রংপুর-কুড়িগ্রাম মহাসড়কে দুর্ভোগ চরমে, কাদায় একাকার

মাত্র পাঁচ কিলোমিটার সড়কের বেহাল দশায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন লাখো মানুষ। প্রতিদিন খানাখন্দে ভরা সড়ক দিয়েই যাতায়াত করছে রংপুর, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলার মানুষ। দুর্ঘটনার ঝুঁকির সাথে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ বাড়ায় দ্রুত সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ করার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার রংপুর-কুড়িগ্রাম মহাসড়কের ভেলুপাড়া থেকে রাজেন্দ্র বাজার পর্যন্ত এই সড়কটি। এ বছরের ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে কাজ শুরু হলেও এখনো স্বস্তি ফেরেনি ৫ দশমিক ১০ কিলোমিটার এই সড়কটির। বরং দীর্ঘদিনেও রাস্তার কাজ শেষ না হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই খানাখন্দে একাকার হয়ে গেছে সড়কটি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ভেলুপাড়া থেকে রাজেন্দ্র বাজার পর্যন্ত সড়কটি যেন পুরো কর্দমাক্ত। এই সড়কের পূর্বের কার্পেটিং তুলে ফেলা হয়েছে। নতুন করে কাজ শুরুর পর এই সড়ক এখন খানাখন্দে ভরা। গেল কয়েকদিনের ঝড়-বৃষ্টিতে সড়কের অবস্থা এখন বেহাল। পুরো সড়কটি যেন কাদায় কাদাময়। প্রখর রোদ উঠলে এই চিত্র পাল্টে যায়। তখন ধুলোবালুতে একাকার হয় সড়কের চারপাশ।

এই পরিস্থিতিতেই প্রতিদিন তিন জেলার মানুষ ও যানবাহন এই সড়ক ধরে চলাচল করছে। এতে দুর্ভোগের সাথে বেড়ে চলেছে দুর্ঘটনার আশঙ্কা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতিতে সড়কটি সংস্কারের কাজ খুবই ঢিমেতালে চলছে। সওজের কর্মকর্তাদের তদারকির অভাবে এখনো অর্ধেক কাজ সম্পন্ন হয়নি। প্রতিদিন তিন জেলার লাক্ষাধিক মানুষকে এই ৫ কিলোমিটার ভাঙাচোরা ও কর্দমাক্ত সড়ক দিয়ে হেঁটে ও বিভিন্ন পরিবহনে আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে। কখনো ভাঙা সড়কে পা পিছলে নয়তো গাড়ি উল্টে ছোট ছোট দুর্ঘটনাও ঘটছে। দ্রুত কাজ শেষ না হলে আসন্ন বর্ষায় সড়কটি মরণফাঁদে পরিণত হবে

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাউনিয়ার রংপুর-কুড়িগ্রাম মহাসড়কের ভেলুপাড়া থেকে রাজেন্দ্র বাজার পর্যন্ত ৫ দশমিক দশ কিলোমিটার সড়কের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১২ কোটি টাকা। চুক্তি অনুযায়ী নির্মাণ কাজ শেষ হবে আগামী মাসের ২৩ জুন। রংপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধানে সড়কটি কাজ করছে নওগাঁর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মো. আমিনুল হক (প্রা.) লিমিটেড।

ঈদুল ফিতরের আগে কাজের গতি থাকলেও এখন তা কমে গেছে। রোলার দিয়ে ভিটিবালু আর পাথর দিয়ে কোনো রকমে সড়কটি চলাচল উপযোগি করে রাখা হয়েছিল। কিন্তু কয়েকদিনের বৃষ্টিতে এই সড়কটির অবস্থা এখন নাস্তানাবাদ। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন হাজারো যানবাহন আর লাখো মানুষ। ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করছে যানবাহন ও পথচারীরা।

কাউনিয়ার উপজেলার শহীদবাগ ইউনিয়নের সাব্দি গ্রামে শামছুল হক বলেন, চোখে-মুখে ধুলোবালু নিয়েই কখনো বাইসাইকেল চালিয়ে কাউনিয়া বাজারের দিকে যাই। আবার কখনো হেঁটে হেঁটে যাই। বড় বড় বাস-ট্রাক পাশ দিয়ে দ্রুত চলে গেলে পরনের কাপড়ের অবস্থা ভালো থাকে না। ঝড়বৃষ্টিতে পুরো সড়কটিতে কাদায় ছড়াছড়ি হয়। দীর্ঘদিন ধরে আমরা এই ভোগান্তি পোহাচ্ছি।

এই সড়ক ধরে রংপুরের মাহিগঞ্জ সাতমাথা এলাকায় যাবার সময়ে মোটরসাইকেল আরোহী নজরুল ও রুবেল ইসলাম বলেন, ভারি মালামাল পরিবহন, জরুরি রোগী নিয়ে চলাচল করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। যেভাবে এই সড়কের কাজ হচ্ছে, তাতে কবে কাজ শেষ হবে বোঝা মুশকিল। তবে দ্রুত কাজ শেষ হলে দুর্ভোগ থেকে রেহাই মিলবে।

কুড়িগ্রামগামী আল-ইমরান পরিবহনের চালক মোখলেছুর রহমান বলেন, এই সড়ক দিয়ে গাড়ি নিয়ে চলাচল করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। যাত্রীদের কষ্ট হয়। এ রকম খানাখন্দে ভরা সড়কে গাড়ি চালাতে আমাদের মতো অল্প বয়সের চালকদের বেশি সমস্যা হয়। যত দ্রুত সম্ভব গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটির কাজ শেষ করা উচিত। এতে দুর্ঘটনা ঝুঁকি কমে আসবে। যাত্রীদের ভোগান্তি ও দুর্ভোগ কমবে।

ঢাকাগামী বেশ কয়েকটি বাসের চালক ও সহকারী বলেন, কখনো ধুলোবালি, কখনো ইটের গুঁড়া আবার কখনো কাদায় এই সড়ক ধরে চলাচল করতে হচ্ছে। পুরো সড়কটির তিন কিলোমিটারের বেশি অংশ খানাখন্দে ভরা। দুর্ভোগের কারণে যাত্রীদের কষ্ট হচ্ছে।

কুড়িগ্রামের কাঁঠালবাড়ি থেকে মোটরসাইকেল চালিয়ে রংপুরের দিকে যাচ্ছিলেন শফিকুল ইসলাম। তিনি রংপুর বেতারের সঙ্গীতশিল্পী ও গীতিকার। নিয়মিতই তাকে এই সড়ক ধরে চলাচল করতে হয়। ঢাকা পোস্টকে শফিকুল ইসলাম বলেন, তিস্তা থেকে রংপুর পর্যন্ত যেতে আগে সময় লাগত ৩০-৩৫ মিনিট। আর এখন সড়কের এমন বেহাল দশার কারণে এক ঘণ্টারও বেশি সময় লাগছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ চালু করেন আবার বন্ধ রেখে চলে যান। যেন দেখার কেউ নেই। কাউনিয়া উপজেলাসহ কয়েক জেলার মানুষের দুর্ভোগ লাঘব করতে দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন তারা।

এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মো. আমিনুল হক (প্রা.) লিমিটেডের কাউকে প্রকল্প এলাকায় পাওয়া যায়নি। একটি মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করে ঠিকাদারের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি। পরে তিস্তা স্ট্যাক ইয়ার্ডে সড়ক শাখা-১ (সড়ক উপ-বিভাগ-১) রংপুর সওজ এর উপ-সহকারী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে গিয়ে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি শাকিল আহম্মেদের সাথে কথা হয়।

জনদুর্ভোগের জন্য দুঃখপ্রকাশ করে ঢাকা পোস্টকে শাকিল আহম্মেদ বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসে সড়কের পাঁচ কিলোমিটার রাস্তার কাজ শুরু করা হয়। এখন পর্যন্ত বেজ টাইপ ওয়ান সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে ইতোমধ্যে বায়েন্ডারের দুই কিলোমিটার কাজ হয়েছে। এখন পর্যন্ত ওয়ার্কিং কোর্স, কার্পেটিং ও রোড মার্কিংয়ের কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। বায়েন্ডারের বাকি তিন কিলোমিটার কাজ শেষ হলে অন্যান্য কাজ শুরু করা হবে। তবে সড়কের ৭০ ভাগ কাজ হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

রংপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহাবুব আলম বলেন, কাজ চলমান রয়েছে। আগামী ২৩ জুনের মধ্যেই কাজ শেষ করার কথা রয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের। তবে গত দুই দিন যাবত বৃষ্টির কারণে রাস্তার এই বেহাল দশা হয়েছে। ঠিকাদারের সঙ্গে এ নিয়ে কথাও হয়েছে। বৈরী আবহাওয়া কেটে গেলে দ্রুত সময়ের মধ্যে বাকি কাজ শেষ করবেন তারা।

আপনি আরও পড়তে পারেন