ভরা মৌসুমেও সাধারণের ব্যাগে উঠছে না ইলিশ

ভরা মৌসুমেও সাধারণের ব্যাগে উঠছে না ইলিশ

বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় (জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি) সাগরে ধরা পড়ে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। ইলিশ কিনতে পুরো বছর এ সময়ের অপেক্ষায় থাকেন সাধারণ ক্রেতারা। কারণ ইলিশ মৌসুমে অন্য সময়ের তুলনায় দাম কম থাকে। কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন। ভরা মৌসুমে সাগরে ধরা পড়ছে প্রচুর ইলিশ। তারপরও দামে কোনো হেরফের হচ্ছে না। তাই মাছের রাজার স্বাদ নিতে পারছেন না সাধারণ ক্রেতারা।

সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরের ব্যবধানে ইলিশের দাম বেশ চড়া রয়েছে। গত বছর এ সময়ের চেয়ে বর্তমানে প্রায় ১০ শতাংশ বেশি দামে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে।

dhakapost

রাজধানীর উত্তরাসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, আকারভেদে বিভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। এক কেজি ওজনের বেশি ইলিশ প্রতিকেজি ১১০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছোট আকৃতির ইলিশ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সর্বোচ্চ ১৪০০ টাকা কেজি দরে ইলিশ বিক্রি করতেও দেখা গেছে।

প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে ইলিশ বিক্রি করেন সুরুজ মিয়া। তিনি বলেন, অতীতের চেয়ে বর্তমানে ইলিশের দাম একটু বেশি। তবে আগামী কিছুদিনের মধ্যে দাম কমে যাবে। বড় ইলিশ (কেজির উপরে) ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় সহজেই কিনতে পারবেন ক্রেতারা।

বর্তমানে বাজারে ইলিশের এতো দাম হওয়ার কারণ কী এমন প্রশ্নের উত্তরে এ বিক্রেতা বলেন, বাজারে ইলিশের চাহিদা অনেক। সবাই বড় আকৃতির ইলিশ কিনতে চান। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কিছুটা কম। তাই দাম বেশি।

ইলিশের দরদাম করছিলেন রাজধানীর উত্তরা এলাকার বাসিন্দা আব্দুর সুবুর। সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, আমাদের মতো নিম্নবিত্তদের জন্যে ইলিশ মাছ নয়। একটা ইলিশ কিনলে অন্য বাজার করা হয় না। দাম কম হলে ইলিশের স্বাদ আমরাও নিতে পারতাম।

dhakapost

বাংলাদেশ ট্রেডিং করপোরেশনের (টিসিবি) দেওয়া তথ্যে মতে, বর্তমানে আকারভেদে প্রতিকেজি ইলিশ ৫০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে যা বিক্রি হয় ৫০০ থেকে ১৩০০ টাকায়। আর এক মাস আগে একই আকারের ইলিশ বিক্রি হয়েছিল ৮০০ থেকে ১৬০০ টাকায়। এ হিসেবে মাসের ব্যবধানে ইলিশের দাম কমেছে ২৯ দশমিক ১৭ শতাংশ।

তবে গত বছর এ সময়ে ইলিশের দাম অনেকটা কম ছিল। গত বছর একই সময়ে ৪৫০ থেকে ১১০০ টাকায় প্রতি কেজি ইলিশ কিনেছিলেন ক্রেতারা। এ হিসাবে বছরের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

মৎস্য অধিদফতর জানায়, মূলত ৬৫ দিনের মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সুফল প্রতিবছর পাচ্ছে বাংলাদেশ। চলতি বছর গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত টানা ৬৫ দিন ইলিশ আরোহণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। দীর্ঘ বিরতির পর গত ২৩ জুলাই রাতে নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়। এরপরেই জেলেরা ট্রলার, বোট নিয়ে সাগরে নেমে পড়েন ইলিশ ধরতে। যদিও শুরুতে তেমন ইলিশ জালে ধরা পড়েনি। তবে বর্তমানে ইলিশ বেশ ভালো ধরা পড়ছে।

মৎস্য অধিদফতরের প্রকল্প পরিচালক (ইলিশ) মো. জিয়া হায়দার চৌধুরী বলেন, চলতি বছর ইলিশ মাছের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ লাখ টন। গত বছর সাড়ে ৫ লাখ টন ইলিশ পাওয়া গেছে।

দামের বিষয়ে তিনি বলেন, দামটা অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে হয়। এছাড়া শ্রমিক খরচসহ সব কিছুর দামও বাড়ছে। তবে আরও কিছুদিন পরে দাম কমবে ইলিশের।

আপনি আরও পড়তে পারেন