ধরেন বাংলাদেশে দশজন বৌদ্ধ মারা গেলেন সন্ত্রাসী হামলায়। এতে পঞ্চাশজন মুসলমান প্যাগোডায় গিয়ে আনুষ্ঠানিক বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করে ফেললেন। আমাদের মেয়র আতিকুল ইসলাম মাথা কামিয়ে গেরুয়া বস্ত্র পরে ফেললেন। আপনি কী একজন মুসলিম হিসেবে এতে খুশি হবেন? হিন্দুদের উপর সহিংস হামলায় সমবেদনা প্রকাশ করতে শহীদ কন্যা শাওন মাহমুদ শুধু একটা নামাবলী গায়ে জড়িয়েছিলেন, কমেন্টে যে পরিমাণ কুৎসিত গালাগাল দেখেছি দুইদিন মাথা ঝিমঝিম করেছে। মুসলিম দূরে থাক, কোনো অসভ্য জঙলিও এতো খারাপ গালাগালি করতে পারে না। নিউজিল্যান্ডের তিনশো পঞ্চাশজন নওমুসলিম দেখে, (খবরটি গুজব, অতি উৎসাহী কোনো বেয়াকুফের কাজ, যেটি তার চেয়েও বড় বেয়াকুফের দল বিশ্বাস করে ভাইরাল করে দিয়েছে) তাদের প্রধানমন্ত্রীর মাথায় হিজাব দেখে ইসলামের জয় হয়েছে বলে আহ্লাদে গদগদ বচন দিচ্ছেন কেন? আপনার পিতৃধর্মটা ধর্ম, বাকি ধর্মের মানুষদের ধর্ম কী বানের জলে ভেসে এসেছে? তাদের সম্মান নেই? যখন-তখন সেটি পুরনো ফ্যাশনের বলে ছুড়ে ফেলা যায়?
পার্থক্যটা কী বুঝতে পারেন? এই যে ইহুদি নাসারা খ্রিস্টানদের দেশে মুসলমানদের এতো (!) হেনস্তা, তবু কী কোনো মুসলমান তাদের দেশ ছাড়ে? প্রবাসী মুসলমানদের তাদের সবচেয়ে বড় ভয় কী জানেন? কী জানি কখন তাদের সেই মুশরিক শাসনের দেশ থেকে বের করে দেয়। অতো ইসলামোফোবিয়ার দেশ ও তারা ছাড়তে চায় না। মুমিন মুসলিম কিলবিল করা নিজের দেশে ফিরতে চায় না। বোরকা জোব্বা পরে মিনিস্কার্ট হাফপ্যান্ট, গে রিলেশন বৈধতার দেশে নাগরিকত্ব নিশ্চিত করে তাদের দেয়া সকল সুযোগ সুবিধা নিতে চায়। সেই দেশের স্থায়ী বাসিন্দারা যদি বিরক্ত হয়ে হাঁক মারে তোমার দেশে ফিরে যাও, তাতে ভারি অভিমান করে। কেন আপনি বলেন না রোহিঙ্গারা কেন মিয়ানমার ফিরে না, জেনেভা ক্যাম্প শুদ্ধ কেন পাকিস্তান যায় না? আপনিও যে সেসব দেশে বহিরাগত, সেটা কী আমি বলার আগে জানতেন না? প্রবাসী হয়ে মাথা নিচু করে থাকেন, এমন কথা আমি বলতে চাই না, আমি নিজেও প্রবাসী । আপনি বৈধভাবে সেদেশে গিয়েছেন, যথেষ্ট কাঠখড় পুড়িয়ে আইনানুগভাবে সেদেশের নাগরিকত্ব পেয়েছেন। সেদেশের শ্রমবাজারে, অর্থনীতিতে আপনার যথেষ্ট পরিমাণ অবদান আছে। তাদের জনশক্তি কম বলে আপনার সাহায্য নিয়ে তারা তাদের দেশ চালাচ্ছে। আমি এটুকুই বলতে চাই আপনি আপনার চাওয়ার সীমানা বুঝুন। সীমালঙ্ঘন ইসলামে নিষেধ। যদি সত্যিই কেউ ইসলামের রুলস রেগুলেশন বোঝে, সারাজীবন তা ফলো করার মনোবল নিয়ে মুসলিম হয় তখনই কেবল খুশি হওয়াটা যৌক্তিক। নয়তো আইওয়াশে খুশি হয়ে নিজেদের বুদ্ধিমত্তা বা বিবেকের হাস্যকর অবস্থা প্রমাণ করবেন না। এমনিতেই মাথাগরম, নির্বোধ, ভেজাইল্যা জাতি হিসেবে আমরা পরিচিত।
ইহুদি জাতি তাদের ধর্ম না ত্যাগ করেও জ্ঞান-বিজ্ঞান, রাজনীতির শীর্ষে আছে। ইহুদিদের সারা পৃথিবীর অনেক লোকে দেখতে পারে না, তাতে তাদের কখনো ফোতফোত করে কাঁদতে দেখেছেন? আপনার পছন্দের মানুষ হতে তাদের বয়েই গেছে, বরং তারাই পৃথিবী নিয়ন্ত্রণ করছে। বিজনেস অ্যান্ড পলিটিক্স, এই দুটোর কন্ট্রোল হাতে থাকলে তলোয়ার-বন্দুক নিয়ে জিহাদ করা লাগে না, সব এমনিই বশে চলে আসে। আর আপনারা খালি সংখ্যা বৃদ্ধি করেই খুশি, অন্যদের উপর নিয়ন্ত্রণ দূরে থাক নিজেরাই মারামারি করে কুল পাচ্ছেন না, শিয়া, সুন্নি, কুর্দি, কাদিয়ানী, তবলিগ জামাতি, সালাফি আরও কতো কী । অবশ্য যে জাতি কুরআন-হাদিস বাদ দিয়ে প্যারাডক্সিকাল সাজিদ নিয়ে ব্যস্ত, তাদের তো বাকিরা এভাবেই ট্রিট করবে। আমার নিজের বুদ্ধিশুদ্ধি নিয়ে আমি বেশ লজ্জিত, যখন এর চেয়েও নির্বোধ কাউকে দেখি তখন আসলেই খুব হতাশ হই। ফেসবুক থেকে