃসন্ধিকালও বলে।
বয়ঃসন্ধি হল সেই সময়টা যখন শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে ছেলেমেয়েরা ধীরে ধীরে পরিপূর্ণ পুরুষ ও নারীতে রূপান্তরিত হয়। বয়সন্ধির প্রথম পর্যায়ে শধু শারীরিক লক্ষণগুলিই পরিস্ফুট হয়। মেয়েদের বয়ঃসন্ধি সুরু হয় ছেলেদের আগে থেকে – সাধারণতঃ ৮ থেকে ১৩ বছরের মধ্যে।
বয়ঃসন্ধিকালে ছেলে বা মেয়ের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন পরিবর্তনও ঘটে থাকে। মেয়েদের ক্ষেত্রে উচ্চতা ও ওজন বৃদ্ধি পায়, শরীর ভারি হয়, শরীরের বিভিন্ন হাড় মোটা ও দৃঢ় হয়, ঋতুস্রাব শুরু হয়। তবে মেয়েদের ক্ষেত্রে কারো আগে বা পরে ঋতুস্রাব শুরু হতে পারে। অন্যদিকে ছেলেদের ক্ষেত্রে উচ্চতা ও ওজন বৃদ্ধিপায়, দাড়ি-গোঁফ গজায়। শরীরে দৃঢ়তা আসে, বুক ও কাঁধ চওড়া হয়, গলার স্বর ভেঙে যায়, স্বপ্নদোষ হয় ইত্যাদি। ছেলেদের ক্ষেত্রে সবার উচ্চতা একইভাবে নাও বৃদ্ধি পেতে পারে।
উল্লেখযোগ্য হলো, বয়ঃসন্ধিকালের পরিবর্তনগুলোর ক্ষেত্রে সময়ের হেরফের ঘটতেই পারে।
শারীরিক পরিবর্তনের পাশাপাশি বয়ঃসন্ধিকালে শিশুর মানসিক পরিবর্তনও ঘটে থাকে। যেমন, অজানা বিষয়ে জানার কৌতূহল বাড়ে। শরীরের পরির্বতনের ফলে চলাফেরায় দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ও লজ্জা কাজ করে। আপন মানুষের কাছ থেকে মনোযোগ, যত্ন ও ভালোবাসা পাওয়ার ইচ্ছা তীব্র হয়। আবেগ দ্বারা পরিচালিত হওয়ার প্রবণতা বাড়ে। ছেলে ও মেয়েদের পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ বাড়ে। মোটকথা মানসিক পরিপক্বতার পর্যায় শুরু হয়। যার সাথে শিশু সব সময় নিজেকে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করে। তারা প্রাপ্ত বয়স্কদের মতো আচরণ করে। বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে নিজেকে একজন আলাদা ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে। দুঃসাহসিক ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়ে।
অনেক সময় দেখা যায় বয়ঃসন্ধিকালের সাথে পরিচয় না থাকায় তাদের পরিবর্তনে নিজেরাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এজন্য অনেক শারীরিক ও মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়।তাই আগে থেকেই এ সময়ে তাদের করণীয় এবং বর্জনীয় কাজগুলো সম্পর্কে কাউন্সেলিং করলে তারা অনাকাঙ্ক্ষিত দুশ্চিন্তার শিকার হবে না।
আর পূর্বজ্ঞান থাকলে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন সহজ হয়। আর এসময় মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য তারা নিজেরাই সচেষ্ট থাকবে।প্রত্যেক ছেলেমেয়েরও উচিৎ বয়ঃসন্ধিকালের পরির্বতনে মা-বাবা, বড় ভাই-বোনের সাথে আলোচনা করে এ সম্পর্কে জেনে নেওয়া এবং শারীরিক ও মানসিক পরির্বতনগুলোর সাথে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করা।
বিভিন্ন অনুশাসন মেনে চলা, শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান দেখা ও শোনা। খেলাধুলা করলে বা ভালো বই পড়লেও এসময় মন প্রফুল্ল থাকে। একাকি মন খারাপ করে বসে থাকলে সমাধান পাওয়া যাবে না, আর মনে রাখতে হবে, এগুলো কোনো সমস্যাই নয়।
বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেমেয়েদের দৈহিক ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে শারীরিক যত্নের পাশাপাশি অভিভাবকের বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ জরুরি।